নয়াদিল্লি: অনেক পরিশ্রম, অনুশীলন, অধ্যাবসায়ের পর আজ মহাদেশের সেরা প্রতিযোগিতার গ্রহে ঢুকে পড়েছেন তাঁরা। আর কয়েকদিন পরেই এশিয়ার অন্যতম সেরা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠেও নেমে পড়তে হবে তাঁদের। এই সময়ে ভারতীয় ফুটবল দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলারদের অন্যতম সন্দেশ ঝিঙ্গন (Sandesh Jhingan) কী বলছেন, তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
কঠিন লড়াইয়ের পর যিনি ভারতের এক সফল ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন, সেই পাঞ্জাবের ফুটবল তারকা বলছেন, তিনি যতই পরিশ্রম করুন আশা জিইয়ে না রাখলে কখনও এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পারতেন না। এশিয়ান কাপেও সেই আশা জিইয়ে রেখে তাঁরা দ্বিতীয় ধাপে পৌঁছতে পারবেন বলেই বিশ্বাস করেন সন্দেশ ঝিঙ্গন। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ইউটিউব চ্যানেলে ‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’ অনুষ্ঠানে এমনই বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকেই দেখা যাচ্ছে এই অনুষ্ঠান।
কাতারে আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে ভারতের প্রথম ম্যাচ ১৩ জানুয়ারি, ভারতীয় সময় অনুযায়ী বিকেল পাঁচটায়। ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় দল তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৮ জানুয়ারি, রাত আটটায়। এই দুটি ম্যাচই হবে আল রায়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। লিগ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ ২৩ জানুয়ারি, বিকেল পাঁচটায়, আল খোরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে।
ফিফা ক্রমতালিকায় বর্তমানে ১০২ নম্বরে থাকা ভারতকে এএফসি এশিয়ান কাপে খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে, যারা ক্রমতালিকায় রয়েছে ২৫ নম্বরে। তাদের অপর দুই প্রতিপক্ষ সিরিয়া ও উজবেকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৯১ ও ৬৮ নম্বরে। সুতরাং ভারতের সামনে যে কঠিন লড়াই, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গত বছর ঘরের মাঠে ভারতীয় দলের অসাধারণ পারফরম্যান্স ও নভেম্বরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কাতারে গিয়ে সুনীল ছেত্রীরা তাদের হারানোয় এশিয়ান কাপের ফল নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা।
‘ইন দ্য স্ট্যান্ডস’ অনুষ্ঠানে ঝিঙ্গনকে এই টুর্নামেন্টে ভারতের সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, “আমি যদি এখন বলি আমরা এশিয়ান কাপ জিততেই নামব, তা হলে লোকে বলবে, ও খুব উদ্ধত, বড় বড় কথা বলে। কূটনৈতিক উত্তর দেওয়াটাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল। প্রতি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে আমাদের। যখন আমরা ইগরের (স্টিমাচ) সঙ্গে প্রথম শুরু করি, তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। তখন অনেকে বলেছিলেন, কিছুই ঠিক হচ্ছে না। এখন সবাই সে সব ভুলে গিয়েছে। আমরা সময়কে কী ভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি, সেটাই আসল কথা। যখনই সময় পেয়েছি আমরা, তখনই একসঙ্গে অনুশীলন করেছি। তার ফল কী হয়েছে, সাম্প্রতিক অতীতে আমরা দেখেছি। ভাল দর্শনীয় ফুটবল খেলতে হবে আমাদের”।
ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার মনে করেন, বড় স্বপ্ন না দেখলে কখনও বড় কিছু করা যায় না। তিনি বলেন, “একশো বছর আগে কিছু লোক চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। তখন তারা সেই স্বপ্ন দেখেছিল বলেই মানুষ চাঁদে পৌঁছতে পেরেছে। আসলে বড় স্বপ্ন দেখাটাই আসল ব্যাপার। বড় স্বপ্ন, যা অবাস্তব মনে হতে পারে অনেকেরই। কিন্তু তা সফল করার জন্য যে পরিশ্রম চাই, তা স্বপ্নের চেয়ে প্রায় ১০-১২ গুণ বা তারও বেশি কঠিন হওয়া উচিত। তার পরেও যে সাফল্য আসবেই, তার কোনও মানে নেই। সম্ভাবনা কমই থাকে। কিন্তু ওই অবাস্তব স্বপ্নটাই সবচেয়ে বড় ফারাক তৈরি করে দেয়। ওই স্বপ্ন বা ওই ভাবনাই হল আশা। আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখেছি, যেখানে আশা থাকে, সেখানেই চমৎকার হয়। তাই মনে ওই আশা থাকা খুব জরুরি এবং তার জন্য দশগুণ বেশি পরিশ্রমও জরুরি। সফল হলে আমরা ভাগ্যবান এবং সফল না হলে ভবিষ্যতে আরও পরিশ্রম করতে হবে, চেষ্টা করতে হবে”।
তিনি যতটা না আধুনিক সময়ের বল প্লেইং ডিফেন্ডার, তার চেয়ে বেশি সংরক্ষণশীল ‘ওল্ড স্কুল’ ডিফেন্ডার। তাঁর সম্পর্কে এই ধারণাকে সমর্থন করে ঝিঙ্গন এই অনুষ্ঠানে বলেন, “আমাকে সফল বলা হয়, কারণ, যে কারণে, ক্লাব আমাকে সই করায়, আমি সেটাই করার চেষ্টা করি। দলের মধ্যে শক্তি আনার ও দলকে সঙ্ঘবদ্ধ করার চেষ্টা করি। ক্লিন শিট রাখতে আমার খুবই ভাল লাগে। এই জন্যই বিভিন্ন ক্লাব আমাকে নিয়েছে। কিন্তু লোকে একজন খেলোয়াড়ের যে গুণটা দেখতে পায় না, তা হল ড্রেসিংরুমে, মাঠের বাইরে তার ভূমিকা। সেটাও বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত”।
২০২১-এর অগাস্ট মাসে মলদ্বীপে এএফসি কাপে খেলতে যাওয়ার আগেই সন্দেশ মোহনবাগানকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে খেলতে যাচ্ছেন, তাই সেই মরশুমে কলকাতার ক্লাবের হয়ে খেলতে পারবেন না। তাতে ক্লাব আপত্তি করেনি। তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার এইচএনকে সিবেনিকে তাঁর সময় খুব একটা ভাল কাটেনি। অনুশীলনে নামার আগেই চোট পান তিনি। তাই ওই ক্লাবের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তাঁর।
নিজের ভুলেই কী ভাবে সেই কাণ্ড হয়েছিল, তা এই সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানান সন্দেশ। বলেন, “টানা ৩৮ ঘণ্টা বিমানযাত্রা করার পরে ক্রোয়েশিয়া পৌঁছেছিলাম। পৌঁছেই মনে হয়, এত ভ্রমণ করে শরীরটা জড়সড় হয়ে গিয়েছে, একটু দৌড়ে নিই। ওটাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত। পরের দিন সকালে আবার জিমও করি। সে দিনই সন্ধ্যায় প্রথম অনুশীলন ছিল। কিন্তু আমার পেশীতে টান ধরে। এ ছাড়াও আরও সমস্যা। আমাকে সেরে ওঠার জন্য মাসখানেকের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু আমি বুঝেছিলাম, আমার দ্বারা অত তাড়াতাড়ি সেরা ওঠা সম্ভব হবে না। আসলে তখন আমার শরীরের প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল, প্রকৃতির নিয়মকে সন্মান জানানো উচিত ছিল। এটা আমার জীবনের একটা বড় শিক্ষা। দেশে ফিরে আসারই সিদ্ধান্ত নিই। আর একটু ধৈর্য্যশীল হলে হয়তো ফুটবল জীবনে আরও ভাল কিছু করতে পারতাম”।
এ ছাড়াও ফুটবল জীবনের শুরুতে ইউনাইটেড সিকিমে ট্রায়াল দেওয়া, বাইচুং ভুটিয়ার কাছ থেকে জীবনের প্রথম পারিশ্রমিক পাওয়া, কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে কেরিয়ারের সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো, বেঙ্গালুরু এফসি-তে সুনীল, গুরপ্রীতদের সঙ্গে ফুটবল আড্ডার নানা গল্প তিনি শুনিয়েছেন এই অনুষ্ঠানে।
আরও পড়ুন: Ranji Trophy: রঞ্জি ট্রফিতে দুরন্ত সেঞ্চুরি করেও আফশোস অনুষ্টুপের, অভিষেকেই উজ্জ্বল সৌরভ
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে