কলকাতা: আইএসএলে (ISL) টানা ছ’টি ম্যাচে হারের পর তারা ভুটানে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করলেও সেই অধ্যায় এখন অতীত বলে মনে করছেন ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) নতুন স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজো (Oscar Bruzon)। এশীয় স্তরের ওই টুর্নামেন্ট থেকে দলের ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন, এ কথা স্বীকার করলেও তিনি আপাতত অতীতের কথা ভুলে সামনের দিকে তাকাতে বেশি আগ্রহী।
শনিবার আইএসএলের সপ্তম ম্যাচে নামছে তাঁর দল। এখন পর্যন্ত একটিও পয়েন্ট জমা হয়নি খাতায়। এই ম্যাচে যাতে তারা প্রথম পয়েন্ট অর্জন করতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়ে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নামবে ইস্টবেঙ্গল। প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডান এসসি, যাদের সঙ্গে তাদের প্রায় ৯০ বছরের দ্বৈরথের সম্পর্ক। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের নিরিখে মহমেডান পিছিয়ে থেকেই নামবে শনিবার। তবে তাদের মোটেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না কোচ অস্কার।
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে শুক্রবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "মহমেডানের মাঝমাঠে ভাল ভাল খেলোয়াড় রয়েছে। কাসিমভ, অ্যালেক্সি, ফ্রাঙ্কা, চোঠে। উইংয়েও ওরা যথেষ্ট ভাল। একটা ভারসাম্য বজায় রেখে খেলে ওরা। আক্রমণকে ছড়িয়ে দিতে পারে। তবে ওদের কিছু দুর্বলতাও আছে। সেগুলো আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব কাল। কলকাতা ডার্বি জেতার গর্ব অন্যরকমের। এই নিয়ে বোধহয় ২৪০তম ম্যাচ হচ্ছে দুই দলের মধ্যে। তবে আইএসএলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটার গুরুত্ব অন্য রকম। আমরা আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছি। যতটা পারব বল নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করব, বিশেষত মাঝমাঠে। দলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই দরকার।"
নিজের দল নিয়ে অস্কার বলেন, "আত্মবিশ্বাস, মানসিকতার দিক থেকে আমাদের দল এখন আগের চেয়ে ভাল জায়গায় রয়েছে। কিন্তু আমাদের জিততে হবে, পয়েন্ট পেতে হবে, তা হলেই আমরা সেরা ছয়ে ঢুকতে পারব। বাস্তবে আমরা কতটা উন্নতি করেছি, তা এই ম্যাচে বোঝা যাবে।"
সম্প্রতি ভুটানে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে তিনটি ম্যাচের মধ্যে দুটিতেই জিতে নক আউট পর্বে খেলার যোগ্য অর্জন করেছে অস্কারের ইস্টবেঙ্গল। তাঁর কাছে যে দলের এই ফল অপ্রত্যাশিত ছিল, তা স্বীকার করে কোচ বলেন, "আমাদের দল মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী। এএফসি কাপে যে এতটা ভাল ফল হবে, আশা করিনি। তবে সেই অধ্যায় এখন অতীত। এখন আমরা আইএসএলে মনোনিবেশ করেছি। এখন আমাদের আইএসএলে কয়েকটি জয় চাই। আমি আশাবাদী এবং রোমাঞ্চিত। এই দায়িত্ব পালন করতে হবে আমাকে।"
এএফসি-র টুর্নামেন্টে আর আইএসএলে বিদেশি খেলানোর নিয়ম আলাদা হলেও তা নিয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথা নেই বলে জানান অস্কার। তিনি সাফ বলে দেন, "কতজন বিদেশি দলে আছে, কজন খেলবে, এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়, কতজন ভাল পারফর্মার রয়েছে আমার দলে, সেটাই বেশি জরুরি। খেলোয়াড়দের দেশ দেখে আমি তাদের বিচার করি না, তাদের পারফরম্যান্স দেখে বিচার করি। তাই আমার দলের খেলোয়াড়রা যে রকম পারফরম্যান্স দেখাবে, তার ভিত্তিতেই দল বাছাই করেছি এবং করবও।"
তাঁর দলের রক্ষণই এই মুহূর্তে সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। কিন্তু তা মানতে রাজি নন কোচ। বিশেষ করে জর্ডনের ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে নিয়ে তিনি আশাবাদী। বলেন, "হিজাজি ভাল ফুটবলার। আনোয়ার, লাকরাও ভাল। নিশুর চোট রয়েছে। হিজাজি কাল শুরু থেকে খেলবে কি না, তা ঠিক করার জন্য আমার হাতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় আছে। যে কম্বিনেশনটা সেরা মনে হবে, সেটাই খেলাব কাল।"
দলের রিজার্ভ বেঞ্চের ভারতীয় খেলোয়াড়দের প্রশংসা করে অস্কার বলেন, "ওরা যথেষ্ট দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন, ওদের চারিত্রিক দৃঢ়তা আছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ওরা ভাল খেলেছে। আমি ওদের নিয়ে খুশি। ওদের ওপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের দলে প্রতিটি পজিশনে খেলার মতো যেমন বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় আছে, তেমনই তারা অন্যান্য পজিশনেও খেলতে পারে। যেমন জিকসন এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের শেষ দিকে লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলেছে। কিন্তু তার মানে ও অন্য কোনও পজিশনে খেলতে পারবে না, তা নয়। আমাদের দলের ছেলেদের একাধিক পজিশনে খেলার ক্ষমতা আছে। তার প্রমাণও ওরা দিয়েছে।"
আক্রমণ বিভাগ নিয়েও খুশি তিনি, এমনকী ব্রাজিলীয় তারকা ক্লেটন সিলভাকে নিয়েও। বলেন, "আক্রমণে আমাদের তালাল, ক্লেটন, দিমি রয়েছে। অন্যরাও ওদের যথেষ্ট সাহায্য করে। কিন্তু তার চেয়ে জরুরি বিষয় যেটা, তা হল আমাদের যথাসম্ভব বেশি জায়গা দখল করে রাখতে হবে। আক্রমণে তো বটেই, রক্ষণেও। এর জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। শুধু প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা নিয়ে ভাবলে হবে না। তাদের কী ভাবে আটকাতে হবে, তা নিয়েও ভাবতে হবে আমাদের। ক্লেটনের খেলায় আমি খুশি। অনুশীলনেও ওকে চনমনে লাগছে। ও মাঠে ফিরে ভাল খেলা দেখানোর জন্য মুখিয়ে আছে। আশা করি, ওকে আমরা আরও ভাল অবস্থায় দেখতে পাব।"
শনিবার সমর্থকদের মুখেও হাসি ফোটাতে চান তিনি। বলেন, "গত ডার্বিতে সমর্থকদের দেখে খুব খারাপ লেগেছে। আশা করি, এই ডার্বিতে তাদের আনন্দ দিতে পারব। আশা করি, ইস্টবেঙ্গলের এক নতুন যুগের সূচনা হবে এই ম্যাচ থেকেই।" (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)