সন্দীপ সরকার, কলকাতা: রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই এক মুহূর্তের জন্য যেন থমকে গেলেন তিনি। নিজের কানকেও কি অবিশ্বাস করছিলেন। সত্যিই কি শেষ? আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের ইতি?


গোটা গ্যালারি তখন গর্জন করতে শুরু করেছে। ছেত্রী... ছেত্রী...। সেই শব্দব্রহ্মেই যেন ঘোর কাটল সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri)। বুঝলেন বিদায়লগ্ন উপস্থিত। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর শেষ সেকেন্ডটাও পার হয়ে গিয়েছে। সুনীল হাঁটতে শুরু করলেন। দর্শকদের হাত জোড় করে নমস্কার করতে করতে মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে গোল পাননি। চুরানব্বইয়েই থেমে গেল সফর। তাতে কী? ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তিকে নিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছাস।


যা দেখে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না সুনীল। মাঠ প্রদক্ষিণ শেষ করেই চোখ মুছতে লাগলেন। সব আবেগ চোখের কোণ বেয়ে ততক্ষণে গালে চুঁইয়ে পড়ছে। চোখ মুছলেন। ম্যাচের আগে বারবার নিজেকে পেশাদারিত্বের মোড়কে মুড়ে রেখেছিলেন। এমনকী, এ-ও বলেছিলেন যে, তাঁর অবসরের আলোচনায় কেউ যেন ভারত-কুয়েত ম্যাচের তাৎপর্য না ভুলে যান। ম্যাচ শেষ হয়েছে গোলশূন্যভাবে। আর তারপরই যেন সুনীলের পেশাদারিত্বের বর্ম কিছুটা খসে পড়ল। সতীর্থ ও প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা গার্ড অফ অনার দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে লকার রুমে ফিরলেন সুনীল।


তবে উৎসবের তখনও শেষ নয়। বরং শুরু। ফের মাঠে আসতে হল সুনীলকে। সেনাবাহিনীর ব্যাগপাইপারে সুর উঠল, 'পুরানো সেই দিনের কথা...'। মাঠের মধ্যে অস্থায়ী মঞ্চে উঠলেন সুনীল। ড্রোন থেকে চলল পুষ্পবৃষ্টি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন। রাজ্য সরকারের তরফে মাঠে হাজির ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি স্মারক ও উপহার তুলে দিলেন সুনীলের হাতে। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন, আইএফএ তাঁর হাতে স্মারক, ফুল, উত্তরীয় তুলে দিল। কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব - ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানের কর্তারাও সুনীল বরণে হাজির হয়েছিলেন। পুষ্পস্তবক, উত্তরীয় তুলে দেওয়া হল। ডেকে নেওয়া হল সুনীলের বাবা খর্গ ছেত্রী, মা সুশীলা, স্ত্রী সোনম, শ্যালক সাহেব ভট্টাচার্যদের। এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট তথা প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে সংবর্ধনা দিলেন। প্রাক্তন সতীর্থদের মধ্যে হাজির হয়েছিলেন অ্যালভিটো ডি'কুনহা, মেহতাব হোসেন, রহিম নবি, দীপঙ্কর রায়, ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, প্রাক্তন ফুটবলার সাব্বির আলি। পেন্টিং, স্মারক তুলে দেওয়া হয় সুনীলের হাতে।



আবেগঘন সুনীল বলেন, 'সকলকে ধন্যবাদ। আপনাদের সমর্থন ছাড়া গত ১৯ বছর সম্ভব ছিল না। যাঁরা আমার খেলা সরাসরি দেখেছেন, আমার ভিডিও দেখেছেন, যাঁদের জন্য আমি এতদূর আসতে পেরেছি, সকলকে ধন্যবাদ।'


মাঠ ছাড়লেন সুনীল। ভারতীয় জার্সিতে শেষবারের মতো। একে একে নিভে গেল যুবভারতী স্টেডিয়ামের আলো...


আরও পড়ুন: বাবা ব্যস্ত সিনেমার প্রচারে, মা অর্পিতাকে নিয়ে সুনীলের হয়ে গলা ফাটাতে মাঠে প্রসেনজিৎ-পুত্র


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।