লন্ডন: ৪৪ বছরের অপেক্ষার অবসান। প্রথমবার বিশ্বকাপে কব্জা করল ইংল্যান্ড। সেটাও একেবারে নাটকীয়ভাবে। লর্ডসে টসে জিতে প্রথম ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেট হারিয়ে তোলে ২৪১ রান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শেষ ওভারের নাটকীয় ক্রিকেটের পর সব উইকেট খুইয়ে ২৪১ রান তোলে ইংল্যান্ডও। টাই হওয়ায় খেলা গড়ায় সুপার ওভারে।


সুপার ওভারে, প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড তোলে ১৫ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে ১৫ রান তোলে কিউইরাও। স্কোর আবার টাই হয়ে যায়। তবে ইংল্যান্ডের ইনিংসে বেশি বাউন্ডারি থাকার কারণে চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ডই। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে মোট এসেছে ১৬টি বাউন্ডারি, যার মধ্যে রয়েছে ২টি ছয়। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের ইনিংসে মোট ২৪টি বাউন্ডারি এসেছে, তার মধ্যে ২টি ছয়। ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছেন বেন স্টোকস।



১৯৭৯, ১৯৮৭, ১৯৯২ বিশ্বকাপে যা করে দেখাতে পারেনি অতীতের ব্রিটিশ দল, এবার সেটাই করে দেখালো ইয়ন মর্গ্যানরা। বিশ্বকাপের ফাইনালে গিয়েও ট্রফি ছুঁয়ে না দেখার হতাশা কাটিয়ে লর্ডস সাক্ষ্মী থাকল ইংল্যান্ডের প্রথম বিশ্বজয়ের। বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হল এবং সেটা যোগ্যতম হিসেবেই। ২ বারের  বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত হেরেছে সেমিতে। একই হাল হয়েছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ারও।  ২০১৯ বিশ্বকাপে যাদের শুরু থেকেই ‘ফেভারিট’ ধরা হল, তারাই জিতল। আর ডার্ক হর্স হয়েই থেকে গেল নিউজিল্যান্ড।


ক্রিকেট বিশ্বের ১২তম বিশ্বকাপে অবশেষে নিজেদের নাম লিখল উইলিয়াম গিলবার্ট গ্রেস সাহেবের দল। ক্রিকেট আবিষ্কর্তাই বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ থেকে বঞ্চিত! এবার সেই ‘শাপমোচন’ হল। আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্সকে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ ট্রেভর বেইলিসের হাত ধরেই জেসন রয়, জনি বেয়ারস্টো, জো রুট, জোফ্রা আর্চারদের হাতে সোনালি রঙের ট্রফিটা উঠল। অন্যদিকে ব্র্যান্ডন ম্যাককলামের পর কেন উইলিয়ামসনের কপালেও জুটল সেই রানার্স  আপ তকমা।


লর্ডসে টসে জিতে প্রথম ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। শুরু থেকেই ব্ল্যাকক্যাপসদের ব্যাটসম্যানদের ওপর দাপট দেখান ক্রিস ওকস, জোফ্রা আর্চার, লিয়াম প্ল্যাঙ্কেটরা। ৩টি করে উইকেট পান ওকস এবং প্ল্যাঙ্কেট। ১টি করে উইকেট আসে জোফ্রা ও মার্ক উডের ঝুলিতে। কিউই ওপেনার হেনরি নিকোলস (৫৫) এবং টম ল্যাথাম (৪৭) ছাড়া আর কোনও ব্যাটসম্যানই ব্রিটিশ আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। যার ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে কেনের দল ২৪১ রানই তুলতে পারে।



জবাবে ব্যাট করতে নেমে কিউই আক্রমণের সামনে শুরু থেকেই একের পর উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপে জেসন রয় ও জনি বেয়ারস্টোর যে দাপট বিপক্ষদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিল, এদিন সেই বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখা যায়নি। ১৭ রান করে শুরুতেই ফিরে যান জেসন রয়। এরপর জো রুট (৭) সেট হতে না হতেই আউট হন। বেয়ারস্টো (৩৬) রান পেলেও দীর্ঘস্থায়ী হননি। ২২ বলে ৯ রান করে ফিরে যান ইয়ন মর্গ্যানও। তবে বেন স্টোকস ও জস বাটলারের যুগলবন্দি ইংল্যান্ডকে ধীরে ধীরে শক্তপোক্ত জায়গায় নিয়ে যায়। কিন্তু ৬০ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে জস বাটলার আউট হবার পর আবার কিছুটা চাপে পড়ে ব্রিটিশ দল। ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলা ঘুরিয়ে দেন ব্রিটিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ৮৪ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন তিনি। তবে সেই ইনিংসও দলকে জয় এনে দিতে পারেনি। স্কোর সমান সমান হওয়ায় খেলা গড়ায় সুপারওভারে। এরপরও সেই সুপারওভারেও স্কোর টাই হওয়ায় বাউন্ডারির বিচারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় ব্রিটিশ দল।



প্রসঙ্গত, ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতানোর নেপথ্য থাকলেন তিন ‘বিদেশি’। প্রথমজন, দলপতি ইয়ন মর্গ্যান। যিনি একজন আইরিশ ক্রিকেটার। পরে ইংল্যান্ড দলের হয়ে খেলতে শুরু করেন এবং এই বিশ্বকাপে ব্রিটিশ দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনিই। দ্বিতীয়, জোফ্রা আর্চার। যিনি ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার হলেও বিশ্বকাপ খেললেন ইংল্যান্ডের হয়ে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ইংলিশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেট ও সবথেকে বেশি ডট বলও তাঁরই। অন্যজন কোচ ট্রেভর বেইলিস। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার এই প্রাক্তন ক্রিকেটারই ব্রিটিশদের রূপকথার নেপথ্য নায়ক হয়ে রইলেন।