কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) বঙ্গ ফুটবলারদের তালিকায় তিনি থাকলেও গত মরশুম পর্যন্ত তারকা হয়ে উঠতে পারেননি। কিন্তু চলতি মরশুমে শৌভিক চক্রবর্তীকে (Souvik Chakrabarti) তারকার তকমা দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal FC) সমর্থকেরা। কারণ, লাল-হলুদ ব্রিগেডের মাঝমাঠে তিনি হয়ে উঠেছেন অন্যতম প্রধান ভরসা। যে ভাবে নিজেকে ক্রমশ মেলে ধরছেন বরাহনগরের শৌভিক, যেভাবে পরিশ্রম করে নিজের সেরাটা দিচ্ছেন ৩২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার, তার পরে তাঁর তারকার তকমা পাওয়াই স্বাভাবিক।
এই উন্নতির জন্য শৌভিক কৃতিত্ব দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে (Carles Cuadrat)। বলেছেন, “আমাদের কোচ কুয়াদ্রাত আমাদের দলের প্রধান চালিকাশক্তি। মাঠ হোক বা মাঠের বাইরে, উনি সব সময় দলকে আগলে রাখেন এবং উজ্জ্বীবিত করেন। এমন একজন কোচ থাকলে ভাবনা, প্রকাশ, দর্শন সবই পাল্টে যায়।”
২০২১-২২-এ আইএসএল কাপ জয়ী হায়দরাবাদ এফসি-র অন্যতম সদস্য ছিলেন শৌভিক। দলের সাফল্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। কিন্তু পরের মরশুমে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিলেও চোটের কারণে মরশুমে বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলতে পারেননি। আইএসএলে মাত্র পাঁচটি ম্যাচে খেলতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার চোট সারিয়ে নিজেকে অনেক মেজে-ঘষে তার পরে দেশের এক নম্বর লিগের আসরে নামেন তিনি। তার প্রতিফলন গত কয়েকটি ম্যাচেই পাওয়া গিয়েছে।
নিজেকে ফিরিয়ে আনার জন্য আইএসএলের আগে কলকাতা লিগেও খেলেন তিনি। ওই লিগে খেলায় তাঁর অনেক উপকার হয়েছেন বলে মনে করেন শৌভিক। বলেন, “কলকাতা লিগের ম্যাচগুলো খেলে আমার বেশ উপকার হয়েছে। আমি কোনও দিন কলকাতা লিগ বা কোনও ম্যাচকে ছোট করে দেখিনি। ক্লাব যেখানে খেলতে বলেছে, খেলেছি। চলতি মরসুমে আমার ম্যাচ টাইম খুব দরকার ছিল। ক্লাবের কাছে কৃতজ্ঞ আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য”।
গত মাসে ওড়িশা এফসি-র বিপজ্জনক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আহমেদ জাহুকে যে ভাবে কড়া পাহাড়ায় রেখেছিলেন শৌভিক, তা কম প্রশংসার যোগ্য নয়। বেশ কয়েকবার শৌভিকের ওপর মেজাজও হারিয়ে ফেলেন জাহু, যা তাঁদের কোচ কুয়াদ্রাতের কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। তাঁকে বারবার বিব্রত করে জাহুর মনসংযোগ নষ্ট করাই ছিল শৌভিকের অন্যতম উদ্দেশ্য।
জাহুকে সে দিন একটির বেশি শটই নিতে দেয়নি ইস্টবেঙ্গল। ফাইনাল থার্ডে তিনি মাত্র ১৬ বার প্রবেশ করেন এবং ওই এলাকায় ১৭টির বেশি পাস খেলতে পারেননি তিনি। বলে পা লাগাতে পেরেছেন ৭৬ বার। সেই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতে নেন শৌভিক।
তাঁর পারফরম্যান্সে এই উন্নতিতে যে কোচের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়ে শৌভিক বলেছেন, “আমি কোচের নির্দেশ অনুযায়ী চলেছি। যথাসাধ্য দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। সেভাবেই খেলার চেষ্টা করি, যাতে দলের উপকার হয়। ভাল খেলার মধ্যে কোনও রহস্য নেই। পরিশ্রম আর একাগ্রতা ছাড়া ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। গত এক বছরে প্রচুর পরিশ্রম করেছি, যাতে ভালভাবে ফিরতে পারি”।
গত তিন মরশুমে ব্যর্থতার পর এই মরসুমেই ইস্টবেঙ্গলের খেলায় ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। যার অনেকটা কৃতিত্বই আইএসএল জয়ী কোচ কুয়াদ্রাতের। তাঁর আরও প্রশংসা করে কৌস্তভ বলেন, “এটা মানতে দ্বিধা নেই, কুয়াদ্রাত দ্রুত ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। দলে বেশ সুন্দর একটি বাঁধন তৈরি করেছেন। যত দিন যাবে, তত বেশি মজবুত হবে এই বাঁধন। কোন ম্যাচে আমাদের কী কৌশল থাকবে, কার কী দায়িত্ব থাকবে, সেগুলো উনি বেশ ঠান্ডা মাথায় সময় নিয়ে আমাদের বোঝান”।
মাঝমাঠে সল ক্রেসপোর সঙ্গে তাঁর শৌভিকের ভাল বোঝাপড়ার জন্য বোরহা হেরেরা নিশ্চিন্তে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করতে পারছেন। যার ফলে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে কিছুটা হলেও তীব্রতা বেড়েছে। যদিও গোল করার লোকের অভাব তাঁদের। সব মিলিয়ে চলতি আইএসএলে ১১টি গোল করেছে ইস্টবেঙ্গল এবং এগুলির স্কোরার মাত্র চারজন।
ক্রেসপোর সঙ্গে তাঁর ভাল বোঝাপড়া নিয়ে শৌভিক বলেন, “সল বেশ মিশুকে। দ্রুত আমরা ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছি। আইএসএলে এটা ওর দ্বিতীয় মরশুম। এখানকার ফুটবল সংস্কৃতির বিষয়ে ও এখন বেশ ওয়াকিবহাল। অনুশীলনেও আমরা অনেকটা সময় একসঙ্গে কাটাই। আমাদের মধ্যে সব সময় হাসি-ঠাট্টা-আড্ডা চলতে থাকে। অনেক সময় আমরা অনুশীলনে আসিও একসঙ্গে। মাঠ ও মাঠের বাইরে একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য আমাদের বোঝাপড়া আরও গভীর হয়েছে”।
আপাতত ইন্ডিয়ান সুপার লিগ টেবলে ইস্টবেঙ্গল এফসি আট নম্বরে থাকলেও প্রথম ছয়ে থেকে শেষ করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী শৌভিক বলেন, “আইএসএল-এ প্রথম ছয়ে থাকার জন্য আমরা সেরাটা দিয়ে খেলার চেষ্টা করছি। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। ভাল প্র্যাক্টিস মাঠ থেকে শুরু করে দলের সুযোগ-সুবিধা – কোনও কিছুতেই খামতি রাখছে না ক্লাব”। (তথ্যসূত্র - ISL Media)
আরও পড়ুন: Shubham Dubey: বাবার ছিল পানের দোকান, কোটিপতি হয়ে শুভমের কানে বাজছে সৌরভের মন্ত্র
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে