কলকাতা: তিনবার টানা দুই ম্যাচে জিতলেও ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal) কখনও টানা তিন ম্যাচে জিততে পারেনি। শনিবার হায়দরাবাদের জিএমসি বালাযোগী স্টেডিয়ামে জিততে পারলে প্রথমবার এই কীর্তি স্থাপন করবে তারা। সারা দুনিয়ার লাল-হলুদ সমর্থকেরা তাই সেই মুহূর্তের দিকেই তাকিয়ে।
দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যে রকম, তা বিবেচনা করলে শনিবার বিকেলের এই ম্যাচে ইস্টেবঙ্গলকেই এগিয়ে রাখতে চায় সবাই। কিন্তু ফুটবলে অঘটন তো আর কম ঘটে না। আইএসএলেও অঘটনের শেষ নেই।
চার দিন আগে নর্থইস্ট ইউনাইটেড বোধহয় হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের ফেভারিট ভেবে একটু গা ছাড়া মনোভাব দেখিয়েছিল। তারই মাশুল তাদের দিতে হয় ম্যাচের শুরুতেই পরপর দু’গোল খেয়ে। ১২ মিনিটের মধ্যে দু’গোলে পিছিয়ে যায় নর্থইস্ট। সম্বিৎ ফেরার পর পাঁচ গোল দিয়ে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতে তারা। না হলে টানা তিন ম্যাচে হারতে হত নর্থইস্টকে।
গত সোমবারের সেই ম্যাচ দেখার পরই বোধহয় ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোনের মনে হয়েছে হায়দরাবাদকে কম গুরুত্ব দিলে বড়সড় সারপ্রাইজ পেতে হতে পারে তাদের। বছরের শেষে জয়ের হ্যাটট্রিকের মুখে দাঁড়িয়ে যা একেবারেই চান না লাল-হলুদ জনতা থেকে ক্লাবের কোনও খেলোয়াড়ও।
টানা সাতটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই ২০২৪ শেষ করতে চান তিনি। এটিই সেই বছর, যে বছরে তিন দফায় টানা দু’ম্যাচ জয়ের স্বাদ পায় ঐতিহ্যপূর্ণ ক্লাব। প্রথমবার গত মরশুমে, এপ্রিলে, যখন ব্লাস্টার্স ও বেঙ্গালুরুকে পরপর দুই ম্যাচে হারায় তারা এবং সম্প্রতি ২৯ নভেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে দুই দফায় ফের টানা দু’টি করে ম্যাচ জয়ের কথা কোনও সমর্থকেরই ভোলার কথা নয়।
গত দুই ম্যাচেই জামশেদপুর এফসি ও পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে মশাল-বাহিনী। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে জয় তো অনেকদিন মনে রাখার মতো। দু’গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যাবার পর দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে ফিরে ২১ মিনিটের মধ্যে চার গোল দিয়ে ম্যাচ জিতে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। গত ম্যাচে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জয় পায় তারা। তাই আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটছে লাল-হলুদ শিবির।
কিন্তু দলের চোট-আঘাত সমস্যা এখনই মেটার নয় তাদের। বরং আরও বাড়ছে। ওড়িশা ম্যাচে হাঁটুতে চোট পাওয়া ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল পুরো মরশুমেই আর খেলতে পারবেন না। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর যে জানুয়ারির মাঝামাঝির আগে ফেরা কঠিন, সে রকম ইঙ্গিতও দিয়ে দিলেন কোচ। চোট-আঘাতের তালিকায় নতুন সংযোজন ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ।
কার্ড সমস্যায় এই ম্যাচে পাওয়া যাবে না স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তেকে। অর্থাৎ, বিদেশিদের মধ্যে শুধু গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রি দিয়ামান্তাকস, ব্রাজিলীয় ক্লেটন সিলভা ও ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে নিয়ে মাঠে নামতে পারবে ইস্টবেঙ্গল। তিন বিদেশিই অবশ্য ফর্মে আছে। গত ম্যাচে গোল পেয়েছেন দিয়ামান্তাকস। তাই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন তিনি। ক্লেটন সিলভা ক্রমশ ছন্দে ফিরছেন। ভরসা জোগাচ্ছেন হিজাজিও।
আনোয়ার আলি, পিভি বিষ্ণু, শৌভিক চক্রবর্তী, নন্দকুমার শেকর, ডেভিড লালনসাঙ্গা, জিকসন সিং, গোলকিপার প্রভসুখন সিং গিলরাও ভাল ফর্মে রয়েছেন। অপেক্ষা শুধু নাওরেম মহেশ সিংয়ের ফর্মে ফেরার। শনিবারের ম্যাচে মহম্মদ রকিপের জায়গায় প্রভাত লাকরা বা নিশু কুমারকে খেলাতে পারেন অস্কার। ইউস্তের জায়গা নেবেন আনোয়ার আলি। জিকসন সিংকে মাঝমাঠে শুরু থেকে খেলতে দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া দলে কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।
গত ম্যাচে যে ভাবে শুরুতেই গোল করে হায়দরাবাদ এফসি-কে এগিয়ে দিয়েছিলেন তাদের গিনি থেকে আসা ফরোয়ার্ড এডমিলসন কোরেয়া, বিরতিতে ২-১-এ এগিয়ে থেকে যে ভাবে বিরতিতে যায় তারা। তার পরে তাদের জয়ে ফেরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে নর্থইস্ট একের পর এক গোল দিয়ে সেই সম্ভাবনা শেষ করে দেয়।
গত পাঁচ ম্যাচে ১৫ গোল খেয়েছে হায়দরাবাদ এফসি। নর্থইস্ট তাদের পাঁচ গোল দেওয়া ছাড়াও ওড়িশা এফসি তাদের ছ’গোলে হারায়। চলতি লিগে সবচেয়ে বেশি গোল খেয়েছে হায়দরাবাদই। কারণ, রক্ষণের হাল খারাপ তাদের। সম্প্রতি তাদের কোচও দায়িত্ব ছেড়ে চলে গিয়েছেন। আপাতত দল রয়েছে সহকারী কোচ শামিল চেম্বাকাথের দায়িত্বে। রক্ষণকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে না পারলে যে জয়ে ফেরা কঠিন তাদের পক্ষে, তা গত ম্যাচের পরেই বলেন তিনি। তবে ইস্টবেঙ্গলের মতো আত্মবিশ্বাসী ও ফর্মে থাকা দলের বিরুদ্ধে ভুল শুধরে সাফল্যে ফেরা তাদের পক্ষে মোটেই সহজ হবে না। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মাঠেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত স্টিভ স্মিথের! বক্সিং ডে টেস্টে সেঞ্চুরির পর কী বললেন?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।