কলকাতা: শিলিগুড়ির (Siliguri) হাতিমোড়ের মেয়েটা যে এত তাড়াতাড়ি এতটা সাফল্য পেয়ে যাবে, তা বোধহয় কেউ কোনওদিন ভাবেননি। খেলাধূলার জগতে উত্তরবঙ্গের এই শহরের নাম রয়েছে বরাবরই। বেরিয়ে এসেছে এখান থেকে একাধিক বড় বড় নাম। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মান্তু ঘোষ (Mantu Ghosh), সৌম্যজিৎ ঘোষ, ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha) মত ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। যাঁরা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ও সাফল্য অর্জন করেছেন। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন রিচা ঘোষ (Richa Ghosh)। বয়স মাত্র উনিশ। কিন্তু এই বয়সেই দেশের জার্সিতে যুব বিশ্বকাপ জিতেছেন। সিনিয়র মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২ দিন আগেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২০ বলে ৩১ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছেন। এবার মহিলাদের আইপিএলের নিলামেও বড় দাম পেয়েছেন। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দলে নিয়েছে এই উইকেট কিপার ব্যাটারকে। মেয়ের সাফল্যে স্বভাবতই বেজায় খুশি রিচার বাবা মানবেন্দ্র ঘোষ। শিলিগুড়ি থেকে এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি -


মেয়ের আইপিএলে দল পাওয়ার খবরটা নিশ্চয় পেয়েছেন, কী বলবেন?


মানবেন্দ্র: দেখুন রিচা গত কয়েক মাসে নিজের সেরা ছন্দে রয়েছে। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে। গতকাল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভাল ইনিংস খেলেছেন। টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে কীভাবে রান করতে লোয়ার অর্ডারে নেমে, তার জন্য মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নিয়েছিল বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে। তাই আইপিএলের নিলামে যে দল পাবে, তা নিয়ে কিছুটা আশাবাদীই ছিলাম।


নিলামের আগে, পরে কোনও কথা হয়েছে আপনার সঙ্গে?


মানবেন্দ্র: সেভাবে ওর সঙ্গে আলাদা করে ক্রিকেট নিয়ে আমার কথা হয় না। মাঠে নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে ও ভালই বোঝে। তাছাড়া আইপিএলে আরসিবিতে খেলতে পারবে এটা আমাদেরও খুব ভাল লাগছে। মহিলা ক্রিকেটের লিভিং লেজেন্ড বলা যেতে পারে স্মৃতি মন্ধানা, এলিসা পেরিদের। ওঁদের সঙ্গেই খেলবে রিচা। এর থেকে ভাল আর কি হতে পারে। অনেক কিছু শিখতে পারবে। 


বিশ্বকাপে পাকিস্তান ম্যাচের চাপ ছিল?


মানবেন্দ্র: আমি বরাবরই রিচাকে বলে এসেছি যে উল্টোদিকে কোন দল থাকবে তা নিয়ে কখনও ভাবতে না। নিজের কাজটা সঠিকভাবে করতে। পাকিস্তান ম্যাচ বলে আলাদা কিছু মনের মধ্যে আনলেই চাপ বাড়বে। যা ওর মনোসংযোগ নষ্ট করতে পারে। তাছাড়া এর আগেও রিচা অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মত বড় বড় দলের বিরুদ্ধে ভাল খেলেছে। তাই পাক ম্যাচ নিয়ে ওকে নতুন করে কিছু বলতে হয়নি। তবে ২০ বলে ৩১ রানের যে ইনিংস খেলেছে ও, তেমনই ব্যাটিং করা পছন্দ করে রিচা। দিনের পর দিন লোয়ার অর্ডারে নেমে ফিনিশারের ভূমিকা নেওয়ার জন্য যেভাবে খেলা উচিত সেভাবে প্রস্তুতি সেরেছে। 


মেয়ের এই সাফল্যের জন্য নেপথ্য কারিগর কাকে বাছবেন?


মানবেন্দ্র: দেখুন শিলিগুড়িতে সেই অর্থে পরিকাঠামো এখনও উন্নত নয়। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলার জন্য বাইরেই যেতে হয় সবাইকে। রিচা কলকাতায় যাওয়ার পর সিএবির তত্ত্বাবধানে সঠিক পরিকাঠামোয় সঠিক প্রস্তুতি নিতে পেরেছে। শিবশঙ্কর পাল, চরনজিৎ স্যার এঁদের অবদান তো কখনওই ভোলার নয়। কলকাতায় থাকলে ওঁদের অধীনেই বেশিরভাগ সময়টা অনুশীলন সারে রিচা।


টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করেছে মে, কোনও বার্তা?


মানবেন্দ্র: সবে টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে। ও বলেই ছিল যে সিনিয়র দলের জার্সিতেও বিশ্বকাপ জেতা রিচার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নপূরণ করতে হলে এখনও অনেকটা পথ এগোতে হবে। মাটিতে যেন পা থাকে, সেটাই বলব।