কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ইতিহাসে ভেনেজুয়েলাকে উজ্জ্বল করে তোলার লক্ষ্য নিয়েই ভারতে এসেছেন ইস্টবেঙ্গল এফসি-র নতুন বিদেশি ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস। এ দেশে আসার আগে যে তিনি ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন ভেনেজুয়েলা থেকে আসা আর এক ফুটবলার মিকুর কাছ থেকে, তা জানাতেও ভোলেননি।
ভেনেজুয়েলার জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিসকে সম্প্রতি চলতি মরশুমের বাকি অংশের জন্য নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত অক্টোবরে ভেনেজুয়েলার প্রথম ডিভিশনের দল আকাদেমিয়া পুয়ের্তো ক্যাবেলোর হয়ে শেষ মাঠে নেমেছেন সেলিস। সেন্টার ফরোয়ার্ডের ভূমিকা ছাড়াও লেফট উইঙ্গার হিসেবেও খেলেন তিনি।
ভেনেজুয়েলার শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলি যেমন আতলেতিকো ভেনেজুয়েলা সিএফ, দিপোর্তিভো জেবিএল, কারাকাস এফসি এবং আকাদেমিয়া পুয়ের্তো ক্যাবেলো ছাড়াও কলম্বিয়ার মিলিওনারিওস এফসি এবং স্লোভাকিয়ার এফকে সেনিকা-র হয়েও খেলেছেন। এছাড়া, তিনি ভেনেজুয়েলা জাতীয় দলের হয়ে ফিফা বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব এবং কোপা আমেরিকাতেও অংশ নিয়েছেন।
বুধবার কলকাতায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সেলিস স্প্যানিশে জানান, 'ভারতীয় ফুটবল নিয়ে কোনও ধারণা ছিল না আমার। জানুয়ারি থেকে জুন আমি মিকুর সঙ্গে খেলেছি। ওর কাছ থেকে ভারতীয় ফুটবল নিয়ে অনেক কিছু শুনেছি। যখন থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছি, তখন থেকে আরও বেশি খোঁজখবর নিয়েছি। এ দেশের ফুটবল নিয়ে আগ্রহও জন্মেছে'। দলের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোন এ দিন সেলিসের দোভাষীর ভূমিকা পালন করেন।
বেঙ্গালুরু এফসি-র প্রাক্তন ফরোয়ার্ড মিকু ফেদর, যিনি গত বছর জুন পর্যন্ত পুয়ের্তো ক্যাবেলো ক্লাবের হয়ে খেলেছেন, তাঁর সঙ্গেই খেলতেন সেলিস। মিকু ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বেঙ্গালুরু এফসি-র হয়ে খেলেন। আইএসএলের দুই মরশুমে ৩২টি ম্যাচ খেলে ২০টি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট করেন তিনি। ৮০টির মধ্যে ৪১টি শট লক্ষ্যে রেখেছিলেন এবং ৪২টি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। সেই মিকু ফেদরের কাছ থেকেই ভারতীয় ক্লাব ফুটবল সম্পর্কে ভাল ভাল কথা শুনে এখানকার ফুটবল নিয়ে আগ্রহ জন্মায় সেলিসের।
যদিও খুব বেশিদন আসেননি ভারতে। খেলেছেন মাত্র দু'টি ম্যাচ। তবে কোনও গোল বা অ্যাসিস্ট করেননি। মোট ন’টি শট নিয়েছেন, যার মধ্যে তিনটি ছিল লক্ষ্যে। একটি গোলের সুযোগ তৈরি করেন। তবে আইএসএল নিয়ে তাঁর প্রাথমিক ধারণা ভালই। তিনি বলেন, 'কলম্বিয়ার ক্লাব লিগের সঙ্গে আইএসএলের ফারাকের চেয়ে সামঞ্জস্যই বেশি খুঁজে পেয়েছি। এখানকার ফুটবলে শারীরিক সক্ষমতার গুরুত্ব যথেষ্ট। দ্রুত ট্রানজিশন হয়, ওঠা-নামা হয় অনেক বেশি, খেলোয়াড়দের অনেক দৌড়তে হয়'।
কলম্বিয়ার ক্লাব ফুটবলের সঙ্গে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলের ফারাক সম্পর্কে সেলিস বলেন, 'একটা জায়গাতেই ফারাক দেখছি। ওখানে দলগুলোর মাঝমাঠের দখল নিয়ে বলের দখল বাড়িয়ে খেলায় যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বজায় রাখার প্রবণতা দেখা যায়। ভারতীয় ফুটবল সেই জায়গা থেকে খুব একটা দূরে আছে বলে মনে হয় না। আইএসএলে খেলার মান এত ভাল যে, আমি একটু অবাকই হয়েছি'।
নতুন দেশ, নতুন ক্লাবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছেন কি না, জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, 'ভালই মানিয়ে নিতে পারছি বলে মনে হয়। ক্লাব কর্তাদের কাছ থেকেও অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি। সতীর্থ খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফদের শরীরি ভাষাও খুব ইতিবাচক। সমর্থকদের চিৎকার শুনে মনে হচ্ছে আমার ঘরের মাঠের সমর্থকেরা আমার জন্য গলা ফাটাচ্ছে'।
আইএসএলে স্প্যানিশ ফুটবলার, কোচদের ছড়াছড়ি। তবে এ বার এই লিগে ভেনেজুয়েলাকেও উজ্জ্বল করে তুলতে চান সেলিস। বলেন, 'আইএসএলের ইতিহাসে আমি আমার দেশের নাম উজ্জ্বল করে তুলতে চাই। এই ক্লাবের খেতাব জয়ের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে আমি জড়িয়ে থাকতে চাই। সেটা এ বছর না হলেও নিজের সেরাটা দিতে চাই এবং সম্ভব হলে এই ক্লাবে আরও বেশি সময় থাকতে চাই'।
লিগ টেবলে দলের অবস্থান নীচের দিকে। এই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার মরিয়া চেষ্টায় রয়েছেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা। এই পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের নতুন বিদেশি সতীর্থ বলেন, 'যোগ দেওয়ার আগে ক্লাবের পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াকিবহাল ছিলাম না। ডিসেম্বরে যখন আমার সঙ্গে ক্লাবের কথা হয়, তখন ক্লাব ভালই ফল পাচ্ছিল। কিন্তু জানুয়ারিতে লিগের সেরা দলগুলির বিরুদ্ধে খেলতে নেমে অতটা ভাল ফল করতে পারেনি। ক্লাব একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে। আশা করি ভাল সময় আসবে'।
নিজের দুই প্রিয় ফুটবল তারকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে সেলিস বলেন, 'রোনাল্ডো ও নেমারের খেলা আমার ভাল লাগে। রোনাল্ডো জয়ের মানসিকতা ও অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত। নেইমারও টেকনিকে অসাধারণ। যেহেতু আমি নেইমারের পজিশনে খেলি, তাই ওর খেলা দেখে আমি অনেক কিছু শিখতে পারি, সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। এই দুজনই আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জোগায়'।
আইএসএলের ইতিহাসে ভেনেজুয়েলা থেকে আসা তৃতীয় ফুটবলার রিচার্ড। এর আগে মিকু ছাড়াও ভেনেজুয়েলার আরও এক খেলোয়াড় এই লিগে খেলেছেন। তিনি গ্যাব্রিয়েল কিচেরো। ২০১৭-১৮ মরশুমে দিল্লি ডায়নামোজের হয়ে খেলেন এই সেন্টার ব্যাক। ১৫টি ম্যাচ খেলেন তিনি, যার মধ্যে দু’টি ক্লিন শিট রাখতে পেরেছিলেন। ৬২টি ক্লিয়ারেন্স, ২৪টি ইন্টারসেপশন, ন’টি ব্লক, ৯২ শতাংশ সফল ট্যাকল ও ৫২ শতাংশ সফল ডুয়েল জমা পড়েছিল তাঁর খতিয়ানে।
পূর্বসূরীদের সাফল্য সেলিস বজায় রাখতে পারবেন কি না সেলিস, সেটাই দেখার। ২৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড ও উইঙ্গার ২৫০টিরও বেশি শীর্ষস্থানীয় ক্লাব ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন। ঘরোয়া লিগ এবং কোপা লিবার্তেদোর্স ২০১৯-এ কারাকাসকে ভেনেজুয়েলার প্রিমেরা ডিভিশন শিরোপা অর্জন করতে সাহায্য করেন তিনি। এ ছাড়াও ২০২২-এ মিলিওনারিওসের কোপা কলম্বিয়া জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন সেলিস।
মাদি তালাল সারা মরশুমের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর এ বার চোটের তালিকায় চলে গিয়েছেন হিজাজি মাহের ও ক্লেটন সিলভাও। সউল ক্রেসপোরও চোট। এই অবস্থায় সেলিসের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। শুক্রবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের কঠিন ম্যাচ। এই ম্যাচে সেলিস কী খেল দেখাবেন, তা নিয়ে সমর্থকদের যথেষ্ট আগ্রহ থাকবে।
আরও পড়ুন: মোহনবাগানকে হারিয়ে এসেছে প্রথম ট্রফি, নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন কোচ বেনালি