কলকাতা: চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা। বিশ্ব ফুটবল তথা ক্রীড়াজগতে নেমে এসেছে শোকের গভীর ছায়া। সবুজ জমিতে পায়ের ছন্দে ফুটবলে শিল্পের নকশা কাটত তাঁর বাঁ পা। সামনে লক্ষ্য থাকত বিপক্ষের গোলপোস্ট। গো-ও-ল, কথাটার সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফুটবল শিল্পীর নাম-সে সেই 'হ্যান্ডস অফ গড'-ই হোক বা পায়ের কারিকুরিতে পাঁচজনকে হেলায় কাটিয়ে জালে বল পৌঁছে দেওয়া।আসলে তাঁর জন্ম থেকেই জড়িয়ে রয়েছে গোল শব্দটা।
১৯৬০-এর ৩০ অক্টোবর দিয়েগো মারাদোনা ও ডালমা সালভাদোরা টোটা ফ্রাঙ্কোর পঞ্চম সন্তানের জন্ম হয়েছিল। দম্পতির প্রথম পুত্র সন্তান। দূরের গ্রাম থেকে আর্জেন্টিনার ব্যস্ত শহর বুয়েনস এয়ার্সে চলে এসেছিলেন। শহরতলির ভিল্লা ফিওরিটোতে সংসার পেতেছিলেন তাঁরা। আদতে এই এলাকা ছিল বস্তি।
আর এমন কাহিনীও প্রচলিত রয়েছে যে, যেদিন জুনিয়র মারাদোনার জন্ম, সেইদিন নিকটবর্তী লানুসের পলিক্লিনিকো ইভিটা হাসপাতালের চিকিৎসকরা ১১ টি সন্তানের জন্মের সাক্ষী ছিলেন। সবাইছিল কন্যাসন্তান। শেষপর্যন্ত সেইদিনের একটিমাত্র ছেলের জন্ম হওয়ায় তাঁরা তাকে শুভেচ্ছা জানাতে 'গোল' উচ্চারণ করেছিলেন।
মাসদুয়েক পর সদ্যোজাতকে পোম্পে চার্চে ব্যাপ্টিজমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেইদিন বিশ্ব ফুটবলের আগামীদিনের কিংবদন্তীর প্রথম ছবি তোলা হয়-মোটাসোটা, গায়ে চেক জামা আর মাথাভর্তি চুল।
তাঁর ছোটবেলার বাড়ি নিয়ে মারাদোনা স্মৃতিচারণায় একদিন বলেছিলেন, বৃষ্টি হলে বাইরে নয়, ঘরেই বেশি জল পড়ত। তিনটি ছোট্ট ঘর। জলের সরবরাহ ছিল না। দিয়েগো সিনিয়র, টোটা, দিয়েগো জুনিয়র, তাঁর চার দিদি ও আরও তিন ছোট ভাইবোন ওই বাড়িতেই ঠাসাঠাসি করে থাকতেন।
ভিল্লা ফ্লোরিটোর নোংরা, ভাঙাচোরা রাস্তাই প্রথম সাক্ষী হয়েছে তাঁর ফুটবল সাধনার। বর্ষার সময় ওই রাস্তা হয়ে উঠত কাদার নদী। আর বর্ষায় টিনের ফুটো চাল দিয়ে জল পড়ে ভাসিয়ে দিত বাড়ি। জায়গায় জায়গায় বালতি সহ নানা পাত্র বসিয়ে দিতে হত জল পড়ার জায়গাগুলিতে।
তিন বছর বয়সে প্রথমবার ফুটবল পেয়েছিলেন মারাদোনা। তা তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন তাঁর কাকা। আর তার পর থেকেই এই জুটি চিরসঙ্গী হয়ে ওঠে। ধুলোয় ভরা রাস্তা, ফিওরিটোর পতিত জমিতে নিজের ফুটবল নৈপুন্যে শান দিতে শুরু করেছিলেন মারাদোনা।। পাড়া প্রতিবেশীর বাচ্চাদের সঙ্গে খেলায় মেতে থাকতেন ছোট্ট মারাদোনা।
তখন থেকে ফুটবলই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। একবার মারাদোনা ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, এই ফুটবলের নেশাতেই প্রাণ যেতে বসেছিল তাঁর। আত্মজীবনীতে তিনি জানিয়েছেন, তখন আমার বয়স বছর দশেক হবে। একদিন বল তাড়া করতে গিয়ে একটা সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে গিয়েছিলাম। গলা পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। তাও ওঠার চেষ্টা করিনি। কারণ, আমি বলটা খুঁজছিলাম। আর তা করতে গিয়ে আরও ডুবে যাচ্ছিলাম। শেষপর্যন্ত কাকার নজরে পড়ায় তিনি আমাকে টেনে তুলেছিলেন।
আর ১০ বছর বয়সেই বল পায়ে তাঁর কৃতিত্বের কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল। বাবার পরিচালিত নিকটবর্তী ক্লাব এস্ট্রেলা রোজা দিয়ে যাত্রা শুরু। ১৯৬৯-এ ক্লাবের মারাদোনা সহ তাঁর ঘনিষ্ট দুই বন্ধু প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সে ট্রায়ালের সুযোগ পেয়েছিলেন।
বাবার সম্মতি আদায় করে দুটি বাস বদল করে আর্জেন্টিনোসের ট্রেনিং কমপ্লেক্সে পৌঁছছিলেন মারাদোনা। কিন্তু এত কষ্ট করেও এসে ছোট্ট ছেলেটাকে শুনতে হয়েছিল, ভারী বৃষ্টির জন্য সেদিন আর কিছু হবে না।
তবে উঠতি ফুটবলারদের হতাশ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার বদলে ক্লাবের ইউথ স্কাউট ফ্রান্সিস কোরনেজো তাদের শহরের অন্য প্রান্তে সাভেদরা পার্কে নিয়ে গিয়ে তাৎক্ষণিক একটি ম্যাচের আয়োজন করেন। আর ম্যাচে বল পায়ে মারাদোনার অনায়াস দক্ষতা দেশে সন্দেহ হয় কোরনোজের। তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, এই ছেলেটির বয়স মাত্র ১০।
ট্রায়াল শেষ হওয়ার মারাদোনাকে পরিচয়পত্র দেখাতে বলেছিলেন কোচ। জবাবে মারাদোনা বলেছিলেন, তাঁর কাছে এ সব কিছু নেই। কোচ তখন বারেবারেই তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, সত্যি বলছ, তোমার বয়স ১০।
মারাদোনার বয়স নিয়ে ধোঁয়াশার সমাধান হয়ে যায়। এরপর ১৯৭১ থেকে আর্জেন্টিনোর সেবোলিটাস ইউথ ডিভিশনে জায়গা করে নেন। ১৯৭৩-৭৪ এ নোভেনায় অনূর্দ্ধ ১৪ জাতীয় লিগ জয়ী হয়।
বল পায়ে মারাদোনার দক্ষতা নজরে পড়ে আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমের। তারপর থেকে আর কখনওই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। ফুটবল বিশ্ব দেখেছে শুধুই মারাদোনা উত্থানের কাহিনী।
Diego Maradona Death: সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে গিয়ে গলা পর্যন্ত ডুবেও বলই খুঁজে যাচ্ছিল বছর দশেকের ছেলেটা, ঠিক সময়ে কাকা এসে না পড়লে....
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
25 Nov 2020 11:48 PM (IST)
চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা। বিশ্ব ফুটবল তথা ক্রীড়াজগতে নেমে এসেছে শোকের গভীর ছায়া। সবুজ জমিতে পায়ের ছন্দে ফুটবলে শিল্পের নকশা কাটত তাঁর বাঁ পা। সামনে লক্ষ্য থাকত বিপক্ষের গোলপোস্ট। গো-ও-ল, কথাটার সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফুটবল শিল্পীর নাম-সে সেই 'হ্যান্ডস অফ গড'-ই হোক বা পায়ের কারিকুরিতে পাঁচজনকে হেলায় কাটিয়ে জালে বল পৌঁছে দেওয়া।
(Image Source: @YannickBolasie/Twitter)
NEXT
PREV
খেলা (sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -