ব্রিসবেন: ভারতের বিরুদ্ধে তৃতীয় টেস্টের (IND vs AUS 3rd Test) দ্বিতীয় দিনশেষে চারশো পার করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। শেষ হল দ্বিতীয় দিনের খেলা। গোটা সাত উইকেটের বিনিময়ে ৩৭৭ রান তুলল অজ়িরা। দিনশেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ৪০৫/৭। ক্যারি ৪৫ ও মিচেল স্টার্ক সাত রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়লেন। অস্ট্রেলিয়ার দিনে ভারতীয় দলের সমর্থকদের জন্য একমাত্র আনন্দের কারণ যশপ্রীত বুমরা (Jasprit Bumrah)। তারকা ফাস্ট বোলার পাঁচ পাঁচটি উইকেট নিলেন। তবে ট্র্যাভিস হেড (Travis Head) ও স্টিভ স্মিথ (Steve Smith) যে ম্যাচের রাশ অজ়িদের হাতেই তুলে দিয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।


২৩৪ রানে তিন উইকেট থেকে দিনের শেষ সেশন শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। সেশন বদলালেও স্মিথ ও হেডের ব্যাটিংয়ের দাপট এতটুকুও কমেনি। নীতীশ রেড্ডি ও রবীন্দ্র জাডেজার বিরুদ্ধে রীতিমতো ব্যাট হাতে শাসন করেন দুই তারকা। দেখতে দেখতেই মাত্র ২৫২ বলে নিজেরে দু'শো রানের পার্টনাশিপও পূরণ করে ফেলেন স্মিথ ও হেড। ১৮৫ বলে নিজের টেস্ট কেরিয়ারের ৩৩তম সেঞ্চুরিটি পূরণ করেন স্মিথ। স্টিভ ওয়ার ৩২ সেঞ্চুরির রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেন তিনি। ২৫ ইনিংস পরে এই সেঞ্চুর নিঃসন্দেহে তাঁকে সন্তুষ্ট করবে। 


তবে ঠিক যখন মনে হচ্ছিল ভারতের হাত থেকে ম্যাচে নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখনই আবার বল হাতে নিয়ে জ্বলে উঠেন বুমরা। নিজের পরপর দুই ওভারে স্মিথকে ১০১, হেডকে ১৫২ ও মিচেল মার্শকে পাঁচ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। ৩২৭ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। এই পরিস্থিতি ভারত হয়তো ৩৫০ রানে অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসকে গুটিয়ে ফেলার আশা করছিল। তবে তা হয়নি। প্যাট কামিন্স ও অ্যালেক্স ক্যারি ৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। কামিন্সকে ২০ রানে আউট করলেও, ক্যারি ও স্টার্ক সুনিশ্চিত করেন যাতে দিনের খেলাশেষের আগে আর কোনও উইকেট না পড়ে।


অবশ্য দিনের শুরুটা কিন্তু ভারত ভালই করেছিল। বুমরা এবং আকাশদীপের বিধ্বংসী স্পেলের ঝাঁঝ সামলাতে নাজেহাল হচ্ছিলেন অজ়ি ওপেনাররা। একাধিকবার অস্ট্রেলিয়ানদের ব্যাটের কিণারা মিস করছিল বল। তবে অবশেষে সাফল্য এনে দিলেন বুমরা। তারকা ফাস্ট বোলারের বলে খোঁচা দিয়েই ২১ রানে সাজঘরে ফেরেন খাওয়াজা। নিজের পরের ওভারে নয় রানে ম্যাকস্যুইনেকেও ফেরান বুমরাই। 


পরপর দুই উইকেট হারানোর পর অজ়ি ব্যাটিংয়ের সম্ভবত দুই সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ মার্নাস লাবুশেন ও  স্টিভ স্মিথ অজ়ি ইনিংস মেরামতির কাজ শুরু করেন। দুইজনে মজবুত রক্ষণ ও পরিপক্ক ব্যাটিংয়ে ভারতীয় দলকে ব্যাকফুটে ঠেলা শুরু করেন। তাঁদের পার্টনারশিপ বাড়লে ভারতীয় ফিল্ডারদের বিরক্তিও বাড়ে। উইকেট পড়ছে না দেখে এক অভিনব পন্থ নেন মহম্মদ সিরাজ। তিনি গিয়ে লাবুশেনের দিকের উইকেটের বেলগুলির স্থান বদল করেন। লাবুশেন অবশ্য দ্রুতই তা বদলে আগে যে বেল যেখানে ছিল সেখানে করে দেন।


তবে তা তাঁকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ঠিক পরের ওভারেই নীতীশ রেড্ডির বলে ১২ রানে সাজঘরে ফেরেন লাবুশেন। ৭৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর হেড ও স্মিথ ইনিংসের হাল ধরেন। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনটা সম্পূর্ণভাবেই অস্ট্রেলিয়ার তরফে যায়। ব্রিসবেনে নিজের শেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসেই প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন হেড। এবার তাঁর ব্যাট থেকে এল সেঞ্চুরি। এর সুবাদেই তিনি ইতিহাসও গড়ে ফেললেন বটে। প্রথম ব্যাটার হিসাব একই ক্যালেন্ডার বছরে কোনও মাঠে কিং পেয়ার ও সেঞ্চুরি হাঁকানোর রেকর্ড গড়লেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা ব্যাটার। একদিকে হেড যেখানে নিজের বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন, সেখানে অপরদিকে স্টিভ স্মিথ একেবারে নিজের সেরা ফর্মে দেখা যায়।


ঠিক বছর পাঁচেক আগে অ্যাসেজ় সিরিজ়ে যেমন বাড়তি ব্যাক অ্যান্ড অ্যাক্রস মুভমেন্টে স্মিথ নজর কেড়েছিলেন, এই ম্যাচেও অনেকেরই তাঁর স্টান্সে সেই জিনিসই চোখে পড়ে। ওই সিরিজ়ে প্রচুর রান এসেছিল স্মিথের ব্যাট থেকে, এই বদল ঘটিয়ে এখনও অবধি এই ইনিংসেও কিন্তু তারকা অজ়ি ব্যাটারকে অনবদ্য দেখাচ্ছে। স্মিথের পরিপক্ক ইনিংস ও হেডের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে যুগলবন্দিতে একেবারে নিস্তেজ দেখাল ভারতীয় বোলিংকে। কেউই তেমন প্রভাবই ফেলতে পারলেন না গোটা সেশনে। যশপ্রীত বুমরার বল বাউন্ডারির দিকে ঠেলে দিয়ে তিন রান দৌড়ে হেড নিজের নবম সেঞ্চুরি পূরণ করেন। ভারতের বিরুদ্ধে এটি তাঁর তৃতীয় শতরান। ঘটনাক্রমে তাঁর তিনটি শেষ ছয় ইনিংসের মধ্যে। 







আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।







আরও পড়ুন: ক্যাচ নিয়ে ধোনিদের তালিকায় সামিল হলেন ঋষভ পন্থ, ব্যাটে নামার আগেই সচিনের কৃতিত্বে ভাগ বিরাটের