রোম: আজ ভারতীয় সময় মধ্যরাত থেকে শুরু ইউরো কাপ। করোনা আবহে গত বছর ইউরোপের সেরা ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সেই কারণে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে এই প্রতিযোগিতা। আজ ভারতীয় সময় অনুযায়ী রাত সাড়ে বারোটায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালি ও তুরস্ক। ঘরের মাঠেই খেলবে ইতালি। রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোয় ২৫ শতাংশ দর্শকাসনের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। ফলে গ্যালারিতে থাকবেন প্রায় ১৬ হাজার দর্শক।


প্রথম ম্যাচের আগে ইতালির ডিফেন্ডার লিওনার্দো বনবুচ্চি আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেছেন,  ‘এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যেই আমরা মাঠে নামছি। অন্য দলগুলির বেশি অভিজ্ঞতা থাকতে পারে, কিন্তু আমরা যে কোনও দলের মোকাবিলা করতে তৈরি। আমাদের দলে রোমেলু লুকাকু বা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো নেই। দলই আমাদের শক্তি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম। ১৫,০০০ দর্শক জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন, এই অভিজ্ঞতার জন্য আর তর সইছে না। স্টেডিয়ামের মধ্যে দর্শকসহ ফুটবল অন্যরকম খেলা।’


রবার্তো মানচিনি কোচ হওয়ার পর থেকে দুরন্ত ছন্দে ইতালি। গত আটটি ম্যাচে কোনও গোল খায়নি আজুরিরা। তারা জিতেছে প্রতিটি ম্যাচ। গত ৩২টি ম্যাচের মধ্যে ২০টিতেই গোল খায়নি ইতালি। ইউরো কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ১০টি ম্যাচই জিতেছে আজুরিরা। তারা ২৭টি ম্যাচ অপরাজিত থেকে এবারের ইউরো অভিযান শুরু করছে। অভিজ্ঞ গোলকিপার জিয়ানলুইগি বুফোঁ অবসর নিলেও, ২২ বছর বয়সি গোলকিপার জিয়ানলুইগি দোন্নারুম্মা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন। বনুচ্চি ও ইতালির অধিনায়ক জিওর্জিও চিয়েলিনি রক্ষণে ভরসা দিচ্ছেন। ইতালির রক্ষণ বরাবরই ভাল। এবারের দলও ব্যতিক্রম নয়। রক্ষণের পাশাপাশি মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগও বেশ ভাল। সেই কারণেই ইতালি এবার এত আত্মবিশ্বাসী।


এবারের ইউরোর জন্য ইতালির ঘোষিত দলে তিন গোলকিপার জিয়ানলুইগি দোন্নারুম্মা, অ্যালেক্স মেরেত ও সালভাতোর সিরিগু। রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব থাকছে ফ্রান্সেসকো অ্যাকারবি, আলেসান্দ্রো বাস্তোনি, লিওনার্দো বনুচ্চি, জিওর্জিও চিয়েলিনি, জিওভান্নি দি লরেঞ্জো, এমার্সন, আলেসান্দ্রো ফ্লোরেঞ্জি, লিওনার্দো স্পিনাজ্জোলা ও রাফায়েল তোলোই। আজুরিদের মিডফিল্ডে আছেন নিকোলো ব্যারেলা, ব্রায়ান ক্রিস্তান্তে, জর্জিনহো, ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি, লরেঞ্জো পেলিগ্রিনি, স্তেফানো সেন্সি ও মার্কো ভেরাত্তি। আক্রমণভাগে থাকছেন আন্দ্রিয়া বেলোত্তি, ডমেনিকো বেরার্দি, ফেডেরিকো বার্নার্ডেচি, ফেডেরিকো চিয়েসা, সিরো ইম্মোবিল, লরেঞ্জো ইনসিগনে ও জিয়াকোমো রাসপাদোরি।


ধারে-ভারে ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইতালির চেয়ে কয়েক যোজন পিছিয়ে থাকলেও, মাঠে নামার আগে হার মানতে নারাজ তুরস্ক। কোচ সেনল গানস বলেছেন, ‘সব প্রতিযোগিতারই প্রথম ম্যাচে কিছু না কিছু চমকপ্রদ ঘটনা দেখা যায়। আমাদের আশা, আমরাও সবাইকে চমকে দিতে পারব।’ 


ইতালির মতো না হলেও, তুরস্কের সাম্প্রতিক ফর্মও বেশ ভাল। ইউরোর যোগ্যতা অর্জন পর্বের একটি ম্যাচে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেওয়ার পর অন্য ম্যাচে ড্র করে তুরস্ক। মাত্র একটি ম্যাচে হেরে গ্রুপ এইচে দ্বিতীয় স্থানে থেকে ইউরোর যোগ্যতা অর্জন করে তুরস্ক। দলের অন্যতম ভরসা রক্ষণ। ইউরোর যোগ্যতা অর্জন পর্বে তারা মাত্র তিনটি গোল হজম করে। দলের অন্যতম ভরসা মেরি দেমিরাল, কাগলার সয়োনকু, বুরাক ইলমাজ। হাকান ক্যালহানোগলুর সেট-পিস এবারের ইউরোতে দলের অন্যতম অস্ত্র হতে চলেছে।


ইউরোর জন্য় ঘোষিত তুরস্ক দলের তিন গোলকিপার আলতে বেইন্দির, মার্ত গানুক, উগুরকান সাকির। রক্ষণে আছেন জেকি সেলিক, কাগলার সয়োনকু, কান আইহান, মেরি দেমিরাল, মার্ত মালদার, ওজান কাবাক, রিদভান ইলমাজ ও উমুত মেরাস। মিডফিল্ডে আছেন ইউসুফ ইয়াজিচি, দরুখান তোকোজ, ইরফান কান কাভেচি, ওকে ইয়োকুসলু, ওরকান ককসু, ওজান তুফান, তাইলান অ্যানাতালিয়ালি ও হাকান ক্যালহানোগলু। তুরস্কের আক্রমণভাগে আছেন বুরাক ইলমাজ, সেনগিজ আন্ডার, ইনেস উনাল, আবদুলকাদির ওমুর, কেরিম আকতারকোগলু, হালিল ইব্রাহিম দেরভিসোগলু ও কেনান কারাম্যান। 


গত বছর করোনা সংক্রমণ ও মৃত্য়ুর নিরিখে অন্য়ান্য় দেশগুলির চেয়ে অনেকটাই খারাপ অবস্থায় ছিল ইতালি। কিন্তু এখন অবস্থা অনেক ভাল। স্থানীয় মানুষজন বলছেন, দেশের ৬০ শতাংশ মানুষেরই করোনার টিকা নেওয়া হয়েছে। ১৮ বছরের কমবয়সিদেরও টিকাকরণ শুরু হয়েছে। ফলে এখন আর কারও মধ্যেই করোনা নিয়ে আতঙ্ক নেই। আগামী মাস থেকে আর মাস্ক পরারও দরকার হবে না। ইউরো কাপ চলাকালীন ইতালিতেই গ্যালারিতে সবচেয়ে বেশি দর্শক দেখা যাবে। তবে দর্শকদের মাঠে প্রবেশ করার জন্য তিনটি নথির মধ্যে যে কোনও একটি দেখাতে হবে। এই নথিগুলি হল, ইতালি সরকারের দেওয়া টিকাকরণের শংসাপত্র, ইতালির স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া শংসাপত্র যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গত ৬ মাসের মধ্যে করোনামুক্ত হয়েছেন বা খেলা শুরু হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে করা করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ রিপোর্ট। মাঠে ঢোকার সময় সব দর্শকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হবে৷ কারও শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা গেলে তাঁকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷