নয়াদিল্লি: টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ী তাঁর দল। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জয়ী, একটিতে ড্র। মাত্র একটিতে হার। এই পরিসংখ্যানগুলি ক্রমশ রোমাঞ্চিত করে তুলছে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ অস্কার ব্রুজোনকে (Oscar Bruzon)। এখন নিশ্চয়ই তাঁর আফসোস হচ্ছে, এই সংখ্যাগুলো তিনি যদি আগে পেতেন, তা হলে লিগের শেষ পর্বে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে এই জায়গায় থাকতে হত না।
শনিবার নয়াদিল্লিতে পাঞ্জাব এফসি-কে ৩-১-এ হারিয়ে পয়েন্ট টেবলের নয় নম্বরে উঠে এল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal vs Punjab FC)। এই নিয়ে টানা তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচে অপরাজিত থেকে আপাতত ২১ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের নয় নম্বরে রয়েছে তারা, যেখানে পাঞ্জাব এফসি সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলে সমান পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় ১১ নম্বরে নেমে গিয়েছে।
এ দিন ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের গোলে এগিয়ে যায় লাল-হলুদ বাহিনী। ৪৭ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে ব্যবধান বাড়ান নাওরেম মহেশ সিং। মহেশের গোলের সাত মিনিট পর তৃতীয় গোল করে দলকে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে দেন ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা। ৬২ মিনিটের মাথায় পাঞ্জাবের আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নরবের্তো ভিদাল একটি গোল শোধ করলেও আর কোনও গোল করতে পারেনি লুকা মাজেনরা।
চলতি লিগের সপ্তম জয়ের পর লাল-হলুদ কোচ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের মনে হচ্ছে দলটা এখন ক্রমশ সঙ্ঘবদ্ধ হচ্ছে, মাঠে ইতিবাচক অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে। যা এই মরশুমের চূড়ান্ত ও কঠিন পর্বের জন্য অবশ্যই বাড়তি প্রেরণা দেবে। একটা দল তখন স্থিতিশীল হয়, যখন তারা দল হিসেবে খেলে, যখন তাদের জয়ের মানসিকতা থাকে, দৃঢ় সংকল্প থাকে, যখন ফুটবলাররা দলের হয়ে খেলা উপভোগ করে, যখন তাদের স্পষ্ট ধারণা থাকে যে তাদের কী করতে হবে, কেমন ফর্মেশনে খেলতে হবে, কখন প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে হবে, কীভাবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা খুঁজে বের করতে হবে। এই পর্যায়ে তখন প্রত্যেক খেলোয়াড় ধীরে ধীরে তাদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়”।
লিগ টেবলে যে দলকে আরও কয়েক ধাপ তুলতে চান তিনি, তা গত সপ্তাহে ডার্বি জয়ের পরেই বলেছিলেন অস্কার। সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় তিনি বলেন, “এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই, কিন্তু আইএসএল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বলে আসছি, লিগের শেষ তিন দলের মধ্যে থাকা মেনে নিতে চাই না। আমরা টেবলে ওপরের দিকে উঠতে চাই। আজ আইএসএলের শেষ তিনটি ম্যাচের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম পদক্ষেপ ছিল আমাদের”।
এ দিন ম্যাচের ১৫ মিনিটের মাথায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রিক ফরোয়ার্ড দিয়ামান্তাকস বাঁ দিক থেকে জোরালো কোণাকুনি শট নেন, যা গোলরক্ষক রবি কুমারের পায়ের ফাঁক দিয়ে গলে জালে জড়িয়ে যায়। আট ম্যাচে গোলহীন থাকার পর এ দিনই গোলে ফিরলেন দিয়ামান্তাকস। ২১ ডিসেম্বর জামশেদপুর এফসির বিপক্ষে ১-০-য় জেতা ম্যাচে শেষ গোলটি করেছিলেন তিনি।
দলের এক নম্বর ফরোয়ার্ডের গোলে ফেরা নিয়ে কোচ অস্কার বলেন, “আজ বাঁ দিক থেকে অনেক সুযোগ তৈরি হচ্ছিল এবং দিমি আত্মবিশ্বাসী ছিল যে বল ঠিক তার উপযুক্ত জায়গায় আসবে। আসল কথা, যদি ও একটা গোল করতে পারে, তা হলে দ্বিতীয়টাও করতে পারত। তবে আজ ও অনেক সতেজ ছিল, অনেক শক্তিশালী দেখাচ্ছিল ওকে, বল ধরে রাখছিল, ব্রেকিং রান তৈরি করছিল এবং দলের সবাইকে সাহায্য করছিল”।
তাদের নবাগত বিদেশী ফরোয়ার্ড ক্যামেরুনের রাফায়েল মেসি বৌলির ভূয়ষী প্রশংসা করে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “আমাদের দলে কিছু ক্ষিপ্র খেলোয়াড়ের দরকার ছিল। এমন খেলোয়াড় যারা সামনে থেকে বল ধরে রাখতে পারবে, আত্মবিশ্বাস জোগাতে পারবে, সঠিক মুহূর্তগুলো বুঝতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী খেলতে পারবে। মেসি আমাদের দলে যোগ দেওয়ার মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে আমাদের দলের কার্যকরী হয়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর আগে আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করছিলাম, কিন্তু গোল করতে পারছিলাম না। তবে আমি বহুবার বলেছি যে আমাদের দলে ফিনিশিং-এর সমস্যা ছিল। কিন্তু শেষ দুটো ম্যাচে আমরা তিন গোল করেছি”।
এ পর্যন্ত তিনটি ম্যাচে ন’টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন মেসি। আটটি গোলের পাস দিয়েছেন, প্রতিপক্ষের বক্সে ১৪ বার বল ধরেছেন ও একটি গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন। দলের ফিনিশিংয়ে উন্নতির জন্য মূলত মেসিকেই কৃতিত্ব দিয়ে অস্কার বলেন, “শুধুমাত্র ওর গোল করা ও সুযোগ তৈরি করার দক্ষতাই নয়, ও আমাদের ফুটবলারদের মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে, তার ফলে তারা আরও বেশি করে বক্সে ঢুকতে পারছে এবং সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে”।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: টিম টিম করে জ্বলছে প্লে-অফে পৌঁছনোর আশার আলো, পাঞ্জাবকে তাদেরই ঘরের মাঠে দুরমুশ করল ইস্টবেঙ্গল