দোহা:  বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশকে ২-০ গোলে হারিয়ে দিল ভারত। ভারতের হয়ে দু’টি গোলই করেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। জাতীয় দলের হয়ে ৭৪টি গোল হয়ে গেল সুনীলের। বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে প্রথম পর্বের ম্যাচ ১-১ ড্র হয়েছিল। করোনা আবহে ফিরতি পর্বের ম্যাচ পিছিয়ে যায়। ঢাকার বদলে বাংলাদেশের হোম ম্যাচ হল কাতারের রাজধানী দোহায়। এই ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত।


এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ভারতের আধিপত্য ছিল। একের পর এক আক্রমণ করছিলেন বিপীন সিংহ, মনবীর সিংহরা। মনবীর একাধিক সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে প্রথমার্ধেই গোল পেয়ে যেত পারত ভারত। রেফারির সিদ্ধান্তও ভারতের বিপক্ষে গিয়েছে। এর ফলেই প্রথমার্ধে গোল পায়নি ভারত। বাংলাদেশ মাঝেমধ্যে আক্রমণের চেষ্টা করলেও, তাদের কোনও আক্রমণই দানা বাঁধেনি।


আজ ম্যাচের শুরু থেকেই কিছুটা পা চালিয়ে খেলতে থাকেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। দ্বিতীয় মিনিটেই ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজকে পিছন থেকে অবৈধভাবে ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশের রাকিব। ২৯ মিনিটে পেনাল্টি পাওয়া উচিত ছিল ভারতের। বক্সের মধ্যে অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর উদ্দেশে ক্রস ভাসান উদান্তা সিংহ। সুনীলকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন বাংলাদেশের তারিক ও রিয়াদুল। কিন্তু সবাইকে অবাক করে হ্যান্ডবলের সিদ্ধান্তের কথা জানান রেফারি। সুনীলের হাত বলের ধারেকাছেও ছিল না। রেফারি কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলেন, সেটা বোঝা গেল না। এরপরেই সুরেশ সিংহকে অবৈধভাবে ট্যাকল কররা জন্য বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রহমত।


ভারত আজ গোল করার প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ম্যাচের ১৬ মিনিটের মাথায়। মনবীরকে ফাঁকায় দুর্দান্ত থ্রু দেন ব্র্যান্ডন। সেই সময় মনবীরের আশেপাশে বাংলাদেশের কোনও ডিফেন্ডার ছিলেন না। গোলকিপারকে একা পেয়েও শট নেওয়ার বদলে ড্রিবল করার পর মাইনাস করেন মনবীর। ফলে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয়। এরপর ৩ মিনিটে গোল করার আরও একটি সুযোগ পায় ভারত। কিন্তু এবার ব্র্যান্ডনের কর্নার থেকে চিঙ্গলেসানা সিংহের হেড গোললাইন থেকে সেভ করে দেন রিয়াদুল। এরপর কর্নার থেকে সুনীলের হেড বারের উপর দিয়ে চলে যায়।


দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার পরেও ভারতের আধিপত্য বজায় ছিল। জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জোড়া পরিবর্তন করেন ভারতের কোচ ইগর স্টিম্যাচ। তিনি উদান্তা ও বিপীনের জায়গায় মাঠে নামান ইয়াসির মহম্মদ ও আশিক কুরুনিয়ানকে। এরপর ৫৯ মিনিটে মনবীরের জায়গায় মাঠে নামেন লিস্টন কোলাসো। জয়ের লক্ষ্যে আক্রমণে গতে বাড়ায় ভারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোল আসছিল না। এরই মধ্যে ৬২ মিনিটে রাইট উইংয়ে সুরেশের হাত ধরে টেনে ফেলে দিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশের বিপ্লো। তাঁর আরও অনেক আগেই হলুদ কার্ড দেখা উচিত ছিল। কিন্তু রেফারির বদান্যতায় তিনি বেঁচে যান। এবার অবশ্য হলুদ কার্ড না দেখিয়ে রেফারির কোনও উপায় ছিল না। ফ্রি-কিক থেকে সুনীলের হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। ৭০ মিনিটে গ্ল্যান মার্টিনসের মাথায় পা দিয়ে আঘাত করেন রাকিব। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখাননি রেফারি। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে শুভাশিস বসুর হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। পরের মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন সুরেশ। অবশেষে ৭৯ মিনিটে গোল আসে। লেফট উইং থেকে আশিকের ক্রসে মাপা হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন সুনীল। গোল হজম করার পরেই মাথা গরম করে ব্র্যান্ডনকে বল ছাড়া ট্যাকল করে হলুদ কার্ড দেখেন বাংলাদেশের অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া, যিনি কলকাতার মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে আই লিগে খেলে গিয়েছেন।


৪ মিনিট ইনজুরি টাইম দেন রেফারি। বাংলাদেশের সমর্থকরা আশা করছিলেন, তাঁদের দল হয়তো গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। কিন্তু ভারতের অধিনায়ক নিজের দ্বিতীয় গোল করার জন্য এই সময়টাকেই বেছে নেন। সুরেশের পাস থেকে দুর্দান্ত প্লেসিংয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন সুনীল। ফলে ভারতের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। 


বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ম্যাচে জয় পাওয়ার ফলে ২০২৩ এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করার আশা জিইয়ে রাখল ভারত। ১৫ জুন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ জিততে পারলে এশিয়ান কাপে খেলা হয়তো নিশ্চিত হয়ে যাবে। আফগানদের মুখোমুখি হওয়ার আগে বাংলাদেশকে সহজেই হারিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিলেন সুনীলরা। 


কলকাতার ম্যাচে বাংলাদেশ বেশ ভাল খেলেছিল। প্রথমে গোল করে তারা এগিয়েও গিয়েছিল। এরপর একাধিক সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গোল হয়নি। শেষমুহূর্তে ভারতের হয়ে গোল শোধ করেন আদিল খান। আজ অবশ্য সেই ম্যাচের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়নি। বরং ভারতেরই পূর্ণ আধিপত্য ছিল। সহজ জয়ই পেলেন সুনীলরা। বাংলাদেশ তেমন কোনও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি।