কলকাতা: বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে মহমেডান এসসি-র (Mohammedan Sporting Club) কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ বলেছিলেন ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনবেন। শুক্রবার তাঁর দলের পারফরম্যান্সে শুধু পরিকল্পনা নয় মানসিকতাতেও অনেক পরিবর্তন দেখা গেল। গত পাঁচ ম্যাচে যারা হারেনি, সেই সেরা ছয়ের মধ্যে থাকা ওড়িশা এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে পাঁচ ম্যাচ পরে একটি পয়েন্ট অর্জন করল তারা।
এই ম্যাচের আগে অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, এ দিন কিশোরভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে অনায়াসে তিন পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরবে ওড়িশা, তাদের জানিয়ে রাখা যেতে পারে, এই ম্যাচে দিয়েগো মরিসিওরা শুধু যে গোল করতে পারেননি, তা-ই নয়, সারা ম্যাচে একটি শটও তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেনি। বরং মহমেডানের দুই বিদেশির একটি শট ও একটি হেড বারে ধাক্কা না খেলে হয়তো এই ম্যাচ থেকে কলকাতার দলই তিন পয়েন্ট অর্জন করতে পারত।
এর আগের চারটি ম্যাচে যারা হায়দরাবাদকে ছ’গোল দিয়েছে, বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে চার গোল করেছে, মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করেছে এবং ইস্টবেঙ্গলকে ২-১-এ হারিয়েছে, সেই ওড়িশা এফসি-কে সারা ম্যাচে একটিও শট গোলে রাখতে না দেওয়া লিগ টেবলের একেবারে নীচে থাকা দলের পক্ষে যে যথেষ্ট কৃতিত্বের, তা নিশ্চয়ই ফুটবলপ্রেমীদের আলাদা করে বোঝাতে হবে না।
লিগ টেবলে তাদের মধ্যে অবস্থানের ফারাকের কথা মাথায় রেখে এ দিন প্রথমার্ধে কিছুটা দুরন্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে মহমেডান এসসি। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল তারা। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সি গোমেজের একটি দূরপাল্লার শট ও রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা সেন্ট্রাল আফ্রিকান ফরোয়ার্ড সিজার মানজোকির একটি গোলমুখী হেড বারে লেগে ফিরে আসে। উজবেক মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভের একটি লম্বা ও লক্ষ্যে থাকা শট গোলকিপার কোনও রকমে বাঁচান। ভাগ্য সঙ্গে থাকলে এগুলি থেকে অন্তত একটি গোল পেলেও এ দিন ঘরের মাঠে প্রিয় দলের প্রথম জয়টি দেখতে পেতেন মহমেডান সমর্থকেরা।
জিততে না পারলেও ওড়িশার মতো ফর্মে থাকা দলের বিরুদ্ধে সাদা-কালো ব্রিগেডের এই সাহসী ফুটবল দেখে অবশ্যই খুশি হওয়া উচিত তাদের। বিদায়ী বছরের শেষে মহমেডানের এই ঘুরে দাঁড়ানোই হয়তো নতুন বছরে ভাল খবরের ইঙ্গিত দিয়ে রাখল। টানা পাঁচ ম্যাচে পয়েন্টহীন থাকার পর এ দিন এক পয়েন্ট অর্জন করলেও পয়েন্ট টেবলের সর্বশেষ স্থানেই রয়ে গেল তারা। তবে ম্যাচের ৪০ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার ফ্রাঙ্কা ও ৮৩ মিনিটের মাথায় সিজার মানজোকির চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ার ঘটনা চিন্তায় ফেলতে পারে তাদের।
এ দিন ১২টি গোলের সুযোগ তৈরি করে মহমেডান এসসি। প্রতিপক্ষের বক্সে দশবার বল ছোঁয় তারা। সেখানে প্রতিপক্ষের বক্সে ১৫ বার বল ধরা সত্ত্বেও পাঁচটির বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কলিঙ্গবাহিনী। ভাস্কর রায়ের পরিবর্তে নামা মহমেডানের অভিজ্ঞ গোলকিপার পদম ছেত্রীকে এ দিন একটিও বল সেভ করতে হয়নি। ওড়িশার গোলকিপার অমরিন্দর সিংকে অবশ্য দু’বার গোলমুখী শট আটকাতে হয়েছে। মহমেডানকে হয়তো কম গুরুত্ব দেওয়ার খেসারতই এ দিন দিতে হয় ওড়িশাকে। টানা ছয় ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর ১৩ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে এক ধাপ ওপরে চার নম্বরে উঠে এল তারা।
এ দিন ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যায় মহমেডান এসসি। সেট-পিস থেকে বল পেয়ে জো জোহরলিয়ানার জন্য বক্সের মধ্যে একটি ক্রস বাড়ান অ্যালেক্সি গোমেজ। কিন্তু জো-র হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। এর সাত মিনিট পরে গোমেজের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে দেন বিকাশ সিং। কিন্তু ১৮-গজের বক্সের বাইরে থেকে গোলের বাইরে বল পাঠান আর্জেন্তাইন।
পরের দিকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গোমেজ। তাঁকে কেন্দ্র করেই বেশিরভাগ আক্রমণ শানায় মহমেডান এসসি। ২০ মিনিটের মাথায় বক্সের মাঝখানে লালরেমসাঙ্গা ফানাইয়ের জন্য ফের একটি ক্রস দেন গোমেজ। তবে ফানাইয়ের লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেওয়ার রোগ তাঁকে গোল পেতে দেয়নি।
ওড়িশা এফসি-র বল পজেশন বেশি থাকলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে হিমশিম খেয়ে যায় তারা। মাঠের নিয়ন্ত্রণ দ্রুত নিজেদের দিকে নিয়ে আসার পর ৬৬তম মিনিটে গোমেজ ফের আক্রমণে নেমে পড়েন। বিকাশের সঙ্গে বাঁ উইংয়ে দ্রুত পাস দেওয়া-নেওয়া করে জোরালো শট নেন তিনি, যা ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে।
এর সাত মিনিট পরে, মহমেডান এসসি প্রতিপক্ষের রক্ষণকে আরও চাপে ফেলে দেয়, যখন কর্নার থেকে ইরশাদ একটি বল পান এবং সিজার মানজোকির জন্য একটি মাপা ক্রস পাঠান। মানজোকির হেড ক্রসবারে লাগে। ম্যাচের শেষ দিকে ওড়িশা এফসি গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও ছন্দে ফেরা সাদা-কালো ব্রিগেডের দুর্ভেদ্য রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি তারা। (সৌ: আইএসএল)
আরও পড়ুন: মাঠেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত স্টিভ স্মিথের! বক্সিং ডে টেস্টে সেঞ্চুরির পর কী বললেন?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।