কলকাতা: বছর শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) একটা লম্বা ছুটিও পড়ে গিয়েছে। জাতীয় দল এএফসি এশিয়ান কাপে অংশগ্রহন করতে এখন কাতারে। ২৬ জনের দল নিয়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন ভারতীয় দলের হেড কোচ ইগর স্টিমাচ (Igor Stimac)। এই ২৬ জনই আইএসএলের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন। তাই ভারতের এশিয়ান কাপ অভিযান যত দিন চলবে, তত দিন সাময়িক ভাবে দেশের এক নম্বর ফুটবল লিগ বন্ধ থাকছে।


এই অবকাশের মধ্যে অবশ্য আইএসএলের ক্লাবগুলি তাদের দলের দুর্বল জায়গাগুলি ভরাট করার জন্য জানুয়ারির দলবদলে তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রত্যেক ক্লাবই এক বা একাধিক ফুটবলারকে এনে কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। কলকাতার ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal) শিবিরেও তেমন ভাবনা রয়েছে বলেই ক্লাবের বিভিন্ন সূত্রে শোনাও যাচ্ছে। 


গত তিন মরশুম ধরে বেনজির ব্যর্থতার পর দলের এক ঝাঁক ফুটবলারকে ছেড়ে দেয় লাল-হলুদ বাহিনী। ভারতীয় ফুটবলার জেরি লালরিনজুয়ালা, সেম্বয় হাওকিপ, সুমিত পাসি, শুভম সেন, নবীন কুমার, অমরজিৎ সিংহ কিয়াম ও হীমাংশু জাঙরা এবং বিদেশি ফুটবলার অ্যালেক্স লিমা, চ্যারিস কিরিয়াকু, জেক জার্ভিস ও জর্ডন ও’ডোহার্টিকে বিদায় জানায় তারা। 


চলতি মরশুমের আগে ঢেলে সাজানো হয় দল। অস্ট্রেলিয়া থেকে উড়িয়ে আনা হয় অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার জর্ডন এলসিকে। ডুরান্ড ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ আগলানোর দায়িত্বে ছিলেন জর্ডন। কিন্তু ম্যাচের ৩৫ মিনিটের মাথায় হাঁটুতে চোট পেয়ে কয়েকমাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাঁকে। তাঁর জায়গায় জর্ডন থেকে নিয়ে আসা হয় তাদের জাতীয় দলে খেলা ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরকে। 


স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোকে সই করায় কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। এ ছাড়া হায়দরাবাদ এফসি থেকে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরা গঞ্জালেসকেও নিয়ে আসা হয়। যোগ দেন আর এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হোসে পার্দো। এ ছাড়া গত মরশুমের দলে থাকা ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা তো ছিলেনই।


দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে সিনিয়র ডিফেন্ডার হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা, মান্দার রাও দেশাইকে সই করায় তারা। ওড়িশা এফসি থেকে সফল ভারতীয় উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর, কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে ডিফেন্ডার নিশু কুমারকেও সই করায় কলকাতার ক্লাব। কেরালা ব্লাস্টার্স থেকে তিন বছরের জন্য তারা নিয়ে আসে পাঞ্জাবের গোলকিপার প্রভসুখন গিলকেও। এ ছাড়া যে দেশীয় ফুটবলাররা গতবারও ছিলেন, সেই নাওরেম মহেশ সিং, ডিফেন্ডার লালচুঙনুঙ্গা, তুহীন দাস, মহম্মদ রকিপ, মিডফিল্ডার  মোবাশির রহমান, শৌভিক চক্রবর্তী ও ফরোয়ার্ড ভিপি সুহেরকেও দলে রেখে দেওয়া হয়।


কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই মরশুমে তাদের গোল করার লোক নেই। কম গোল খাওয়ার দিক থেকে অনেকটা সফল হলেও গোল করার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে কার্লস কুয়াদ্রাতের দল। ড্র ও জয় দিয়ে আইএসএল শুরু করার পরেও টানা তিনটি ম্যাচে হারে তারা। সেই অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়িয়ে শেষ পাঁচটি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে লাল-হলুদ বাহিনী। 


টানা চারটি ম্যাচে কোনও গোল খায়নি তারা। গত মরশুমে যেখানে সারা লিগে তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখতে পেরেছিল তারা, সেখানে এ বার দশটি ম্যাচের পাঁচটিতেই প্রতিপক্ষকে খালি হাতে ফিরতে বাধ্য করেছে। ফলে তাদের রক্ষণ যে বেশ আঁটোসাঁটো হয়ে গিয়েছে, তা বোঝাই যাচ্ছে। গোল না খাওয়ার সংকল্পে তারা সফল। কিন্তু তার পরেও একটা জায়গায় খামতি থেকে যাচ্ছে এবং সেটা হল আক্রমণ। 


কোচ গত কয়েকটি ম্যাচেই আগে-পরে বারবার বলেছেন, “আমাদের গোল করতে হবে, ম্যাচ জিততে হবে। শুধু গোল আটকালে চলবে না। গোল না করলে ম্যাচ জেতা যাবে না”। কিন্তু গোলের সুযোগ তৈরির দিক থেকেও তারা অন্যান্য দলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকছে। নন্দকুমার শেখর, ক্লেটন সিলভা, বোরহা হেরেরা, মহেশ সিংরা দশটি ম্যাচে ৮০টির বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেননি। চলতি লিগে গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে তারাই সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। 


রক্ষণের দিক থেকে লাল-হলুদ বাহিনী দ্বিতীয় সেরার জায়গায় রয়েছে ঠিকই। কিন্তু গোলের সংখ্যার (১১) দিক থেকে তারা সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লাবগুলির তালিকায় নীচের দিক থেকে তৃতীয়। সবচেয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন হাভিয়ে সিভেরিও, যিনি গত দশ ম্যাচে খেললেও না কোনও গোল পেয়েছেন, না কোনও অ্যাসিস্ট করতে পেরেছেন। সিভেরিওর ছন্দে ফেরা অবধি কুয়াদ্রাত অপেক্ষা করবেন কি না, সেটাই দেখার। 


এ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের মাত্র চারজন ফুটবলার গোলের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন চলতি মরশুমে। নন্দকুমার গত মরশুমে যেমন ওডিশা এফসি-র হয়ে ভাল ও ধারাবাহিক ছন্দে ছিলেন, এ বার একেবারেই সেই ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে না তাঁর মধ্যে। ফলে কুয়াদ্রাত একজন ভারতীয় ফরোয়ার্ডের অভাবে ভুগছেন হয়তো। আক্রমণে তাদের শক্তি আরও বাড়াতে হবে। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে তাদের আরও নিখুঁত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ও আরও তৎপর হয়ে উঠতে হবে। 


গত মরশুমের বেশিরভাগ ম্যাচেই খেলার সুযোগ না পাওয়ার পর এই মরশুমে মাঝমাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছেন শৌভিক চক্রবর্তী। কুয়াদ্রাতের সিস্টেমে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তিনি বেশ কার্ড প্রবণ। চলতি লিগে ইতিমধ্যেই চারটি হলুদ কার্ড দেখা হয়ে গিয়েছে তাঁর। কার্ড সমস্যার জন্য বা কোনও ম্যাচে চোটের জন্য খেলতে না পারলে, তাঁর যোগ্য বিকল্পও নেই ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। সল ক্রেসপোর সঙ্গে শৌভিক না থাকলে, মাঝমাঠে একটা বড়সড় ফাঁক দেখা দিচ্ছে। এই ফাঁক ভরাটের জন্য অজয় ছেত্রী, এডউইন ভন্সপল, মোবাশির রহমানদের মাঠে নামানো হলেও তারা শৌভিকের মতো কার্যকরী হয়ে উঠতে পারছেন না। তাই শৌভিকের মতোই কাউকে পেলে ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠে ধারাবাহিকতা আসবে হয়তো। (তথ্যসূত্র: ISL Media)


   


আরও পড়ুন: Ranji Trophy: রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেও আফশোস অনুষ্টুপের, অভিষেকেই উজ্জ্বল সৌরভ



আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে