অ্যাডিলেড: পাঁচ উইকেট নিয়ে মাঠেই কেঁদেছিলেন তিনি। তখনও যেন ভাবতে পারেননি, ৭ উইকেট নিয়ে শেষ করবেন। এবং গাব্বায় ধ্বংস করবেন অস্ট্রেলিয়ার দর্প। শামার জোসেফ (Shamar Joseph) যেন সপ্তম স্বর্গে। বলছেন, 'আমার মনে হচ্ছিল আমি সারাদিন বল করে যেতে পারি।'


অ্যাডিলেডে রুদ্ধশ্বাস টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় (Aus vs WI)। ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নায়ক গায়ানার ২৪ বছরের এক ফাস্টবোলার। শামার জোসেফ। ৬৮ রানে ৭ উইকেট নিলেন ডান হাতি পেসার। ঘণ্টায় কখনও ১৪০ কিলোমিটার গতিতে, তো কখনও ১৪৫ কিলোমিটারে বল করেছেন। তাও ভাঙা আঙুল নিয়ে। মিচেল স্টার্কের ইয়র্কার আছড়ে পড়েছিল পায়ে। আঙুল ভাঙলেও শামারের ইচ্ছেশক্তিকে তা ধাক্কা দিতে পারেনি। বল হাতে গাব্বায় ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পেলটা করলেন তিনি। ২৭ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ১৯৯৭ সালে পারথে জিতেছিল। তারপর অ্যাডিলেডে।


ম্যাচের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এ বি ডিভিলিয়ার্স ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে আবেদন করেছেন, শামারের কাহিনি পড়ুন। যা পড়ে তাঁর নিজের চোখেই জল চলে এসেছিল। শামারের কাহিনি যে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে!


গায়ানার বারাকারার বাসিন্দা ছিলেন শামার। সাকুল্যে ৩৫০ জন অধিবাসী যে এলাকার। সকলেই মূলত কাঠুরে। জঙ্গলে গিয়ে শুকনো গাছ নিয়ে আসতেন। তারপর তা কাজে লাগাতেন। শামার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, 'একদিন জঙ্গলে আমার মাথার ওপরই আর একটু হলে গাছ পড়ে যেত। বাবা ও ভাইবোনেদের সঙ্গে জঙ্গলে গিয়েছিলাম। অল্পের জন্য প্রাণরক্ষা হয়েছিল। সেদিনই বুঝেছিলাম, আর এই কাজ করতে পারব না। আমাকে বারাকারা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই হতো।'


তারপরই বারাকারা ছেড়ে নিউ আমস্টারডামে চলে যান শামার। সেখানে নানারকম কাজ করেছেন। কখনও নির্মাণকর্মী, কখনও মজুর, কখনও নিরাপত্তাকর্মী। জঙ্গলে লেবু, পেয়ারা, পিচফল দিয়ে যিনি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। 


বছর খানেক আগেও তিনি নিরাপত্তাকর্মী হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তারপর চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সম্পূর্ণভাবে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করবেন বলে। তাঁর ক্রিকেটীয় প্রতিভা চোখে পড়তে সময় লাগেনি। তাঁর প্রতিবেশী ছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে খেলে যাওয়া রোমারিও শেফার্ড। তাঁর সূত্র ধরেই গায়ানা দলে জায়গা করে নেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় জোসেফের। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বার্বাডোজ়ের বিরুদ্ধে ঘরোয়া ক্রিকেটের চ্যাম্পিয়নশিপে।


পরে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে গায়ানা ওয়ারিয়র্স দলে নেট বোলার হিসাবে ডাক পান। সেখানে নজর কেড়ে নেওয়ার পর মূল দলেও জায়গা করে নেন। কিমো পলের পরিবর্ত হিসাবে। দু'টি ম্যাচেও খেলেন। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।


শামার পরে এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর প্রেমিকার জন্যই ক্রিকেটে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, 'আমি চাকরি ছেড়েছিলাম কারণ, বরাবর ক্রিকেটই খেলতে চেয়েছিলাম। জানতাম আমি পারব। আমার সন্তানের মা সব সময় পাশে ছিল। বলেছিল, আমি এই সিদ্ধান্ত নিলে যাই হোক না কেন পাশে থাকবে।'


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে