নাগপুর:  ১০ নভেম্বর দিনটি ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয়। ১৯৪৮ সালে এই দিনেই ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই দিনেই ১৯৯১ সালে ইডেন গার্ডেন্সে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তার ঠিক ৯ বছর পর, ২০০০ সালে ঢাকায় টেস্টের আঙিনায় পা রেখেছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ? ভারত।


সেই ১০ নভেম্বরই নতুন ইতিহাস রচিত হল নাগপুরের জামথায়, বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার স্টেডিয়ামে। ইতিহাস লিখলেন যিনি, সেই দীপক চাহার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ৬টি টি-টোয়েন্টি আর ১টি মাত্র ওয়ান ডে। রবিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সিরিজের নির্ণায়ক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বল হাতে বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন রাজস্থানের তরুণ পেসার। মাত্র ৭ রানের বিনিময়ে তুলে নিলেন হ্যাটট্রিক-সহ ৬ উইকেট। কেরিয়ারের সেরা বোলিং তো বটেই, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেও সেরা। দীপক ভেঙে দিলেন অজন্তা মেন্ডিসের ৮ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়লেন দীপক। রবিবার তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড়াল ৩.২-০-৭-৬!

মূলত দীপকের দাপটে বাংলাদেশকে ৩০ রানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ পকেটে ঢোকাল ভারত। রবিবার টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ভারতের স্কোর দাঁড়ায় ১৭৪/৫। ব্যাট হাতে দলের ভরসা হয়ে দাঁড়ালেন কে এল রাহুল ও শ্রেয়স আইয়ার। দুরন্ত ছন্দে থাকা অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মাত্র ২ রান করে ফেরেন। অপর ওপেনার শিখর ধবনও ক্রিজে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। ১৬ বলে ১৯ রান করে ফেরেন দিল্লির বাঁহাতি তারকা। এরপরই ইনিংসের হাল ধরেন রাহুল ও শ্রেয়স।

বা বলা ভাল, বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করা শুরু করেন ব্যাট হাতে। তৃতীয় উইকেটে মাত্র ৪১ বলে ৫৯ রান যোগ করেন দুজনে মিলে। রাহুল করেন ৩৫ বলে ৫২ রান। তাঁর ইনিংসে ছিল সাতটি বাউন্ডারি। তবে শ্রেয়স ছিলেন আরও মারমুখী মেজাজে। মাত্র ৩৩ বলে ৬২ রান করেন মুম্বইয়ের ক্রিকেটার। তাঁর ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও ৫টি ছক্কা। যার মধ্যে বাংলাদেশের অফস্পিনার আফিফ হোসেনের এক ওভারে পরপর তিন বলে ওভার বাউন্ডারি মারেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটাই শ্রেয়সের প্রথম অর্ধশতরান।

তবে ব্যাট হাতে ফের ব্যর্থ ঋষভ পন্থ। ৯ বলে মাত্র ৬ রান করে ফেরেন তিনি। শেষ দিকে চালিয়ে খেলে মণীশ পাণ্ডে ১৩ বলে ২২ রান করে অপরাজিত ছিলেন। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সফিউল ইসলাম ও সৌম্য সরকার ২টি করে উইকেট নেন।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে দেন দীপক। যদিও মহম্মদ নঈমের লড়াকু ব্যাটিংয়ে (৪৮ বলে ৮১ রান) ভর করে বাংলাদেশ লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছিল। একটা সময় যখন ভারত ম্যাচ থেকে ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে, সেই সময়ই ফের ধাক্কা দেন দীপক। তুলে নেন মহম্মদ মিঠুনকে। বল হাতে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন শিবম দুবে। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট। যার মধ্যে রয়েছে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নঈম ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের উইকেট।

শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানে অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় ভারত। ম্যাচের সেরা হয়েছেন দীপক চাহার।