নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার গুয়াহাটির ইন্দিরা গাঁধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যে ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত, তা সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) কাছে ‘স্পেশ্যাল’। কারণ, এটি দেশের হয়ে তাঁর দেড়শোতম ম্যাচ। যে কৃতিত্ব আজ পর্যন্ত কোনও ভারতীয় ফুটবলার অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু ভারতীয় অধিনায়ক চান না, এই ম্যাচে তাঁর দিকে প্রচারের যাবতীয় আলো থাকুক। কারণ, ম্যাচটা খেলবে পুরো ভারতীয় দল। তাঁর একার ম্যাচ নয়।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্বকাপ (এশীয়) বাছাই পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করার পর মঙ্গলবার আফগানদের বিরুদ্ধে হোম ম্যাচ খেলবে ভারত। দেশের হয়ে দেড়শোতম ম্যাচ খেলার জন্য সুনীলকে বিশেষ সংবর্ধনা জানাবে সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। এই মাইলস্টোন ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে এসে সুনীল বললেন, 'আমি সন্মানিত। তবে এই ম্যাচটা আমার ম্যাচ নয়, এটা আমাদের দলের ম্যাচ, আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচ। সে ভাবেই আমাদের দেখতে হবে।'
ভারতের জার্সি গায়ে সুনীল ছেত্রী প্রথম মাঠে নামেন ১৯ বছর আগে ২০০৫-এর জুনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, কোয়েটায়। ১-১-এ ড্র হওয়া সেই ম্যাচে ভারতের হয়ে একমাত্র গোলটিও করেছিলেন তিনিই। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ১৪৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৯৩টি গোলও করেছেন, যা ভারতীয় ফুটবলে সর্বোচ্চ। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে আর ৪০জন ফুটবলারের এই কৃতিত্ব আছে।
এমন কৃতিত্ব যে অর্জন করতে পারবেন, তা ভাবতেও পারেননি বলে জানান ভারত অধিনায়ক। বলেন, “ফুটবল শুরুর করার সময় কখনও ভাবতে পারিনি যে একদিন দেশের হয়ে খেলতে পারব। কয়েকদিন আগেও ভাবতে পারিনি যে একটা নতুন রেকর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারব। মাঝে মাঝে ভাবলে অবিশ্বাস্য লাগে। আমি খুবই ভাগ্যবান। আমিই বোধহয় দেশের হয়ে ১৫০টি ম্যাচ খেলা একমাত্র ভারতীয় ফুটবলার। এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে?”
এ পর্যন্ত যতগুলি মাইলস্টোন ম্যাচ খেলেছেন তিনি, অর্থাৎ ২৫, ৫০, ৭৫, ১০০ ও ১২৫তম ম্যাচ, তার প্রতিটিতেই গোল করেছেন তিনি। এ বার ১৫০তম ম্যাচেও গোল পাবেন তিনি, এমনই আশা করছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। তা ছাড়া এই ম্যাচে দলনেতা সুনীলকে নিশ্চয়ই জয় উপহার দিতে চান তাঁর সতীর্থরা।
নিজের এই কৃতিত্বের কথা তাঁর জানা ছিল না বলে জানিয়েছেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'এই তথ্যটা আমার জানা ছিল না। যে কোনও খেলোয়াড়কে জিজ্ঞাসা করুন, কেউই এই ধরনের পরিসংখ্যান মনে রাখে বলে মনে হয় না। মনে থাকলেও কিক-অফের বাঁশি বাজলে, সে সব মাথা থেকে বেরিয়ে যায়।'
গত পাঁচটি ম্যাচে একটিও গোল করতে পারেনি ভারতীয় দল। মঙ্গলবারের ম্যাচে এই গোলের খরা কাটিয়ে জয়ে ফেরাটা ভারতের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ এবং দলকে গোলে ও জয়ে ফিরিয়ে নিজের এই বিশেষ ম্যাচকে চিরস্মরণীয় করে রাখাটা সুনীল ছেত্রীর কাছেও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এশীয় বাছাই পর্বের গ্রুপে ভারত আপাতত দু’নম্বরে রয়েছে, কাতারের পরেই। এই ম্যাচে জিততে পারলে তারা সেই জায়গা ধরে রাখতে পারবে।
নিজের মাইলস্টোন ম্যাচকে স্মরণীয় করে রাখার চেয়ে তাঁর কাছে বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সুনীল। গত ম্যাচের ভুলভ্রান্তির কথা স্বীকার করে নিয়ে তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, 'সে দিন ম্যাচ যত এগিয়েছে, ততই আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম। কোনও ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করার পরেও যদি সুযোগ হাতছাড়া হয়, তখন বোঝা যায় দল ম্যাচটা জেতার জন্য কতটা মরিয়া। কার বিরুদ্ধে খেলছি, সেটা বড় কথা নয়। গোলের সুযোগ এলে গোল করতে হবে। এটাই আসল কথা।'
তবে ১৯ বছর আগে প্রথম দেশের হয়ে মাঠে নামার সময় যতটা ভয়ডরহীন ছিলেন, এখন আর ততটা নন বলে স্বীকার করে নেন সুনীল। বলেন, 'ফুটবল জীবন শুরুর সময় আর এখনকার মধ্যে তফাৎ অনেক। এখন আমার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। বয়সটাও অনেক বেড়েছে। আমি এখন জানি, কতটা কী করতে পারি বা পারি না। অনেক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। তখন বোধহয় এখনকার চেয়ে অনেক ভয়ডরহীন ছিলাম। তখন কোনও কিছুর পরোয়া করতাম না। তবে এখন করি। কারণ, এতগুলো ম্যাচ খেলে ফেলেছি যে।'
সুনীলের কৃতিত্ব নিয়ে কোচ ইগর স্তিমাচ বলেছেন, 'হাজার হাজার ছেলে একদিন দেশের হয়ে মাঠে নামার স্বপ্ন চোখে নিয়ে ফুটবল জীবন শুরু করে। সেখানে ১৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামে যে, তাকে সর্বকালের সেরা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। আশা করি, আমাদের অধিনায়ক মঙ্গলবার ভক্তদের সামনে তার এই ঐতিহাসিক ম্যাচকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।'
তথ্য: ISL Media
আরও পড়ুন: কেকেআর শিবিরে রং বরষে... দোলের দিনও প্র্যাক্টিস নাইটদের, সকালে চলল দোল খেলা
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে