ভুবনেশ্বর: দীর্ঘ ১২ বছর পর জাতীয় স্তরের খেতাব জয় শুধু নয়, এশীয় স্তরের টুর্নামেন্টে খেলার ছাড়পত্রও পাওয়া — ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) শিবিরে যেন বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার।
রবিবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকা ওড়িশা এফসি-র (Odisha FC) ধারাবাহিক সাফল্যের দৌড় থামিয়ে কলিঙ্গ সুপার কাপ (Kalinga Super Cup) ট্রফি জেতে কলকাতার শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এফসি। ২০১২-য় ফেডারেশন কাপ জয়ের পর ২০২৪-এর সুপার কাপ জিতেছে তারা। এই সাফল্যের ফলে আগামী মরশুমে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টু- খেলার ছাড়পত্রও পেয়ে গেল লাল-হলুদ বাহিনী।
গত তিন মরশুমে ব্যর্থতার হতাশায় ডুবে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে এভাবেই আশার আলোয় নিয়ে এলেন আইএসএল জয়ী স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত (Carles Cuadrat), যিনি এর আগে বেঙ্গালুরু এফসি-কেও দুঃসময় কাটিয়ে সুদিন দেখিয়েছিলেন। এবার কুয়াদ্রাতের সেই জাদুদণ্ডের স্পর্শে হারানো গৌরব ফিরে পেল কলকাতার মশাল বাহিনী। ইন্ডিয়ান সুপার লিগেও যে তাদের আটকানো কঠিন হবে, তার ইঙ্গিত এই টুর্নামেন্টেই দিয়ে রাখল ইস্টবেঙ্গল এফসি।
রবিবার কলিঙ্গ সুপার কাপ ফাইনালের প্রথমার্ধে ব্রাজিলীয় তারকা ফরওয়ার্ড দিয়েগো মরিসিওর দেওয়া গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ওড়িশা এফসি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই প্রথম গোল শোধ করেন ইস্টবেঙ্গলের উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর, যিনি গত মরশুমে এই ওড়িশা এফসি-র হয়েই খেলতেন। পরে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সল ক্রেসপো।
স্টপেজ টাইমের শেষ মুহূর্তে গোলমুখী মরিসিওকে অবৈধভাবে বাধা দেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার প্রভসুখন গিল এবং রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করে সমতা আনেন আহমেদ জাহু। অতিরিক্ত সময়ে কলকাতার দলের ত্রাতা হয়ে ওঠেন তাদের ব্রাজিলীয় অধিনায়ক ক্লেটন সিলভা এবং দুর্দান্ত জয়সূচক গোল করে ওড়িশার কাছ থেকে সুপার কাপ ছিনিয়ে নেন।
এমন অসাধারণ ও রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরে সম্প্রচারকারী সংস্থা ‘জিও সিনেমা’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লাল-হলুদ অধিনায়ক বলেন, “এই জয় শুধু আমার নয়, পুরো দলের। ম্যাচের একেবারে শেষে আমরা গোল খেয়ে যাই। তবু হাল ছাড়িনি। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি আমরা। টানা পাঁচটা ম্যাচেই ভাল খেলেছি আমরা। তাই খুবই ভাল লাগছে। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মোহনবাগানের কাছে হারার যন্ত্রণা এতদিনে কিছুটা হলেও ভুলতে পারলাম”।
এই ক্লেটনই এই মরশুমে শুরুর দিকে ছন্দে ছিলেন না। পরপর কয়েকটি ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর ক্রমশ ছন্দে ফেরেন গত মরশুমে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা। কী ভাবে নিজেকে ছন্দে ফেরালেন, সেই প্রসঙ্গে ক্লেটন বলেন, “এই মরশুমের শুরুতে মাস চারেক ভাল খেলতে পারিনি আমি। নিজের পারফরম্যান্সে একেবারেই খুশি ছিলাম না। মাঝখানে সপ্তাহ দুয়েকের যে ছুটি পাই, তাতেই নিজেকে ফের ঘষে মেজে তৈরি করে তুলি। কারণ, এটাই তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল আমার কাছে। কোচ ও সমর্থকেরা আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। তাই জানতাম, পরিশ্রম করলে ভাল কিছু পেতে পারি। এত দিনে সেটাই পেলাম।”
অতীতে বেঙ্গালুরু এফসি-কে আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করলেও এই সাফল্য তাঁর কাছে ‘স্পেশাল’ বলে জানিয়েছেন কুয়াদ্রাত। তাঁর মতে, “আমার কোচিং জীবনের অন্যতম বড় সাফল্য এটা। অনেক আবেগ জড়িয়ে ছিল। ক্লাবের জন্য এটা খুব দরকার ছিল। ম্যাচে এত ঘটনা ঘটল। প্রথমে আমরা গোল খেলাম। শেষ মিনিটে গোল হজম করলাম। লাল কার্ড হল। ম্যাচটা খুবই কঠিন ছিল। ওডিশা শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। বিপক্ষে লোবেরার মতো কোচ। সার্বিক ভাবে আমার কাছে দারুন মুহূর্ত। এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ-২ খেলতে পারব বলে আরও ভাল লাগছে”।
সুপার কাপ জয়ের পরই অবশ্য কলকাতা ডার্বির ভাবনা ঢুকে পড়েছে কুয়াদ্রাতের মাথায়। আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এ মরশুমের আইএসএলে প্রথম ডার্বি। ইস্টবেঙ্গল কোচের আশা, এই জয়ের ছন্দই ডার্বিতে দারুন ভাবে কাজে লাগবে। মাঠেও প্রচুর সমর্থক আসবেন। তিনি বলেন, “ডার্বির আগে আর এক সপ্তাহও হাতে সময় নেই। পাঁচ দিনের মধ্যে দলকে তৈরি করতে হবে। খুব কঠিন কাজ। ডার্বি জেতা সহজ হবে না। তবে আশা করব, আমাদের আরও সমর্থক মাঠে আসবেন।”
(তথ্যসূত্র - ISL Media)
আরও পড়ুন: এক বছর আগেও ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী, বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার দর্পচূর্ণ করে রাতারাতি নায়ক শামার
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে