কলকাতা: চলতি আইএসএলের প্রথম দুই ম্যাচেই হারের পর বেশ চাপে পড়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। লিগ টেবলে নীচের দিকে নেমে গিয়েছে তারা। লিগ টেবলে তাদের অবস্থানে উন্নতি করতে হলে এখন জয় ছাড়া কোনও রাস্তা নেই লাল-হলুদ শিবিরের। এই অবস্থায় শুক্রবার তারা এ মরশুমের প্রথম হোম ম্যাচ খেলতে নামছে। প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া (FC Goa)। তারাও যে খুব একটা ভাল অবস্থায় আছে, তা বলা যায় না। তারাও তাদের প্রথম দুই ম্যাচের একটিও জিততে না পারায় লিগ টেবলের নীচের দিকে। ফলে শুক্রবার দুই দলই জয়ে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে।
প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় ছিল না লাল-হলুদ বাহিনি। বেঙ্গালুরুতে প্রথম ম্যাচের প্রথমার্ধে ভাল খেলা দেখাতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাদি তালাল নামার পর কলকাতার দলের আক্রমণে ধার বাড়ে। কিন্তু প্রতিপক্ষের বক্সের মধ্যে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় সমতা আনতে পারেনি তারা।
কোচির ম্যাচে প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় দাপুটে ফুটবল খেলেও কোনও গোল করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুর দিকে ভাল খেলে তারা। কিন্তু ৬০ মিনিটে সুপার সাব পিভি বিষ্ণুর গোলের পরই তারা ক্রমশ খেলা থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। বাকি সময়টা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় প্রতিপক্ষ ও তার পরে দু-দু’টি গোল করে ম্যাচ জিতে নেয়।
পাঞ্জাব এফসি থেকে আসা ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাদি তালাল ও গত আইএসএলে গোল্ডেন বুটজয়ী গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস এ বার ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের দুই স্তম্ভ। তালাল ভাল খেললেও দিয়ামান্তাকস ফর্মে নেই। সম্প্রতি চোটও পেয়েছেন তিনি। ফলে শুক্রবারের ম্যাচে তিনি অনিশ্চিত। একই সমস্যা আর এক বিদেশি সল ক্রেসপোরও। তিনি অসুস্থ। ভরসা সেই ব্রাজিলীয় ফরওয়ার্ড ক্লেটন সিলভা।
ঘরের মাঠে শুরু থেকে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে গতবার আই লিগের সর্বোচ্চ ভারতীয় স্কোরার, তরুণ ফরওয়ার্ড ডেভিড লালনসাঙ্গা, গত ম্যাচের একমাত্র গোলদাতা পিভি বিষ্ণু, নাওরেম মহেশ, নন্দকুমার শেকরদের প্রথম দলে রাখতে পারেন ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত।
রক্ষণে হিজাজি মাহেরের সঙ্গে গতবার মোহনবাগানের হয়ে খেলা হেক্টর ইউস্তে রয়েছেন। দুই বিদেশি ডিফেন্ডারকে রেখেই হয়তো ডিফেন্স সাজাবেন কুয়াদ্রাত। কিন্তু তাঁরাও নিয়মিত গোল খেয়ে যাচ্ছেন। গোলকিপার প্রভসুখন গিলকেও নড়বড়ে লাগছে। গত ম্যাচে তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, ফিটনেসের অভাবে ভুগছেন। তাই এই ম্যাচে হয়তো বাংলার অভিজ্ঞ গোলকিপার দেবজিৎ মজুমদারকে নামাবেন লাল-হলুদ কোচ।
ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, নোয়া সাদাউই, কার্লোস মার্টিনেজদের মতো নির্ভরযোগ্য ফুটবলাররা গোয়া শিবির ছেড়ে চলে যাওয়ায় তারা বোধহয় চাপে পড়ে গিয়েছে। চোট পেয়ে আপাতত দলের বাইরে ইকের গুয়ারতজেনা। একা আলবানিয়ার ফরোয়ার্ড সাদিকু ভরসা জোগানোর চেষ্টা করছেন। গোলকিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমনিও দারুন ফর্মে। কিন্তু অ্যালান সাজি, মহম্মদ ইয়াসির, রাওলিন বোর্জেসদের মতো গোয়া শিবিরে নতুন যোগ দেওয়া খেলোয়াড়রা এখনও সড়গড় হয়ে ওঠেননি। সন্দেশ ঝিঙ্গন এ মরশুমেও দলের রক্ষণের অন্যতম বড় ভরসা। কিন্তু তিনিও চোটের জন্য মাঠে নামতে পারছেন না। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে।
আইএসএলে ঘরের মাঠে এই প্রথম পরপর দু’টি ম্যাচ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামছে ইস্টবেঙ্গল। ঘরের মাঠে শেষ আইএসএল ম্যাচে তারা বেঙ্গালুরু এফসি-কে ২-১-এ হারিয়েছিল গত মরশুমে। শুক্রবার জিতলে এই প্রথম কোনও আইএসএল মরশুমে প্রথম হোম ম্যাচ জিতবে লাল-হলুদ বাহিনি, যা তারা কখনও করতে পারেনি। দুই দলের মধ্যে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল অবদান রয়েছে নাওরেম মহেশ সিংয়ের। তিনটি গোল করেছেন ও দু’টি করিয়েছেন তিনি।
আইএসএলে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে গত চারটি ম্যাচেই হেরেছে ইস্টবেঙ্গল। যে আটবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল, তার প্রতিবারেই গোল পেয়েছে আরব সাগর পারের দলটি। তবে প্রতিবার গোল খেয়েছেও তারা। মাত্র একবার ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছাড়তে পেরেছিল গোয়ার দল। এ বার প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে মহমেডানের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেছে তারা। শুক্রবারের ম্যাচেও ড্র করলে বা হারলে প্রথম দুই অ্যাওয়ে ম্যাচেই জয়হীন থাকবে তারা। মানোলো মার্কেজের দলের বিরুদ্ধে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে কার্লস কুয়াদ্রাতের দল, সেই তিনটি ম্যচেই হেরেছে তারা।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে আটবার। গোয়া জিতেছে পাঁচবার। ইস্টবেঙ্গল একবার। বাকি দু’বার ড্র হয়েছে। দু’বারই ড্র হয় ১-১-এ, ২০২০-২১ মরশুমে। ২০২১-২২ মরশুমে প্রথম লেগে এফসি গোয়া ৪-৩-এ জেতে এবং ফিরতি লেগে ২-১-এ জিতে তার বদলা নেয় ইস্টবেঙ্গল। ২২-২৩ মরশুমের প্রথম সাক্ষাতে ২-১-এ জেতে এফসি গোয়া। দ্বিতীয় লড়াইয়ে ৪-২-এ জেতে তারা। গত মরশুমেও সেই জয়ের ধারা বজায় রাখে আরব সাগর পাড়ের দল ও জেতে ২-১ ও ১-০-য়। এ বারও সেই ধারা অব্যহত থাকবে, না জয়ে ফিরবে লাল-হলুদ বাহিনি, সেটাই দেখার।
কাদের ম্যাচ
ইস্টবেঙ্গল এফসি বনাম এফসি গোয়া
কোথায় খেলা
বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন, কলকাতা
কখন শুরু
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০-এ কিক অফ
সরাসরি সম্প্রচার
স্পোর্টস ১৮ থ্রি (বাংলা), স্পোর্টস ১৮ খেল ও স্পোর্টস ১৮ টু (হিন্দি), স্পোর্টস ১৮ ওয়ান এসডি ও এইচডি (ইংলিশ) চ্যানেলে সরাসরি দেখা যাবে ম্যাচ
অনলাইন স্ট্রিমিং
মোবাইল ফোনে জিও সিনেমা অ্যাপে দেখা যাবে ম্যাচ (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: রুদ্ধশ্বাস শেষ ওভারে বল হাতে নায়ক, কলকাতার পেসারের দাপটে অস্ট্রেলিয়াকে দুরমুশ করল ভারত
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।