কলকাতা: গোল না খেলে আবার কীসের হার? অনেক ফুটবল দলের কোচেরাই এই দর্শনে বিশ্বাসী। তাঁরা মনে করেন, রক্ষণকে আঁটোসাঁটো রেখে যত বেশি ম্যাচে ‘ক্লিন শিট’ বজায় রাখা যাবে, ততই হারের সম্ভাবনা কমবে। কিন্তু গোল না খেয়ে মাঠ ছাড়তে হলে তো প্রয়োজন দুর্ভেদ্য গোলকিপারও। তাই মরশুম শুরুর আগে কোচেরা দেখে নেন, তাঁদের দলের গোলরক্ষক কে, কী রকম। আসন্ন আইএসএল মরশুমেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ গোলকিপাররা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। ১৩টি দলে প্রায় ৪০ জন গোলকিপার থাকবেন এ বারের আইএসএলে। সবাইকেই যে ম্যাচে দেখা যাবে, তার কোনও মানে নেই। বেশির ভাগই থাকবেন রিজার্ভ বেঞ্চে। যাদের মাঠে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাঁদের মধ্যে গোল্ডেন গ্লাভ খেতাবের লড়াইয়ে থাকতে পারেন যাঁরা, তেমনই পাঁচজন গোলপ্রহরীদের দিকে নজর দেওয়া যাক।
বিশাল কয়েথ, মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
সবুজ-মেরুন শিবিরের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গোলকিপার বিশাল। ২৮ বছর বয়সী এই পাঞ্জাবী গোলকিপার গত মরশুমে ২৫টি ম্যাচ খেলে ন’টি ম্যাচে কোনও গোল খাননি। মোট ৫০টি গোল সেভ করেন তিনি। সেভ পার্সেন্টেজ বা তাঁর গোলের দিকে আসা মোট শটের যত শতাংশ শট তিনি আটকেছেন, তার হার ছিল ৬১। সব মিলিয়ে ৩১টি গোল খেয়েছেন তিনি। এমন পরিসংখ্যান যে গোলকিপারের, তাঁকে যে কোনও দলের কোচই মাথায় করে রাখবেন। তাই এ বার মোহনবাগানের কোচ বদল হলেও গোলকিপার বদল হয়নি।
ফুর্বা লাচেনপা, মুম্বই সিটি এফসি
বাইচুং ভুটিয়ার পর সিকিম থেকে উঠে আসা ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক এই ফুর্বা লাচেনপা। গত আইএসএল মরশুমে মুম্বই সিটি এফসি-র কাপ জয়ের সাফল্যে তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ২২টি ম্যাচের মধ্যে ন’টিতে ক্লিন শিট বজায় রাখেন তিনি। ওডিশা এফসি-র অমরিন্দর সিং ও
মোহনবাগানের বিশাল কয়েথও ন’টি করে ক্লিন শিট রাখেন। কিন্তু তাঁরা আরও বেশি ম্যাচে খেলেন। ফলে ফুর্বাই সেরা গোলকিপার নির্বাচিত হন এবং গোল্ডেন গ্লাভ জিতে নেন। তবে সেভ-এর সংখ্যায় তিনি অন্যান্যদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। ২২ ম্যাচে মাত্র ৪২টি গোল সেভ করেন তিনি।
গুরপ্রীত সিং সান্ধু, বেঙ্গালুরু এফসি
ভারতীয় ফুটবলে এই মুহূর্তে সবচেয়ে অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত, যিনি বেঙ্গালুরু এফসি-র পুরনো যোদ্ধা। ২০১৭-য় বেঙ্গালুরু এফসি-তে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ৩২ বছর বয়সেও ক্রসবারের নীচে তিনি সর্বদা অতন্দ্র। গতবার লিগে ২২টি ম্যাচে ৭০টি সেভ করেছিলেন, যা সবচেয়ে বেশি সেভ-এর তালিকায় ছিল দু’নম্বরে। তাঁর সেভ পার্সেন্টেজও ছিল প্রশংসা করার মতো, ৬৭%। কিন্তু ক্লিন শিট বজায় রাখতে পেরেছিলেন মাত্র পাঁচটি ম্যাচে। ৩৪টি গোলও খেয়েছিলেন, যা তাঁর আইএসএল কেরিয়ারে এক মরশুমে সর্বোচ্চ। ১৩৮টি আইএসএল ম্যাচ খেলা ১৯৭ সেন্টিমিটার উচ্চতার এই দুরন্ত গোলকিপার এখনও
ভারতীয় দলের নিয়মিত সদস্য।
অমরিন্দর সিং, ওডিশা এফসি
ভারতীয় ফুটবলে তাঁকে দ্বিতীয় সেরা গোলকিপার বলা যেতে পারে। জাতীয় দলে গুরপ্রীতের এক নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বীও হয়ে উঠেছেন ১৮৬ সেন্টিমিটার উচ্চতার এই পাঞ্জাবী গোলকিপার। গতবার আইএসএলে সবচেয়ে বেশি সেভ করেছিলেন তিনিই। ২৪টি ম্যাচে ৮১টি সেভ করেন অমরিন্দার, যা তাঁর আইএসএল কেরিয়ারে একই মরশুমে সর্বোচ্চ। ক্লিন শিটও রাখেন সর্বোচ্চ ন’টি ম্যাচে। তবে মুম্বই সিটি এফসি-র ফুর্বা লাচেনপা তাঁর চেয়ে দু’টি ম্যাচ খেলে একই সংখ্যক ক্লিন শিট রাখায় গোল্ডেন গ্লাভ আর জেতা হয়নি অমরিন্দারের। তবে গোলকিপার হিসেবে তাঁর সামগ্রিক পারফরম্যান্স ছিল প্রশংসনীয়। সেভ পার্সেন্টেজ ছিল ৭৭%। এই পরিসংখ্যানও তাঁর আইএসএল কেরিয়ারে সেরা।
প্রভসুখন সিং গিল, ইস্টবেঙ্গল এফসি
গত মরশুমে
ইস্টবেঙ্গল এফসি-র কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত তাদের কম গোল খাওয়া নিয়ে যে গর্ব করেছিলেন, তার অনেকটাই তাঁর দলের গোলকিপার প্রভসুখন গিলের জন্য। গতবার গিল ২১টি ম্যাচে সাতটি ক্লিন শিট রাখেন এবং ২৫টি গোল হজম করেন। সেভ করেন ৫৪টি এবং সেভ পার্সেন্টেজ ছিল ৬৮%। যে চারটি আইএসএলে খেলেছেন তিনি, তার মধ্যে সবচেয়ে ভাল পারফরম্যান্স ছিল গতবারেই। এর আগে বেঙ্গালুরু এফসি ও কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে খেলা প্রভসুখনের পিছন থেকে দলের সতীর্থদের সঠিক ভাবে গাইড করা ও উৎসাহ জোগানোর দুর্দান্ত ক্ষমতা রয়েছে।