কলকাতা: শনিবার ভারতীয় ফুটবলের মহারণ। আইএসএলে (ISL) মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এটিকে মোহনবাগান (ATK MB) ও ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। যত এগিয়ে আসছে কলকাতা ডার্বি, তত শহরের তাপমাত্রাও যেন বাড়ছে।
ম্যাচের অনলাইন টিকিট আগেই বিক্রি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে কাউন্টারের টিকিটও বিক্রি শুরু হয়ে গেল। টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগের প্রথম ডার্বিতে গ্যালারিতে সাড়ে বাষট্টি হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। এ বার সেই রেকর্ডও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ডার্বিতে নামার আগের ম্যাচে দুই দলই দুর্দান্ত জয় পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গল এফসি হারিয়েছে লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি-কে এবং এটিকে মোহনবাগান হারিয়েছে কেরল ব্লাস্টার্স এফসি-কে। ফলে দুই দলই এখন ছন্দে রয়েছে। ফিরতি ডার্বিতে একে অপরের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য মরিয়া। ইস্টবেঙ্গলের কাছে এটা বরাবরের মতোই মর্যাদার লড়াই।
টানা সাতটি মুখোমুখি লড়াইয়ে তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে হেরেছে। অন্যদিকে এটিকে মোহনবাগানের কাছে শুধু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর আধিপত্য বজায় রাখার লড়াই নয়, তিন নম্বরে থেকে প্লে অফের প্রথম ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলার চ্যালেঞ্জও। এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট পেলে তবেই তা সম্ভব হবে। তাই এই ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
স্থানীয় ফুটবলাররা তো বটেই, দুই দলের বিদেশিরাও ডার্বি নিয়ে রোমাঞ্চিত। এমনকী তাদের খেলা দেখতে তাঁদের বন্ধু-আত্মীয়রাও এসেছেন কলকাতায়। যেমন প্রথম ডার্বির অন্যতম গোলদাতা ও ম্যাচের নায়ক হুগো বুমৌসের ভাই ওথমানে কলকাতায় এসেছেন ডার্বি দেখতে। অন্যদিকে, লাল-হলুদ শিবিরের ডিফেন্ডার চ্যারিস কিরিয়াকুর ছোটবেলার বন্ধু ভাসোস রোম্বাসও এসেছেন এ শহরে। শনিবারের মধ্যে কলকাতায় চলে আসছেন তাঁর বাবা অ্যাথোস-ও। আত্মীয়-বন্ধুদের সামনে তাই বাড়তি উৎসাহ নিয়ে খেলবেন দুই দলের দুই তারকা।
ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের নতুন সদস্য জেক জার্ভিসও উত্তেজনায় ফুটছেন ডার্বিতে নামার আগে থেকেই। স্বীকার করেই নিলেন, এটাই তাঁর ফুটবল জীবনের সেরা ডার্বি। ক্লেটন সিলভার সঙ্গী এই ব্রিটিশ স্ট্রাইকার বলেন, “এটাই সম্ভবত আমার ফুটবল জীবনের সবচেয়ে বড় ডার্বি হতে চলেছে। এখানে সই করার আগে থেকেই এই ডার্বি সম্পর্কে শুনে আসছি। প্রচুর সমর্থক আসেন এই ম্যাচ দেখতে। উত্তেজনাও তুঙ্গে থাকে। এখানে আসার আগে কলকাতা ডার্বির কিছু ভিডিও দেখেছি। এই ম্যাচ নিয়ে মানুষের উত্তেজনা, আবেগ দেখেছি”।
জার্ভিস দলে যোগ দেওয়ার পর থেকে ইস্টবেঙ্গল দলটাকে আগের চেয়ে চাঙ্গা লাগছে। দলে এ রকম প্রভাব ফেলতে পেরে খুশি জার্ভিস বলেন, “এখানে এসে উপভোগ করছি। আমি যে ক্লাবের খেলায় প্রভাব ফেলতে পেরেছি, ক্লাবকে ভাল ফল এনে দিতে পেরেছি, সে জন্য ভাল লাগছে। আরও যত খেলব, তত নিজেকে প্রমাণ করতে পারব”।
জার্ভিস চান, যুবভারতীর গ্যালারি ভরে উঠুক লাল-হলুদ পতাকা ও জার্সিতে। বলেন, “চাইব, সমর্থকেরা গ্যালারি ভরিয়ে তুলুন। যত আওয়াজ হবে, তত আমরা তেতে উঠব এবং নিজেদের সেরাটা দিতে পারব। আমাদের যে রকম পারফরম্যান্স, তাতে ভাল ফল না হওয়ার কিছু নেই। অনেক দিন ধরে দলের সবাই পরিশ্রম করছে। শেষটা ইতিবাচক হলে ভালই লাগবে। এই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে শেষ করে আমরা সুপার কাপে আবার ফিরে আসব”।
শনিবার কার্ড সমস্যার জন্য খেলতে পারবেন না এটিকে মোহনবাগানের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিল। তাঁর অনুপস্থিতিতে জার্ভিস ও ক্লেটনকে আটকানোর দায়িত্ব যাঁর ওপর থাকবে, সেই স্লাভকো দামিয়ানোভিচ প্রায় চ্যালেঞ্জের সুরে জানিয়ে দিলেন, ক্লেটনকে গোল করতে দেবেন না। সার্বিয়ান ডিফেন্ডার বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। ওদের ক্লেটন সিলভা দারুন স্ট্রাইকার, সুযোগসন্ধানী। ১২টা গোল করেছে এ বার। ও যখন অন্য ক্লাবে খেলত, তখন আমি ওর বিরুদ্ধে অন্য ক্লাবের হয়ে দুবার খেলেছি। একবারও আমাকে হারাতে পারেনি। ওর খেলার ধরনটা আমি জানি। এ বারও আমার সঙ্গে ও পেরে উঠবে না। ওকে গোল করতে দেব না, এই শপথ নিয়েই মাঠে নামব। ব্রেন্ডানের জায়গায় হয়তো আমিই খেলব। সম্প্রতি কয়েকটি ম্যাচে খেলেছি। দলের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। শুরু থেকে নামলে নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা করব”।
তাঁর সতীর্থ স্ট্রাইকার ও এটিকে মোহনবাগানের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিমিত্রিয়স পেট্রাটস সমর্থকদের খুশির জন্য ম্যাচটা জিততে চান। অস্ট্রেলীয় অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার জানালেন, “ডার্বি সব সময়ই মর্যাদার লড়াই। অস্ট্রেলিয়ায় একাধিক ডার্বি খেলেছি। ওখানে যে মানসিকতা নিয়ে খেলতে নেমেছি এখানেই সেই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামব। ইস্টবেঙ্গল প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেলেও এই ম্যাচে যথেষ্ট মোটিভেশন পাবে। আমাদের কাছেও এটা সন্মানের লড়াই। প্লে অফে নামার আগে লিগের শেষ ম্যাচ, তিন নম্বরে টিকে থাকারও লড়াই আমাদের। তাই জিততেই হবে। গ্যালারি ভর্তি সমর্থকেরা থাকবেন। তাদের খুশি করা আমাদের দায়িত্ব।”
আরও পড়ুন: দল মাঠে হারছে, মাঠের বাইরে সিএবি কর্তাদের ধুন্ধুমার, আসরে নামতে হল সৌরভকে