কলকাতা: দরজায় কড়া নাড়ছে ইউরো কাপ। শুক্রবারই বোধন। এবার আমার দেশ স্পেন রয়েছে গ্রুপ "ই"-তে। সুইডেন, পোল্যান্ড ও স্লোভাকিয়ার সঙ্গে। কেমন হয়েছে এবারের স্পেন দল? চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা কীরকম?
স্পেন দলকে নিয়ে এবার প্রত্যাশা বেশ কম। যেটা একদিক থেকে আশীর্বাদ হতে পারে। বিশ্ব ফুটবলে আমরা বহুবার দেখেছি যে, প্রচারের আলোয় না থাকলে যে কোনও দলের প্লেয়াররা অনেক চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামতে পারে। ফেভারিট হওয়া মানে মাঠে নামামাত্র সংবাদমাধ্যমের চাপ। আমরা এ জিনিস আগেও দেখেছি। গতবারের টুর্নামেন্টে বেলজিয়ামের কথাই ধরুন। অনেক প্রত্যাশা ছিল ওদের ঘিরে। খাতায় কলমে দুর্দান্ত সমস্ত ফুটবলার। অথচ চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। স্পেনের ক্ষেত্রেও ব্য়াপারটা একইরকম ছিল। সকলেই ভেবেছিলেন ২০০৮ ও ২০১২ সালের ইউরো বা ২০১০ সালের বিশ্বকাপের মতো খেলবে স্পেনীয়রা। ওই তিনটি টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন।
তবে দীর্ঘদিন ধরে ওইরকম পারফরম্যান্স টানা করে যাওয়া মুশকিল। সব দলেরই একটা সন্ধিক্ষণ থাকে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে জার্মানিকেও সেই সন্ধিক্ষণ সামলাতে হয়েছে। নতুন ঘরানা, নতুন খেলোয়াড়দের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগে। তরুণদের সামনে নিজেদের জাত চেনানোর দারুণ একটা সুযোগ। এই গ্রুপের অনেক ফুটবলারই অনূর্ধ্ব ২১, অনূর্ধ্ব ২৩ পর্যায় থেকে একে অপরকে চেনে। যে ব্যাপারটা ওদের সাফল্যের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
এই মুহূর্তে হয়তো স্পেনকে ফেভারিট মনে হচ্ছে না। তবে আমার দলটিকে বেশ ভাল লাগছে। আমার মতে বর্তমান স্পেন দলে অনেক ভাল ফুটবলার রয়েছে। মাঝমাঠে থিয়াগো স্পেনের সাফল্যের চাবিকাঠি হতে পারে। ও এমন একজন ফুটবলার যে কোণঠাসা অবস্থা থেকেও ম্য়াচ ঘুরিয়ে দিতে পারে। জেরার মোরেনোর মতো স্ট্রাইকার রয়েছে যে এক সেকেন্ডে খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে। এই মরসুমে দুর্দান্ত ফর্মে ছিল ও।
হয়তো এই মুহূর্তে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াম বা জার্মানির মতো শক্তিশালী দেখাচ্ছে না স্পেন দলকে। কারণ বাকি দলগুলি তারকা ফুটবলার থাকার নিরিখে অনেক এগিয়ে। তবে এই ধরনের টুর্নামেন্টে বড় নামের চেয়েও দলের সংহতি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।
এবার স্পেন দলে নেই রিয়াল মাদ্রিদের অধিনায়ক সের্জিও র্যামোস। চোট আঘাতে গত কয়েক মাস খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে ও। আমার মনে হয় কোচ লুই এনরিকে-কে কিছু পরিবর্তন করতে হবে। ভিয়ারিয়ালের হয়ে গত মরসুমটা ভাল গিয়েছে পও তোরেসের। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে দুর্দান্ত কেটেছে লাপোর্তের। স্পেন দলে এমন ফুটবলার রয়েছে যারা একশো শতাংশ দিতে পারে আর হয়তো র্যামোস এখন একশো শতাংশ দিতে পারত না। মানছি ওর নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা দলের কাছে ইতিবাচক হতো তবে আমার মতে সামনের দিকে তাকানোর সময় হয়েছে। দানি কার্ভাজ়ালেরও চোট রয়েছে। লুকাস ভাসকেজ় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেনি। ইসকোও খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি সম্প্রতি।
এবারের স্পেন দলে রিয়াল মাদ্রিদের কোনও ফুটবলার না থাকা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। তবে আমি এনরিকে-কে সেই বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলার সময় থেকে চিনি। ও খেলাটার প্রতি ভীষণ সৎ। ও খুব সোজাসাপ্টা মানুষ। কঠোর পরিশ্রমী। আমি এটুকু নিশ্চিত করে বলতে পারি। ও শুধু দলের কথা ভাবে। এভাবে দেখেই না যে, ও আমি তো বার্সেলোনার ভক্ত। টুর্নামেন্টে ভাল খেলে জেতার জন্য যেটা প্রয়োজন মনে করেছে সেটাই করেছে। খোদ রিয়াল মাদ্রিদই বা কজন স্পেনের ফুটবলারের ওপর ভরসা রেখেছে! ও নিশ্চয়ই দেখেছে যে ও যে ঘরানার ফুটবল খেলতে চাইছে রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান দলের কোনও ফুটবলার তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে না।
একটা প্রশ্ন খুব ঘোরাফেরা করছে। ৯ নম্বর প্লেয়ারের ভূমিকায় কাকে দেখা যাবে? আলভারো মোরাতা নাকি ভিয়ারিয়ালের মোরেনো? আমার মতে ফর্মের বিচারে জেরার মোরেনোর খেলা উচিত। জানি না ওকে কোন ভূমিকায় দেখা যাবে। কারণ ও উইঙ্গার হিসাবে খেলতে পারে আবার দ্বিতীয় স্ট্রাইকারের কাজও করতে পারে। কীভাবে কোন পোজিশনে থাকতে হয়, কীভাবে টার্ন করতে হয়, ও সেটা জানে। ওর বক্সের আশেপাশে থাকা উচিত কারণ এবারের ইউরোতে ও সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে একজন হিসাবে নামছে।
ইউরো শুরুর ঠিক মুখে স্পেন শিবিরে করোনা হানা দিয়েছে। মঙ্গলবার সুইডেনের বিরুদ্ধে স্পেনের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারবে সের্জিও বাস্কেতস। উদ্বেগ রয়েছে আরও কয়েকজনকে নিয়ে। তবে আমার মনে হয় পরিবর্ত হিসাবে তারকাদের দিকে না ঝুঁকে তরুণদের সুযোগ দেওয়া উচিত। যে সমস্ত প্লেয়ার ছুটি কাটাচ্ছে, তাদের ডেকে আনার কোনও মানে হয় না।
তবে মাঝমাঠের শক্তিতে স্পেন অন্য দলগুলির চেয়ে একটু পিছিয়ে। সেটা একটা চিন্তার বিষয়। তবে আমাদের দলে সেটা কাটিয়ে ওঠার মতো প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে।
*সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: সন্দীপ সরকার