গুয়াহাটি: হিরো আইএসএলে গত দুই মরসুমে শুরুর দিকে জয় না পাওয়াটা লাল-হলুদ শিবিরের কাছে ছিল নিয়মিত ব্যাপার। প্রথম মরশুমে তারা প্রথম জয় পায় আট নম্বর ম্যাচে ও গত মরশুমে তাদের প্রথম জয় পেতে লেগে যায় এক ডজন ম্যাচ। অর্থাৎ দ্বাদশ ম্যাচে তারা প্রথম জয় পায়। এ বারও ব্যর্থতা দিয়েই শুরু করেছে তারা। তবে জয়ের রাস্তায় আসতে এ বার এত বেশি সময় লাগবে না বলেই আশা সমর্থকদের। প্রথম দুই ম্যাচে তারা হারলেও একেবারে আত্মসমর্পণ করেননি। কেরালা ব্লাস্টার্সকে ৭২ মিনিট পর্যন্ত আটকে রেখেছিল স্টিফেন কনস্টান্টাইনের দল। এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষে বাড়তি সময়ে গোল খেয়ে প্রায় হাতে আসা এক পয়েন্ট খোয়াতে হয় তাদের।


গত ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে যে ছন্দে ছিল লাল-হলুদ বাহিনী, বৃহস্পতিবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গান্ধী স্টেডিয়ামে অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে যদি সেই ছন্দে থাকতে পারে তারা, তা হলে হয়তো প্রথম জয় পেতে পারে তারা। এই ম্যাচে জয় পেলে শুধু যে এবারের লিগের প্রথম জয় পাওয়া হবে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র, তা নয়, হিরো আইএসএলে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কেও প্রথম হারাবে তারা। তাই দু’দিক থেকে জেতার তাগিদ রয়েছে লাল-হলুদ শিবিরের। অন্যদিকে, গত বারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি নর্থইস্টের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় পেলেও বেঙ্গালুরুকে ৮৭ পর্যন্ত গোলশূন্য রাখা নর্থইস্টকে হালকা ভাবে নেওয়াটা উচিত নয় ঠিকই। তবে দুই ম্যাচে তাদের গোল করার অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে যে ভাবে, তা তাদের দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ।


পারফরম্যান্সের খতিয়ান


গতবার ইস্টবেঙ্গল লিগ তালিকায় একেবারে নীচে ছিল। এ মরসুমের শুরুটাও খুব একটা ভাল করতে পারেনি স্টিফেন কনস্টান্টাইনের লাল-হলুদ বাহিনী। চারটি ম্যাচ খেলে একটিতে জেতে তারা ও দুটিতে ড্র করে। হারে মাত্র একটিতে। চার গোল দিয়ে চার গোল খায়। রানার্স-আপ মুম্বই সিটি এফসি-কে শেষে গ্রুপ ম্যাচে ৪-৩-এ হারায় তারা। তবে ডুরান্ড যে জায়গায় শেষ করেছিল লাল-হলুদ বাহিনী, সেই জায়গা থেকে হিরো আইএসএল শুরু করতে পারেনি। প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৭২ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য রাখার পর ১-৩-এ হারে ইস্টবেঙ্গল। তাদের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার অ্যালেক্স লিমা একটি গোল শোধ করলেও এর বেশি এগোতে পারেনি তারা। গত বুধবার ঘরের মাঠে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে সাত মিনিটের মাথায় ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে নিজেদের দলে পরিবর্তন এনে ও কৌশল পাল্টে ঘুরে দাঁড়ায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। ৬৪ মিনিটের মাথায় ক্লেটন সিলভার পেনাল্টি থেকে আসা গোলে সমতা আনে তারা। একেবারে শেষে বাড়তি চার মিনিট পেয়ে শেষে তা কাজে লাগিয়ে নেয় গোয়ার দলই। শেষ মিনিটে এডু বেদিয়ার জয়সূচক গোলে ম্যাচ হারতে হয় তাদের।


মরশুমের শুরুতে ডুরান্ড কাপে নিজেদের গ্রুপে একটি মাত্র জয় পেয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শেষ করে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি। তারা হারায় সুদেভা এফসি-কে। চলতি হিরো আইএসএলের প্রথম ম্যাচে তাদের ১-০-য় হারিয়ে অভিযান শুরু করে বেঙ্গালুরু এফসি। তবে ৮৭ মিনিট পর্যন্ত প্রতিপক্ষকে ঠেকিয়ে রাখে নর্থইস্ট। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি তারা। ০-৩ গোলে হারে। অর্থাৎ ইস্টবেঙ্গলের মতোই এখনও জয়ের মুখ দেখতে পায়নি উত্তর-পূর্বের দলটি। তৃতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে তাই নর্থইস্টও জয়ে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। 


দুই শিবিরের খবর


এ বার ইস্টবেঙ্গল এফসি-র দলে অনেকেই হিরো আইএসএলে পরীক্ষিত। ক্লেটন সিলভা, অ্যালেক্স লিমা, ইভান গঞ্জালেজ থেকে এ দেশের মোবাশির রহমান, ভিপি সুহের, কমলজিৎ সিং, জেরি লালরিনজুয়ালা, শৌভিক চক্রবর্তী, সবাই লিগে খেলেছেন। কিন্তু এ বার নিজেদের ধারাবাহিক ভাবে মেলে ধরতে পারেননি তাঁরা। গত ম্যাচে দেখা গিয়েছে, কোচ স্টিফেন সামনে ক্লেটন সিলভা ও সুহেরকে রেখে তাঁদের পিছনে  সুমিত, শৌভিক, ও’ডোহার্টি এবং লিমাকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে প্রথমার্ধে কিছুটা আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলেও ক্রমশ ম্যাচে ফিরে আসে লাল-হলুদ বাহিনী ও দ্বিতীয়ার্ধে প্রতিপক্ষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে। এই ম্যাচে তাই প্রথম দলে খুব বেশি সংখ্যক পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। লিমা ও এলিয়ান্দ্রোর চোট। তাই তাঁদের এই ম্যাচে হয়তো পাওয়া যাবে না। এই অবস্থায় এই ঘটনা চিন্তায় ফেলতে পারে কোচকে।


ইস্টবেঙ্গল যতটাও বা নিজেদের গোছাতে পেরেছে, নর্থইস্ট ইউনাইটেডের খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছে তারা তাও পারেনি। যদিও প্রথম দুই ম্যাচেই তারা দুটি কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলেছে। ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-র কাছে ৮৭ মিনিটের গোলে হারে। গতবারের হিরো আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি হাইল্যান্ডাররা। একমাত্র দলের ফরাসি উইঙ্গার রোমেইন ফিলিপোতো কিছুটা উজ্জ্বল। একাধিক সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি, একাধিক ক্রস দিয়েছেন সতীর্থদের, যা থেকে গোল হতে পারত। কোচ মার্কো বালবুল ৪-৩-৩-এ দল সাজালে আক্রমণে জিতিন এমএস, ইংল্যান্ডের ম্যাট ডার্বিশায়ার, পার্থিব গোগোইকে রেখে রক্ষণে গুরজিন্দর কুমার, ডেনমার্কের মাইকেল জেকবসেন, গৌরব বোরা, মহম্মদ ইরশাদদের রাখতে পারেন।মাঝমাঠে ফিলিপোতোর সঙ্গে দেখা যেতে পারে স্পেনের জন গাজতানাগা ও এমানুয়েলকে। গোলে বাংলার অরিন্দম ভট্টাচার্যই থেকেছেন গত দুই ম্যাচে। এই ম্যাচেও তাঁকে সুযোগ দেওয়া হতে পারে।