হায়দরাবাদ: ডার্বি জয়ের ফর্ম ছিলই। কিন্তু এদিন যদিও কিছুটা আক্রমণভাবে সেই ঝাঁঝ দেখা যায়নি মোহনবাগান সুপারজায়ান্টের (Mohun Bagan Supergiant)। তবুও ম্য়াচে জয় ছিনিয়ে নিল তারা। বুধবার হায়দরাবাদ এফসি-কে (Hyderabad FC) ২-০-য় হারিয়ে চলতি আইএসএলে প্রথম জয়ের হ্যাটট্রিকটি করে ফেলল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Supergiant)। চার দিন আগেই কলকাতায় মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে চার গোলে জয় পাওয়া হায়দরাবাদ এ দিন কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও মোহনবাগান আক্রমণকে রোখার মতো রক্ষণ তাদের ছিল না।


ম্যাচের ৩৭ মিনিটের মাথায় মনবীর সিং ও ৫৫ মিনিটের মাথায় অধিনায়ক শুভাশিস বোসের গোলে চলতি লিগের চার নম্বর জয়টি অর্জন করে নেয় তারা। শেষ তিন ম্যাচে সাত গোল দিয়ে একটিও গোল খায়নি তারা। আইএসএলের ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার নিজেদের গোল অক্ষত রেখে জয়ের হ্যাটট্রিক করল সবুজ-মেরুন বাহিনী। ফলে ছয় ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার দু’নম্বরে উঠে এল তারা। শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-র চেয়ে মাত্র তিন পয়েন্ট পিছনে তারা।


এ দিন লিস্টন কোলাসোর জায়গায় সহাল আব্দুল সামাদ ও আপুইয়ার জায়গায় দীপক টাঙরিকে রেখে ৪-৪-১-১-এ দল সাজায় মোহনবাগান এসজি। হায়দরাবাদ প্রথম এগারোয় কোনও পরিবর্তন করেনি। শুরুর দিকে হায়দরাবাদ নিজেদের মাঠে দাপট দেখানোর চেষ্টা করলেও ক্রমশ খেলায় ফেরে মোহনবাগান এবং তারা গোল করার চেষ্টা শুরু করে। তবে দুই দলেরই রক্ষণের তৎপরতার জন্য প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও দলই প্রতিপক্ষের গোলে সে ভাবে হানা দিতে পারেনি। গত ম্যাচে মহমেডান এসি-কে চার গোলে হারানোর পর যে আত্মবিশ্বাস পায় হায়দরাবাদ এফসি, তার ছাপ এদিন শুরুর দিকে তাদের পারফরম্যান্সে দেখা গেলেও পরে ক্রমশ হারিয়ে যায়। ক্রমশ আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় মোহনবাগান ও গোলের চেষ্টা শুরু করে। ১৯ ও ২২ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে মনবীর, ম্যাকলারেন ও সহাল গোলের সুযোগ পেয়েও সফল হননি।


বিরতির আগে স্টুয়ার্টের পাস থেকে বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়ে যান সহাল। কিন্তু তাঁর কোণাকুনি শট লাগে সাইড নেটে। বাড়তি সময়ে আশিস রাইও বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। সাপিচ চেষ্টা করেও আটকাতে পারেননি তাঁকে। কিন্তু গোলকিপার বিয়াকা জঙতে এগিয়ে এসে তাঁর পা থেকে বল ছিনিয়ে নেন। ৩৭ মিনিটের মাথায় মনবীরের গোলে প্রথমে এগিয়ে যায় সবুজ মেরুন ব্রিগেড।


দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে হায়দরাবাদ। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রাবি ও আলবা গোলে শট নেন। রাবির শট সেভ করেন বিশাল, আলবার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে মিনিট পাঁচেক পর থেকে ফের মোহনবাগান ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে শুরু করে। ৫০ মিনিটের মাথায় সহালের শট বারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়।


সহাল সুযোগ হাতছাড়া করলেও পাঁচ মিনিট পরে স্টুয়ার্টের অনবদ্য ফ্রি কিক থেকে গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি শুভাশিস। বক্সের বাইরে ডানদিক থেকে নেওয়া ফ্রি কিক দূরের পোস্টের সামনে পৌঁছলে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে তা হেড করে জালে জড়িয়ে দেন শুভাশিস (২-০)। এই নিয়ে চলতি লিগে চতুর্থ অ্যাসিস্ট করলেন স্টুয়ার্ট, যা শুধু চলতি লিগে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় তাঁকে সবার ওপরে পৌঁছে দিল না, আইএসএলের ইতিহাসেও সবচেয়ে বেশি (২৫) অ্যাসিস্টের তালিকায় সবার ওপরে বহাল রাখল তাঁকে।


এই গোলের পরেই ব্যবধান কমানোর দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে যান পলিস্তা। প্রতিপক্ষের তিন ফুটবলারকে ড্রিবল করে ছিটকে দিয়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে গোলের উদ্দেশে বল ঠেললেও তা পোস্টের সামান্য বাইরে চলে যায়।


ম্যাচের বয়স ৬৫ মিনিট পেরোতেই লিস্টন কোলাসো ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে নামায় মোহনবাগান। তুলে নেয় সহাল ও ম্যাকলারেনকে। ৭০ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে পেট্রাটসের উদ্দেশে এক মাপা ক্রস বাড়ান কোলাসো। কিন্তু বলে পৌঁছতে দেরি করে ফেলেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। ৭৪ মিনিটের মাথায় কোলাসোর দূরপাল্লার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।


এই সময় থেকেই ক্রমশ খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে হায়দরাবাদ এফসি। প্রথমার্ধে তারা কোনও শট গোলে রাখতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আধ ঘণ্টার মধ্যে তারা একাধিক আক্রমণ করে। তাদের একটি শট লক্ষ্যেও ছিল। কিন্তু ৭৫ মিনিটের মাথায় রাবি মাঠ ছাড়ায় কিছুটা হলেও ছন্দপতন হয় হায়দরাবাদের। এরপর আর কোনও দল গোল করতে পারেনি। ম্য়াচের সেরা হন মনবীর।                                 তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল