কলকাতা: চলতি মরশুমের ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL 2024-25) অর্ধেক শেষ। এ বার বাকি অর্ধেক শুরু হবে, যা হতে চলেছে উত্তেজনায় ঠাসা। লিগের প্রথমার্ধের পর লিগ টেবলের যে ছবিটা দেখা যাচ্ছে, তা দ্বিতীয়ার্ধ শেষ হওয়ার পরেও একই থাকবে কি না, তা এখন থেকে কারও পক্ষে বলাই বোধহয় সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিবারের মতো যদি রোলার কোস্টার রাইড চলতে থাকে লিগের দ্বিতীয়ার্ধে, তা হলে ছবি অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে।
এই ১৩ সপ্তাহে যেমন শুরুর বাধা পেরিয়ে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) রীতিমতো আধিপত্য বিস্তার করে ক্রমশ লিগ টেবলে ক্রমশ উঠে এসেছে শীর্ষে, তেমনই ইস্টবেঙ্গল এফসি-ও (East Bengal) শুরুতে টানা ব্যর্থতার পর তা সামলে উঠতে শুরু করেছে এবং সেরা ছয়ে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তবে কলকাতার আর এক প্রধান মহমেডান এসসি-র (Mohammedan Sporting) অবস্থা একই রকম। তারা উন্নতির চেষ্টা শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু জয়ে ফিরতে পারছে না। এই প্রতিবেদনে দেখে নেওয়া যাক আইএসএলে কলকাতার দলগুলি এ সপ্তাহে কতটা এগোলো , নাকি পিছিয়ে গেল।
অভাবনীয় প্রত্যাবর্তনে স্বপ্ন লাল-হলুদ ব্রিগেডে!
গত শনিবার রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে জামশেদপুর এফসি-কে ১-০-য় হারায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। এই জয়ের ফলে লিগ টেবলে একধাপ ওপরে ওঠে লাল-হলুদ বাহিনী। দুর্দান্ত দলগত পারফরম্যান্স দেখিয়ে এই ম্যাচ জিতে নেয় তারা। স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এর আগেও টানা দু’টি ম্যাচ জিতেছে তারা। ফের টানা দু’টি ম্যাচ জিতে সেরা ছয়ের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায় কলকাতার দল। সপ্তাহের শেষে তারা রয়েছে ১১ নম্বরে।
এর আগের ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ২১ মিনিটে চার গোল করে ৪-২-এ অসাধারণ জয় অর্জন করে তারা। এই অসাধারণ জয় তাদের কতটা আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে, তা এ সপ্তাহের পারফরম্যান্সেই বুঝিয়ে দেয় লাল-হলুদ বাহিনী। গত ম্যাচে প্রথমার্ধে ভাল খেলতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত ফুটবল খেলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু এই ম্যাচে আগাগোড়া আধিপত্য বজায় রেখে ম্যাচ বের করে নেয় তারা। ৬০ মিনিটের মাথায় চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের গোলে ম্যাচ জেতে লাল-হলুদ ব্রিগেড। গত ম্যাচে যাঁর আগমন দলের চেহারা পাল্টে দিয়েছিল, সেই তরুণ ফরোয়ার্ড পিভি বিষ্ণু সে দিন আগাগোড়া অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতে নেন।
সারা ম্যাচে যেখানে ছ’টি শট গোলে রাখে কলকাতার দল, সেখানে ইস্পাতনগরীর দলের দু’টির বেশি শট লক্ষ্যে ছিল না। জামশেদপুরের শক্তিশালী আক্রমণ বিভাগকে কার্যত অকেজো করে রাখে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্স। সাতটি গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল খালিদ জামিলের দল। ইস্টবেঙ্গল দশটি সুযোগ পায়। আলবিনো গোমস পাঁচটি অবধারিত গোল সেভ করেন। সেখানে প্রভসুখন গিলকে দু’টির বেশি শট সেভ করতেই হয়নি।
এই জায়গায় পৌঁছেই ইস্টবেঙ্গল শিবির এ বার প্রথমে ছয়ে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু ছয়ে থাকা দলের চেয়ে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান পাঁচ। তাদের আগামী ম্যাচ হায়দরাবাদে, আগামী শনিবার। এখন যা অবস্থা, তাতে এই ম্যাচে জিততে পারলে কেরালা ব্লাস্টার্স ও চেন্নাইন এফসি-কে টপকে ন’নম্বরে উঠে আসতে পারে লাল-হলুদ বাহিনী। এমনিতেই হায়দরাবাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একেবারেই ভাল না। শেষ পাঁচটি ম্যাচেই হেরে ১২ নম্বরে তারা। কিন্তু শেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল চারটি ম্যাচেই জিতেছে এবং এখন তারা আশার আলো দেখতে শুরু করেছে।
আট ম্যাচ পরে হেরেও শীর্ষে সবুজ-মেরুন বাহিনী!
শীর্ষে বহাল থাকলেও এই সপ্তাহ ইস্টবেঙ্গলের মতো ভাল যায়নি মোহনবাগানের। আট ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর শুক্রবার মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট অবশেষে হারের মুখ দেখে। ২-১-এর ব্যবধানে তাদের হারায় এফসি গোয়া। নিজেদের ঘরের মাঠে গতবারের লিগ শিল্ডজয়ী মোহনবাগানকে হারায় তারা। জোড়া গোল করেন ২৩ বছর বয়সী গোয়ানিজ মিডফিল্ডার ব্রাইসন ফার্নান্ডেজ, যিনি বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধেও গোল করে দলকে জিতিয়েছিলেন।
ম্যাচ সপ্তাহ ১২-য় কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে জয়ের পরই দলের পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা। গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে ফতোরদায় সেই পারফরম্যান্সই ফিরে এল যেন। একাধিক গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন দলের অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন। ম্যাচের পর সে জন্য আফসোস করতেও শোনা যায় তাঁকে। ১২ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে এক নম্বরেই রয়ে গেল বাগান-বাহিনী। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-র ১২ ম্যাচে সংগ্রহ ২৪। বরং এই ম্যাচে জিতে তিন নম্বরে উঠে এল এফসি গোয়া। ১২ ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২২ পয়েন্ট। অর্থাৎ, শীর্ষস্থান দখলের লড়াই ক্রমশ কঠিন হচ্ছে।
আসন্ন ম্যাচে পাঞ্জাব এফসি-র ‘হোম’ নয়াদিল্লির মাঠে নামবে মোহনবাগান। কয়েকদিন আগেই ইস্টবেঙ্গল পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে যে অসাধারণ জয় পেয়েছে,তার বর্ণনা তো আগেই দেওয়া হয়েছে। সেই পাঞ্জাব তার আগে জামশেদপুর এফসি-র কাছেও হারে। অর্থাৎ পরপর দুটি ম্যাচে হারতে হয়েছে তাদের। মোহনবাগানও গত ম্যাচে হেরেছে। এই অবস্থায় দুই দলই জয়ে ফিরতে চাইবে। পাঞ্জাবের জয় চাই সেরা ছয়ে ফেরার জন্য এবং মোহনবাগানের জয় প্রয়োজন শীর্ষস্থান ধরে রাখার জন্য।