কলকাতা: আম্পায়ার। ক্রিকেট খেলার ভাগ্য নির্ভর করে থাকে যাঁর ওপর। একটি সঠিক সিদ্ধান্তে ম্যাচের খোলনলচে বদলে দিতে পারেন। আবার আম্পায়ারেরই একটি ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হতে পারে কোনও দলকে। এমনকী, বদলে যেতে পারে ম্যাচের ভবিতব্য। আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয়েছে বা নিশ্চিত সেঞ্চুরির সুযোগ নষ্ট হয়েছে, এমন অভিযোগ শোনা যায় প্রায়শই।


আর সিএবি (CAB) পরিচালিত স্থানীয় ক্রিকেটে সেই আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন উঠছে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, আম্পায়ার নিয়োগ করে যে কমিটি, সেই আম্পায়ার্স কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়েও।


স্থানীয় ক্রিকেটে আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ও নিরপেক্ষতার অভাব নিয়ে আগেও জোরাল বিতর্ক হয়েছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) সিএবি-র মসনদে থাকাকালীন আম্পায়ারিংয়ের মান উন্নত করতে নিয়েছিলেন অভিনব সিদ্ধান্ত। আম্পায়ারদের টুপিতে ক্যামেরা বসিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করার মতো দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা।


কিন্তু সেসব এখন অতীত। কয়েক মরশুম পরেই সেই অভিনব পন্থা আস্তাকুঁড়ে জায়গা করে নিয়েছে। ফের মাথাচাড়া দিয়েছে পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং নিয়ে ময়দানের বিভিন্ন ক্লাবের ক্ষোভ বিক্ষোভ।


সম্প্রতি সিএবি-র অ্যাপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে নতুন আম্পায়ার্স কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তিন সদস্যের আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ নিয়ে পরপর দুবার যিনি এই দায়িত্ব পেলেন। যিনি আবার বকলমে কুমারটুলি ক্লাবেরও সর্বময় কর্তা। আম্পায়ার্স কমিটিতে তাঁর সঙ্গে রাখা হয়েছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুপ্রিয় সরকারকে।


এঁদের মধ্যে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন নিয়ে জোরাল প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, তাঁর নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ করা হয়েছে। স্মরণাতীত কালে কোনও ম্যাচে তিনি আম্পায়ারিং করেছেন, এমন খবর নেই। এমনকী, সিএবি-র কোনও গ্রেডেও ছিলেন না কোনওকালে। অভিযোগ, প্রোবেশনাল পিরিয়ডে বাধ্যতামূলকভাবে যে নির্দিষ্ট সংখ্যক দিন ম্যাচ পরিচালনা করাতেই হয় কোনও আম্পায়ারকে, সেটাও সম্পূর্ণ করেননি সুদীপ। এমন ব্যক্তি কী করে আম্পায়ার্স কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেন, তা দেখে হতবাক ময়দানের অনেক ক্রীড়াকর্তাই।


বলা হচ্ছে, এখন আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বের নির্দেশ দিয়েই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। বলেই দেওয়া হয় যে, এই দলকে হারাতে হবে বা এই দলের বিরুদ্ধে কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না। এমনকী, এরকম নির্দেশের নেপথ্যে আর্থিক লেনদেন বা উপহার বিনিময় চলে বলেও বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন ময়দানের সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ। অনেক ক্রিকেটারই এই অন্ধকার নিয়মের বলি হচ্ছেন। প্রাপ্য সেঞ্চুরি মাঠে ফেলে আসতে হচ্ছে। হয়তো অন্যায় সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে পাঁচ উইকেট নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে প্রতিশ্রুতিমান বোলারের। আম্পায়ারিংয়ের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে ময়দানের হতাশা ক্রমশ বাড়ছে।


যে ক্ষোভের বারুদে অগ্নিসংযোগ ঘটিয়েছে মঙ্গলবারের একটি ম্যাচ। রেঞ্জার্স মাঠে প্রথম ডিভিশনের জে সি মুখোপাধ্যায় টি-২০ টুর্নামেন্টে কুমারটুলি বনাম টালিগঞ্জের ম্যাচ চলছিল। আগে ব্যাটিং করে ২০ ওভারে কুমারটুলি তুলেছিল ১৭০/৪। টালিগঞ্জ ১৬৮ রানে আটকে যায়। মাত্র ২ রানে ম্যাচ হারে।


তবে অভিযোগ, টালিগঞ্জ ইনিংসের ১৯তম ওভারে দুটি কম বল খেলানো হয়। চার বলেই ওভারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আম্পায়ার স্বস্তিক দত্তচৌধুরী। পরে জানা যায়, মাঠের দুই আম্পায়ার ও স্কোরারদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতেই এমন ঘটনা।


যা খবর, ম্যাচটি সিএবি ম্যাচটির রিপ্লে দিতে পারে। ঘটনা হচ্ছে, এই ম্যাচের সঙ্গেও জড়িয়ে প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্লাব কুমারটুলি।


অভিযোগ, প্রসেনজিৎ গত মরশুমে আম্পায়ারদের এমন নির্দেশও দেন যে, তিনি না গেলে যেন রেঞ্জার্স মাঠে আনন্দবাজার পত্রিকা বনাম কুমারটুলি ম্যাচ শুরু করা না হয়। সেই ম্যাচের ফলাফলের ওপর অন্য ম্যাচের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছিল বলে খবর। ভেজা মাঠের জন্য সেই ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ময়দানে কান পাতলেই শোনা যায় যে, সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় নিজে মাঠে গিয়ে আবিষ্কার করেন, ম্যাচ চাইলে শুরু করাও যেত। পরে তিনি আম্পায়ারদের সিএবি-তে ডেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলেই খবর।


বলা হচ্ছে, আম্পায়ার্স কমিটিতে ঢোকার দাবিদার, এরকম সাত-আটজন যোগ্য প্রার্থীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন অভিজিৎ মিত্র। এক সময় বাংলার জুনিয়র নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। সুনামের সঙ্গে প্রথম ডিভিশনে ম্যাচ খেলিয়েছেন। প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার শঙ্কর প্রসাদ ভট্টাচার্যও আম্পায়ার্স কমিটিতে ঢোকার দাবিদার ছিলেন। তিনি পর্যবেক্ষক হলেও তাঁর সঙ্গে সিএবি কথা বলে আম্পায়ার্স কমিটিতে রাখতে পারত বলে দাবি করছে কোনও কোনও মহল। এছাড়া আম্পায়ার্স কমিটিতে ঢোকার দাবিদার ছিলেন গ্রেড ওয়ান আম্পায়ার পুলক চট্টোপাধ্যায়, সমর দে, নিতাই চক্রবর্তী, নীলাদ্রি চক্রবর্তী, হিমাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, কণাদ দাশগুপ্তর মতো নাম।


এলভিস জ্যাকসন এক বছর আগে আম্পায়ার্স কমিটিতে ছিলেন। গত মরশুমে দেবব্রত মিত্র ছিলেন কমিটিতে। স্বপন বসুও এক বছর থেকেই সরে গিয়েছেন। বলা হচ্ছে, প্রসেনজিতের বিভিন্ন পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন বলেই সরে যেতে হয়েছে তাঁদের।


এই পরিস্থিতিতে দাবি উঠছে, নির্বাচকদের ক্ষেত্রে যেমন রঞ্জি ম্যাচ খেলার মাপকাঠি ঠিক করা হয়েছে, আম্পায়ার্স কমিটি তৈরির সময়ও সেরকম যোগ্যতামান রাখা হোক। যাঁরা সুনামের সঙ্গে আম্পায়ারিং করিয়েছেন, তাঁদেরই সংশ্লিষ্ট কমিটিতে রাখা হোক। তবে যদি স্বচ্ছতা ফেরে। ক্রিকেটের মান বাড়ে।


সিএবি শুনছে কি?


আরও পড়ুন: শোয়েবের বলে ভেঙেছিল পাঁজর, তা নিয়েই ব্যাটিং! সচিনের অবিশ্বাস্য গল্প শোনালেন সৌরভ




আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।