রিও ডি জেনেইরো: ‘প্রদুনোভা’ নামটা উচ্চারণ করা বাঙালিদের কাছে যতটা কঠিন, এই বিশেষ লাফটি জিমন্যাস্টদের কাছে তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ও বিপজ্জনক। ঠিকমতো লাফাতে না পারলে মৃত্যুও হতে পারে। কিন্তু ত্রিপুরার মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা দীপা কর্মকার এই বিপজ্জনক লাফটিকেই আঁকড়ে ধরেছেন। প্রদুনোভা তাঁর কাছে আর বিপজ্জনক নয়। এটিই এখন তাঁর পরম বন্ধু। প্রদুনোভার হাত ধরেই যে প্রথম ভারতীয় জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করেছেন দীপা। শুধু তা-ই নয়, তিনি ফাইনালেও পৌঁছে গিয়েছেন। এখন পদক জয়ের লক্ষ্যে কঠোর অনুশীলনে ডুবে রয়েছেন এই বাঙালি কন্যা।


আজ, মঙ্গলবার দীপার জন্মদিন। কিন্তু তাঁর কাছে এবার অন্তত এই দিনটার কোনও আলাদা গুরুত্ব নেই। কারণ, কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী কার্যত তাঁকে আগলে রাখছেন। তিনি চাইছেন না ফাইনালের আগে তাঁর প্রিয় ছাত্রী ফোকাস হারিয়ে ফেলেন। সেই কারণেই বাবা-মা ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে দীপার কথা বলা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন কোচ। তিনি চাইছেন, ১৫ আগস্ট পদক জিতে আগে দেশকে স্বাধীনতা দিবসের উপহার দিয়ে তারপর জন্মদিন পালন করুন দীপা।

অলিম্পিক ভিলেজে কোচের নির্দেশে গৃহবন্দি হয়ে থাকা দীপা এখন দিনে আট ঘণ্টা কঠোর অনুশীলন করছেন। ভল্ট ফাইনালের আগে তিনি আরও বেশি করে প্রদুনোভা ভল্ট অনুশীলন করছেন।

১৯৯৯ সালে রাশিয়ার জিমন্যাস্ট ইলিনা সের্গেইভনা প্রদুনোভা প্রথমবার এই বিপজ্জনক ভল্ট দেন। তাঁর নামেই এই ভল্টের নামকরণ করা হয়েছে। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সারা বিশ্বে মাত্র পাঁচ জন জিমন্যাস্ট সফলভাবে এই ভল্ট দিয়েছেন। শূন্যে অনেকটা লাফিয়ে উঠে দু বার পাক খেয়ে মাটিতে পড়াকেই প্রদুনোভা ভল্ট বলা হয়। শূন্য থেকে ঠিকমতো মাটিতে পড়তে না পারলে শরীরের বিভিন্ন অংশে বড় আঘাত লাগার আশঙ্কা থাকে, এমনকী মৃত্যুও হতে পারে। ভারতের জিমন্যাস্টরাই শুধু নন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা জিমন্যাস্টরাও প্রদুনোভাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন।

দীপার অবশ্য তাতে কিছু এসে যায় না। তিনি ফাইনালেও প্রদুনোভা ভল্ট দেওয়ার জন্য তৈরি। এই বাঙালি জিমন্যাস্ট বলেছেন, ‘আমি ২০১৪ সালে এই ভল্ট শিখেছি। আমি জানি ঝুঁকি আছে। একবার ভুল করলেই সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে পারি। কিন্তু আমি ভয় পাই না। এখনও পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি বার প্রদুনোভা ভল্ট দিয়েছি। এটা এখন আমার কাছে সহজ।’

দীপার কোচও জানেন, এই ভল্টে ঝুঁকি আছে। কিন্তু তাঁর মতে, এছাড়া কোনও উপায় নেই। বিশ্বেশ্বর বলেছেন, ‘জিমন্যাস্টকে আমাদের দেশ উন্নত নয়। সেই কারণে দীপাকে ঝুঁকি নিতেই হত। অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন পর্বে যাতে বেশি পয়েন্ট পেতে পারে, তার জন্যই প্রদুনোভা ভল্ট দিয়েছিল দীপা।’

অলিম্পিকের ফাইনালেও প্রাণ হাতে করে প্রদুনোভা ভল্ট দেবেন দীপা। সারা দেশের আশা, সফল হবেন এই বাঙালি কন্যা।