আবীর দত্ত, কলকাতা: পাকা চুল মোর চেয়ে এতো মান্য পায়
কাঁচা চুল সেই দুঃখে করে হায় হায়...


নতুন আর পুরোনোর দ্বন্দ্ব? নাকি আক্ষেপ! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবীণ ও নবীন কবিতায় শুরুতে দুলাইন দেখলে অনেক কিছুই মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে এখন জেতার লড়াই। বিশ্বকাপ জিততে যখন কোনও দল তরুণ্যে ভরসা করছে তখন কোনও টিম আবার নবীন প্রবীণ সংমিশ্রণে বিশ্বাসী। আবার কেউ নতুনদের ওপর ভরসা করতে পারছে না। কিন্তু ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে প্রমাণ করতে অতিরিক্ত মগজ বা ফুসফুস নবীন প্রবীণ কেউই পাবে না। শুধু একই মাঠ। সেখানেই প্রতিযোগিতা। মাঠ শুধু সাক্ষী থেকে যাবে। কেউ হবে তারকা, কেউ ভাঙবে আশা। এরকমই একটি মাঠ যে তারকা খুঁজেছে, তারকা তৈরি করিয়েছে, ঠিক কাতার থেকে ৩৭৪২ কিলোমিটার দূরে। সেই মাঠের নাম যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ। 


ঝকঝকে একটা ১৭ বছরের ছিপছিপে তরুণ সাদা জার্সি গায়ে ডান দিক থেকে ঝড়ের গতিতে বল নিয়ে এগোচ্ছে। পর পর দুজন ডিফেন্ডারকে দৌড়ের আগে মাত করে দিয়ে ডি বক্সে। একদম সময় নষ্ট না করে মুখ তুলে গ্যালারিতে। যেন দেখছিল কলকাতার ক্রাউড। গ্যালারি ভর্তি মানুষদের। যারা ফুটবল দেখার জন্য গলা ফাটাচ্ছে। নেই ফাইনালে ভারত। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও নেই। শুধু আছে ফুটবল। হঠাৎ ডান পায়ে ক্রস একেবারে কোনাকুনি জালে বল। গোল দাতা ফিল ফডেন। সেটাই গোল ঠিক করে দিয়েছিল ইংরেজরা ভারতের মাটিতে জয় করল কিছু। সেবার কলকাতার মাটিতে  বিশ্বকাপ। টানটান ম্যাচে দুটো গোল করে শুধু সেরাই নয় বিশ্বকাপের সোনার বল পেয়েছিল ফিল ফডেন। দারুন খেলেও সেদিন ট্রফি পায়নি তাঁর প্রতিপক্ষ স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফেরান তোরেস। লড়াই এক্কেবারে মাথায় মাথায় ছিল। 


অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল। সব অচেনা খেলোয়াড়। সেই টুর্নামেন্টে নেই মেসি, নেমার ,রোনাল্ডো। কিন্তু কলকাতাকে কার ক্ষমতা আছে ফুটবল প্রেম থেকে বিচ্ছিন্ন করবে! টানা দেশ জুড়ে এই ছোটোদের বিশ্ব কাপ হয়ে গেলো ঠিক পাঁচ বছর আগে। ফাইনালে শুধু একটি দলের জয়, একটি দলের হার নয়। হয়তো তারকার জন্ম দিয়ে গিয়েছিল। কারণ কলকাতার মাঠে বিশ্ব জয়ের পর, মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যালন ডি অঁর এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ফিল ফডেন। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বল বিজয়ী। ফাইনালে ২ টি গোল করেছিল। পেপ গুয়ার্দিওয়ালা কোলের ছেলে। আজ বিশ্ব কাপের তরুণ মুখ দের মধ্যে একজন। পেপ যাকে বলেছিলেন , "আ স্পেশাল প্লেয়ার"। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার। এবার ব্যালন ডি অঁরের নমিনি হিসেবেও ছিল ফোডেন। ৪৭ নম্বর জার্সিধারী এই ইংলিশ খেলোয়াড়। বা পায়ের খেলোয়াড়। বলের সঙ্গে গতি আর নিখুঁত পায়ের কাজ মাত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। একই রকম ভাবে লা লিগা থেকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি কাঁপিয়ে এগিয়ে চলেছে সেই কলকাতার ফাইনালে হেরে যাওয়া টিম স্পেনের ফেরান তোরেস। একের পর এক অ্যাসিস্ট। ম্যান সিটির সতীর্থ আজ একে ওপরের প্রতিপক্ষ যেমন কলকাতা দেখেছিলো। দুজনেই ২০০০ সালে জন্ম। ১৭ বছরে কলকাতার মাঠ কাঁপিয়ে বিশ্বের দরবারে ঘুরে তাকাতে হয়নি। কলকাতায় ফডেন জিতেছিলেন। কিন্তু ফডেনের মতো মন জয় করেছিলেন ফেরান টোরেসও।


যুবভারতী ক্রীরাঙ্গন থেকে ১৭ বছরের ফডেন আর তোরেস আজ ২২।  তৈরি কাতারের মাটি কাঁপাতে। ১১ নম্বর জার্সি গায়ে ফডেন নাকি ৪৭ নম্বর জার্সি গায়ে টোরেস। কে দোহায় মেসি রোনাল্ডোর পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে তালিকার শীর্ষে যায় এখন সেটাই দেখার। আর তো মাত্র কয়েকটা দিন । যুবভারতী সেদিন দেখেছিল, এবার গোটা বিশ্বের দেখার পালা।