কলকাতা: আইএসএলের এই মরশুমে (ISL 2024-25) প্রথমবার যখন হায়দরাবাদের মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal vs Hyderabad FC), সেই সময়ও লাল হলুদের সামনে লিগে জয়ের হ্যাটট্রিক হাঁকানোর সুযোগ ছিল। সেবার হয়নি। ১-১ গোলে ম্যাচ ড্র হয়। বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের একবার এমনই এক সম্ভাবনা নিয়ে ঘরের মাঠে নেমেছিলেন রাফায়েল মেসি বৌলিরা। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কিন্তু ইস্টবেঙ্গল সুযোগ হাতছাড়া হতে দিল না। 


নিজামের শহরের দলের বিরুদ্ধে ২-০ গোলে জয় পেল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচে একটি আত্মঘাতী গোলের পাশাপাশি ইনজুরি টাইমে মেসির গোলে লাল হলুদের জয় সুনিশ্চিত হয়। এই জয়ের সুবাদে তৈরি হল ইতিহাস। এই প্রথমবার আইএসএলে লাল হলুদ নাগাড়ে তিনটি ম্যাচে জয় পেল। পাশাপাশি এই জয়ের সুবাদে সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও, অস্কার ব্রুজোনের দল এখনও আইএসএলের প্লে-অফের দৌড়ে টিকে থাকল।


এ দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ৮৫ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচের ফল গোলশূন্য থাকার পর ৮৬ মিনিটের মাথায় মনোজ মহম্মদের আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। এর পরে সংযুক্ত সময়ে একক প্রচেষ্টায় গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন ক্যামেরুন থেকে আসা ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলি।


এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবলের আট নম্বরে উঠে সেরা ছয়ে যাওয়ার আশা জিইয়ে রাখল লাল-হলুদ ব্রিগেড। যদিও তাদের সেই রাস্তা এখনও বেশ কঠিন। ছ’নম্বরে থাকা মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে তাদের এখন পাঁচ পয়েন্টের দূরত্ব। ইস্টবেঙ্গল অবশ্য মুম্বইয়ের চেয়ে একটি ম্যাচ বেশি খেলে ফেলেছে। তবে সেরা ছয়ে ঢুকতে এখন তাদের যতটুকু করার, তারা তা করে চলেছে।

শেষ দুই ম্যাচ বেশ কঠিন, বেঙ্গালুরু এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। তাদের হারাতে পারলে সেরা ছয়ের দরজা খুললেও খুলতে পারে মশালবাহিনী। কিন্তু তখনও অন্য ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করতে হবে তাদের। তবে শেষ দুই ম্যাচের মধ্যে একটিতে হেরে গেলে এই দৌড় থেকে ছিটকে যাবে তারা।

এর আগে পাঞ্জাব এফসি ও মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে জেতে তারা। এ বার হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক করল অস্কার ব্রুজোনের দল। জয়ের হ্যাটট্রিকের সুযোগ তারা প্রথম লিগেও পেয়েছিল। কিন্তু এই হায়দরাবাদ এফসি-ই তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ করতে দেয়নি। সেই ম্যাচে যিনি ইস্টবেঙ্গলের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, সেই ডিফেন্ডার মনোজ মহম্মদই এ দিন আত্মঘাতী গোল করে ইস্টবেঙ্গলকে জয়ের দিকে এগিয়ে দেন।

এ দিন ম্যাচের ৮৫ মিনিট পর্যন্ত এক ঝাঁক সুযোগ নষ্ট করেন ইস্টবেঙ্গলের তারকারা। এমনকী তখন পর্যন্ত একটিও শট তারা প্রতিপক্ষের গোলের লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। শেষ দশ মিনিটে তাদের দু’টি শট লক্ষ্যে ছিল এবং দু’টি থেকেই গোল পায় তারা। সব মিলিয়ে সারা ম্যাচে ১৩টি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। ফাইনাল থার্ডে ৬৭ বার প্রবেশ করে এবং প্রতিপক্ষের বক্সে ২৫ বার বল ছোঁয় কলকাতার দল। কিন্তু প্রথম গোল পেতে তাদের ৮৬ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় শুধুমাত্র সঠিক ফিনিশিংয়ের অভাবে।

এ দিন শুরুর ১০ মিনিটে বেশ চাপে ছিল ইস্টবেঙ্গল। তবে নিশু কুমার একটি দ্রুত প্রতি আক্রমণের মাধ্যমে হোম টিমকে খেলায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। বাঁ দিক থেকে আক্রমণের শেষ প্রান্তে রাফায়েল মেসি বৌলির জন্য একটি কার্যকরী পাস বাড়ান তিনি। তাঁর উল্টো দিকে থাকা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের উদ্দেশ্যে বল বাড়াতে পারতেন মেসি। তবে তাঁর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

হায়দরাবাদ এফসি-ও গোলের মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ২০ মিনিটের মাথায় আয়ূষ অধিকারীর এক নিখুঁত পাসের মাধ্যমে পাল্টা আক্রমণ চালায়। একটি উড়ন্ত বলে পুরো ইস্টবেঙ্গল এফসি রক্ষণভাগ ভেদ করে তা ১৮-গজ বক্সের ডান দিকে থাকা এডমিলসন কোরেয়ার পায়ে পৌঁছে দেন আয়ূষ। কোরেয়া এগিয়ে গেলেও আনোয়ার আলির তৎপরতায় তিনি বক্সের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন, যেখান থেকে তাঁর শট যথেষ্ট নিখুঁত ছিল না। সহজেই তা রুখে দেন গোলকিপার প্রভসুখন গিল।

মেসি বৌলি ও দিয়ামান্তাকসের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব ৫৪তম মিনিটেও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন মেসি বৌলি ডান উইং দিয়ে হায়দরাবাদ এফসি-র রক্ষণভাগকে বেশ চাপে ফেলে দেয়। ইস্টবেঙ্গল এফসি-র আক্রমণাত্মক এই জুটি প্রতিপক্ষের গোল এরিয়ায় ঢুকে পড়লেও এবারও গ্রিক ফরোয়ার্ডের উদ্দেশ্যে বল না বাড়িয়ে এককভাবে শট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মেসি। কিন্তু তাঁর শট বাঁ দিকের পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অরক্ষিত দিমিকে পাস বাড়ালে হয়তো তখনই গোল পেয়ে যেত ইস্টবেঙ্গল।

হেক্টর ইউস্তের পরিবর্তে নামা রিচার্ড সেলিস ৬০ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে বল ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত গতিতে হায়দরাবাদ এফসি বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তিনি ১৮-গজ বক্সের মাঝখানে থাকা নাওরেম মহেশ সিংকে বল বাড়ান। তবে মহেশের শট বাঁ পোস্টের বাইরে চলে যায়। ঠাণ্ডা মাথায় গোলে শট নেওয়ার জন্য তাঁর কাছে পর্যাপ্ত সময় ও জায়গা দুইই ছিল। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন তিনি।

ম্যাচের শেষ দশ মিনিটের দুটি ঘটনাই ম্যাচের ছবিটা পাল্টে দেয়। ৮৬ মিনিটের মাথায় ইস্টবেঙ্গল এফসি-র ডেভিড লালনসাঙ্গার কর্নার হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে পিছন দিকে ফ্লিক করে নিজের গোলেই বল পাঠিয়ে দেন মানোজ মহম্মদ। ইস্টবেঙ্গল আক্রমণে বারবার লোক বাড়িয়ে তোলায় হায়দরাবাদ এফসি বেশ চাপে পড়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের সং মেসি বৌলির একার চেষ্টা জয় নিশ্চিত করার গোলটি চলে আসে। সেন্টারলাইনের ওপার থেকে সউল ক্রেসপোর দেওয়া বল নিয়ে দ্রুত অনেকটা দৌড়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি বৌলি এবং দুর্দান্ত একটি টোকায় গোলকিপারকে পরাস্ত করে বাঁদিকের নীচের কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন এবং দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন।


এ দিন দলের স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপোর পারফরম্যান্সও ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁর ৪১টির মধ্যে ৩২টি পাস সফল ছিল। তিনি একবার বল ক্লিয়ার করেন, দু’টি ট্যাকল করেন, তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন, ছ’টি ক্রস দেন এবং মেসির গোলে অ্যাসিস্টও করেন। তাঁদের এই রকম পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে সেরা ছয়ের দৌড় যে লিগের শেষবেলায় জমে যাবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: প্রতিপক্ষ বদলায়, বদলায় না ভাগ্য নাগাড়ে পঞ্চম হার মহামেডানের, প্লে-অফের একধাপ কাছে জামশেদপুর