কলকাতা: ইউরো আর কোপা আমেরিকা একসঙ্গে। যে কোনও ফুটবলপ্রেমীর কাছেই স্বপ্নের মুহূর্ত। বিশ্বের সেরা ফুটবলারদের লড়াই দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। কোপা আর ইউরো তো বিশ্বকাপের মতোই উত্তেজক। বিশ্বকাপে আমরা মূলত যে দলগুলির খেলা দেখার জন্য মাঠে যাই বা টিভির পর্দায় চোখ রাখি, সেই দলগুলি এই দুই প্রতিযোগিতায় খেলে। ফলে কোপা আর ইউরো নিয়ে উত্তেজনা কম কিছু থাকে না। ইউরোতে তো লড়াই আর মারাত্মক। কোনও দলকেই খাটো করে দেখা যায় না। সব দলই উনিশ-বিশ। যেটাকে অঘটন বলা হয়, সেরকম ফল যে কোনও ম্যাচেই হতে পারে। অতীতে বারবার সেটা দেখা গিয়েছে।


এবারের ইউরোর গ্রুপ সি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বারবার সেই কথাটাই মনে হচ্ছে। এই গ্রুপে আছে হল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইউক্রেন ও নর্থ ম্যাসিডোনিয়া। নিঃসন্দেহে খাতায়-কলমে এই গ্রুপ তো বটেই, প্রতিযোগিতার অন্যতম সেরা দল ডাচরা। ১৯৮৮ ইউরোর চ্যাম্পিয়নরা এবারও ফেভারিট। ডাচদের বর্তমান দলে সেই অর্থে কোনও তারকা নেই। কিন্তু দলটা দুর্দান্ত। ডেনিস বার্গক্যাম্প বা আর্জেন রবেনের মতো তারকা কেউ থাকলে দলটা সমৃদ্ধ হত, কিন্তু যারা আছে, তারাও কেউ দক্ষতার বিচারে কম নয়। এবারের ইউরোর জন্য ঘোষিত স্কোয়াডে আছে তিন গোলকিপার জেসপার সিলেসেন, মার্টেন স্টেকেলেনবার্গ ও টিম ক্রাল। আমি নিজে গোলকিপার ছিলাম, তাই গোলকিপারদের দিকে আমার বাড়তি নজর থাকে। ইউরোতে ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার সিলেসেনের পারফরম্যান্সের দিকে আমি তাকিয়ে আছি। আমার আশা, ডাচদের প্রধান কোচ প্রাক্তন ফুটবলার ফ্র্যাঙ্ক ডি বোর সিলেনেসকেই সুযোগ দেবেন।


এবারের ইউরোতে ডাচদের ডিফেন্ডার হিসেবে থাকছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন তারকা ডেলে ব্লাইন্ড। তার সঙ্গে আছে ইন্টার মিলানের ডিফেন্ডার স্টেফান ডে ভ্রিজ। এছাড়াও দলে আছে জোয়েল ভেল্টম্যান, ম্যাটহিজস ডে লিট, নাথান অ্যাকে, ডেনজিল ডামফ্রাইস, প্যাট্রিক ভ্যান অ্যানহল্ট, আওয়েন উইনড্যাল ও জুরিয়েন টিম্বার।


হল্যান্ডের মিডফিল্ডে আছে জিওর্জিনো উইনালডাম, ফ্রেঙ্কি ডে জং, ডেভি ক্লাসেন, মার্টেন ডে রুন, রায়ান গ্র্যাভেনবারখ ও টিউন কুপমেইনার্স। আক্রমণভাগে থাকছে লিঁয়র স্ট্রাইকার মেমফিস ডিপে, কুইনসি প্রোমস, লুক ডে জং, স্টিভেন বারগুইস, ডনিয়েল ম্যালেন, উট উইগরস্ট ও কোডি গ্যাকপো।


২০১০ বিশ্বকাপের রানার্স হল্যান্ডের দলটা মাঝে কিছুটা দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। ২০১৬ ইউরো আর ২০১৮ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু ফ্র্যাঙ্ক ডি বোর দায়িত্ব পাওয়ার পর ধীরে ধীরে দলকে গুছিয়ে নিচ্ছেন।


ভারতীয় সময় অনুযায়ী রবিবার মধ্যরাতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইউক্রেনের মুখোমুখি হচ্ছে হল্যান্ড। ১৮ জুন পরের ম্যাচ অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে এবং শেষ ম্যাচ ২১ জুন নর্থ ম্যাসিডোনিয়ার বিরুদ্ধে।  


এই গ্রুপের অন্য একটি দল অস্ট্রিয়া। এই দলটি এর আগে একাধিকবার ইউরোতে খেললেও, কোনওদিন গ্রুপ টপকাতে পারেনি। এবারের দলের একমাত্র তারকা বায়ার্ন মিউনিখের ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবা। সে অবশ্য বায়ার্ন ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যাচ্ছে।


অস্ট্রিয়ার দলটি খাতায়-কলমে তেমন শক্তিশালী নয়। ফলে সাফল্যের আশা খুব একটা নেই। এর আগে কোনওদিন ইউরোতে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি অস্ট্রিয়া। ১৯৯০ বিশ্বকাপের পর থেকে বড় কোনও প্রতিযোগিতায় জয় নেই দলটির। ফলে আত্মবিশ্বাস যেমন থাকার কথা নয়, তেমনই চাপও কিছু নেই। ১৩ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে নর্থ ম্যাসিডোনিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে অস্ট্রিয়া। তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ হল্যান্ডের বিরুদ্ধে এবং গ্রুপের শেষ ম্যাচ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে।


ইউরোর লড়াই শুরু হওয়ার আগেই রাজনৈতিক বিতর্কে জড়িয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার আপত্তিতে ইউক্রেনের নতুন জার্সি থেকে ‘রাজনৈতিক স্লোগান’ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে উয়েফা। তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিতর্ক যতই থাকুক না, কেন আমার আশা, মাঠে লড়াই করবে ইউক্রেন। দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই ডায়নামো কিয়েভ ও শাখতারের। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির মিডফিল্ডার অলেকসান্দর জিনচেনকোও ইউক্রেনের দলে আছে। এর আগে দু’বার ইউরোতে খেললেও, কোনওদিন গ্রুপ পর্যায় টপকাতে পারেনি ইউক্রেন। তবে ২০০৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল তারা। ফলে এবারের ইউরোতে অঘটন ঘটাতেই পারে ইউক্রেন।


এবারের ইউরোর গ্রুপ সি-তে খাতায়-কলমে সবচেয়ে দুর্বল দল নর্থ ম্যাসিডোনিয়া। তারা এবারই প্রথম ইউরোর যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে সম্প্রতি দলটির পারফরম্যান্স বেশ ভাল। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে জার্মানিকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় নর্থ ম্যাসিডোনিয়া। ফলে তারা ইউরোতে চমক দিতেই পারে। হল্যান্ড ছাড়া গ্রুপ সি-র বাকি দুই দলের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই নর্থ ম্যাসিডোনিয়া। ফলে প্রথমবার ইউরোতে যোগ দিয়েই নক-আউট পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। আমি এই দলটাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী। আশা করি দলটা চমক দেবে। ফুটবলপ্রেমীদের মতোই আমিও খেলা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছি।


                                                                                                                                                      *সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন- সৌম্য গঙ্গোপাধ্যায়