মুন্না অগ্রবাল, দক্ষিণ দিনাজপুর: কাশফুলের বন পেরিয়ে, বিদ্যুতের বড় লোহার পোলে কান পেতেছে একজন। ক্রমশ কম্পনের আওয়াজ তীব্র। মুহূর্তটুকু ভাগ করে নিতে দিদির সঙ্গে এগিয়ে আসছে ভাই। আর একটু পরে ঐতিহাসিক দৃশ্য। কাশফুলের মাঝখান দিয়ে ধোঁয়া উড়িয়ে আসছে রেল গাড়ি। দু চোখ ভরে দেখতে অপুকে নিয়ে দৌঁড় দুর্গার। ইতিমধ্যেই ৬৫ বছর পার, এই দৃশ্য এখন দেখা যায় না বলেই, টিভির পর্দা জুড়ে এখনও ধরা দেয় নস্টালজিয়া। কারণ বাস্তব বড় কঠিন। বলাইবাহুল্য যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে না গেলে অস্তিত্বসঙ্কট হবে। এদিকে চব্বিশেই পাখির চোখ লোকসভা নির্বাচন। গঙ্গার তলা দিয়ে যখন মেট্রো রেল ছুঁয়ে যাওয়ার অপেক্ষায়, ঠিক তখনই এই রাজ্যের একটি জেলায় রেল সফরে জুড়ল পালক। শিয়ালদহ থেকে সরাসরি ট্রেন সফর এবার বালুরঘাটে। বছরের প্রথম দিনে বালুরঘাটবাসীর জন্য নতুন উপহার রেল মন্ত্রকের। বালুরঘাট থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত নতুন ট্রেনের সূচনা। যার উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এগারো সালের আদমশুমারির নিরিখে, প্রায় দেড় লাখের উপরে মানুষ এখানে বসবাস করেন। 'স্বপ্নপূরণ' তো বটেই, 'সময় বাঁচবে' এবং একাধিক 'বেকার-হকার' মানুষের রুজিরুটির সন্ধান মিলবে, এমন আশার ঝলকই দেখা গেল বালুরঘাটবাসীর চোখে-মুখে।
দীর্ঘদিন রেললাইন বিহীন জেলা হিসেবে থাকার পর ২০০৪ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই জেলা পেয়েছিল রেললাইন থেকে শুরু করে রেল স্টেশন। পরবর্তীকালে বালুরঘাট -কোলকাতা স্টেশনের মধ্যে চলা তেভাগা এক্সপ্রেস, বালুরঘাট হাওড়া এক্সপ্রেস চালু হলেও দক্ষিণ দিনাজপুরবাসী বালুরঘাট- শিয়ালদা নিজস্ব ট্রেনের দাবি জানিয়ে আসছিল প্রথম থেকেই। অবশেষে সেই স্বপ্নপূরণ হল।এদিন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) বলেন, এই জেলার স্বপ্নপূরণ হল। আজকে কল্পতরু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বহুদিনের আশা ছিল, জেলাবাসী ট্রেনে চড়বে এবং শিয়ালদা গিয়ে নামবে। সেই আশাপূর্ণ হল, সমগ্র জেলাবাসীকে আমার তরফ থেকে অভিনন্দন। সবাই খুব ভাল থাকবেন।'
জেলার নাট্যব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী মহল, আড্ডা ঠেক থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সবখানেই আলোচনার বিষয়বস্তু এখন একটাই। যদিও তার মাঝেই দাবি উঠতে শুরু করেছে মালদা- ব্যাঙ্গালুরু ট্রেনটিকে বালুরঘাট পর্যন্ত এক্সটেনশন করতে হবে। বালুরঘাটের বাসিন্দা রোহন মজুমদার বলেন,একজন সাধারণ বালুরঘাটবাসী হিসেবে বলতে পারি, রেলের তরফ থেকে যে শিয়ালদা- বালুরঘাট এক্সপ্রেস দেওয়া হয়েছে, এটি একটি খুবই বড় উপহার। আমি এতে নিজে সফর করেছি। ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সাড়ে দশটার সময় সেটি শিয়ালদা থেকে ছেড়েছে। এবং ৮ টা ১৫ এর মধ্যে বালুরঘাট পৌঁছে গিয়েছে। এই যে আগের আমাদের অভিজ্ঞতা, এটা আমরা সবাই জানি। যে গৌঢ় এক্সপ্রেস মালদা স্টেশনে এসে,বহুক্ষণ আমাদের অপেক্ষা করতে হত। সেই অপেক্ষাটা আর করতে হচ্ছে না। শিয়ালদা থেকে সরাসরি বালুরঘাটের জন্য ট্রেন চালু হওয়া, এটি একটি বড় ব্যাপার। নতুন বছরে, বালুরঘাটবাসীর কাছে এটা একটা বড় পাওনা। শুধুমাত্র পড়ুয়া-চাকুরিজীবী বা ডেলি প্যাসেঞ্জারের কথা ভেবে বলছি না, সবার জন্যই এটা একটা সুবিধার বিষয়।' এই ট্রেন চালু হওয়াতে যে সময়টা যে বেঁচে যাচ্ছে, তা আরও একবার উল্লেখ করলেন তিনি।
বালুরঘাটের নাট্যকর্মী জিষ্ণু নিয়োগী বলেন,'দেখুন বালুঘাটের উন্নতি হলে, আমি এই জেলার মানুষ হিসেবে খুবই আনন্দিত। দীর্ঘদিন ধরে আমরাও আন্দোলন করে আসছি। যত রেল হবে শহরে, ব্যবসা বাড়বে। আমাদের প্রান্তিক শহর। এখানের ছেলেদের কাছে কোনও কাজ নেই, চাকরি নেই।আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন রাজ্যের অবস্থা। সেখানে একটা রেল হলে, কিছু হকার , কিছু বেকার, কাজ পায়, সেখানে অবশ্যই ভাল বলব। তবে একটা কথা বলব, রেল উন্নয়ন কমিটির বহু মানুষ ৬০-৭০ বছর ধরে, লড়াই করে গিয়েছেন। বরকত সাহেব (প্রাক্তন রেলমন্ত্রী আবু বরকত আতাউর গনি খান চৌধুরী) এর শিলান্যাস করলেও, আসলে এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই অবদান, মানে বালুরঘাটে নিয়ে আসা এবং জেলায়। সেখানে অবশ্যই ধন্যবাদ। আমি ডান-বাম বলছি না। যারা করতে পারেনি, তাঁরা অপদার্থ। আজকে সুকান্ত বাবু (সুকান্ত মজুমদার) তিনি করছেন। কালকে আরেকজন আসবেন, এক্স ওয়াই জেড, যিনিই আসবেন, আমাদের বায়াসনেস নেই কোনও, শহরের উন্নতি হোক, জেলার উন্নতি হোক।'