ত্রিনিদাদ: ওই দেশটা যুদ্ধ, কামানের গোলাগুলি, অস্ত্রের কারবারের বাইরে বেরিয়ে ক্রিকেট নিয়েও মেতে উঠেছিল। এই তো দুদিন আগেই বাংলাদেশকে হারানোর পর গুলবদিন, গুরবাজদের উল্লাস, চিৎকারের রেস গিয়ে পৌঁছেছিল কাবুলেও। রাস্তায় নেমে এসেছিলেন হাজার হাজার মানুষ। ক্রিকেট নতুন করে বাঁচার ইচ্ছে জাগিয়েছে প্রত্যেকের মনে। স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল গোটা দেশ। ইতিহাস গড়ার হাতছানি ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ আর দক্ষিণ আফ্রিকা তো এক নয়। শক্তিশালী প্রোটিয়া দলের সামনে অনভিজ্ঞ ও ধারে ভারে দুর্বল আফগানদের করারও কিছু ছিল না। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে আত্মসমর্পন করলেন ইব্রাহিম, গুলবদিনরা। তার পর মিরক্যাল ছাড়া এই ম্য়াচের অন্য কোনও ফল হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল না। ম্যাচের পর চোখে জল রশিদ খানের। তাঁর হাত ধরেই তো এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চমক দেখিয়ে এসেছিল আফগান শিবির একের পর এক ম্য়াচে। ম্য়াচের পর রশিদ বলছেন,  ''আমাদের জন্য একটা কঠিন সময়, কঠিন রান ছিল। আমরা আরও ভাল কিছু করতেই পারতাম। কিন্তু এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মজা। মানসিকভাবে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হয় এই ফর্ম্য়াটে। ওঁদের বোলিং অসাধারণ হয়েছে। এককথায় দুর্দান্ত। আমরা একেবারেই ভাল ব্যাটিং করতে পারিনি।'' গোটা টুর্নামেন্ট দাপট দেখিয়েছে আফগানিস্তানের বোলিং লাইন আপ। তারকা লেগস্পিনার বলছেন, ''বোলারদের প্রশংসা করতেই হবে আমাকে। দলের প্রতিটা বোলার দুর্দান্ত বোলিং করেছে গোটা টুর্নামেন্টে। মুজিব চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর দায়িত্ব বেড়েছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য যে মুজিব চোট পেয়ে বেরিয়ে গেল। কিন্তু আমাদের পেসাররা ও স্পিন ডিপার্টমেন্ট, বিশেষ করে নবি দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। নতুন বলে ও দারুণ বল করেছে। এটা আমাদের স্পিনারদের কাজটাও সহজ করে দিয়েছিল। আমরা গোটা টুর্নামেন্টটা বেশ উপভোগ করলাম। সেমিফাইনাল খেলতে পেরেছি আমরা, আর একটা বিশ্বমানের দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে হার স্বীকার করে নিচ্ছি।''


গত কয়েক বছরে আমূল পরিবর্তন হয়েছে আফগান দলের। ধাপে ধাপে উন্নতি করেছে তারা। এই প্রথম আইসিসি ইভেন্টের সেমিও খেলে ফেললেন নবিরা। তবে রশিদ আর পেছনে ফিরে তাকাতে রাজি নন। তিনি বলছেন, ''এটা সবে শুরু, আমাদের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে আমরা যে কোনও দলকে হারানোর ক্ষমতা রাখি। শুধু এখন সঠিকভাবে এগোতে হবে আমাদের। এই টুর্নামেন্ট থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে আমরা দেশে ফিরব। আমরা জানি আমাদের মধ্যে স্কিল আছে, ক্ষমতা আছে। বড় মঞ্চে চাপের মুখে পারফর্ম করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকে। বিশেষ করে মিডল অর্ডারকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। ইনিংসের শেষ পর্যন্ত কীভাবে খেলা টেনে নেওয়া যায়, তা ভাবতে হবে। আমরা ফিরে আসব আরও শক্তিশালী দল হয়ে, বিশেষ করে ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে।''