কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (Indian Super League) টানা দুই মরশুমে লিগশিল্ড জিতে তারা ইতিহাস গড়েছে। এ ছাড়াও এ মরশুমে তারা যে রকম দাপুটে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, তাতে নজিরের ছড়াছড়ি। কিন্তু অদূর ও সুদূর অতীতে তাদের এমন কিছুও আছে যা অনেকেই মনে রাখতে চায় না।

যেমন, গতবার দ্বিমুকুট জয়ের সুযোগ হাতছাড়া করা, সেমিফাইনালের প্রথম লেগে জামশেদপুর এফসি-র কাছে প্রায় আত্মসমর্পণ করে হারা। আজ পর্যন্ত ঘরের মাঠে আইএসএল কাপ জিততে না পারার প্রথা নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। কিন্তু অতীতের ভাল, খারাপ কোনও কিছুকেই মনে রাখতে চান না মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা ও তাদের বঙ্গীয় অধিনায়ক শুভাশিস বসু।

শুক্রবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে যখন এই অতীতের প্রসঙ্গই ঘুরে ফিরে আসে, তখন তা প্রায় উড়িয়ে দিয়ে কোচ মোলিনা বলেন, 'অতীতে কী হয়েছে, তার পরোয়া করি না আমি। এখানে আমরা লড়াই করতে এসেছি, নিজেদের সেরা খেলা খেলতে এসেছি এবং জিততে এসেছি। অতীতে কী হয়েছে, না হয়েছে, তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। অতীতের ঘটনা আমার মাথায় নেই। কাল আমরা ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে খেলতে নামব। আমাদের দলটা দুর্দান্ত। কাল আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। একমাত্র এই কথাই মাথায় রয়েছে আমাদের। আর কিছু নেই।'

মাস দেড়েক আগে এই যুবভারতীতেই ওড়িশা এফসি-কে হারিয়ে লিগ শিল্ড জিতেছে তাঁর দল। এ বার সামনে আরও এক খেতাবের হাতছানি। দ্বিমুকুট জয় করতে পারলে আইএসএলের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক প্রতিষ্ঠা করতে পারবে তারা, যে নজির ভাঙতে হয়তো অনেক সময়ও লেগে যাবে। মোলিনা মনে করেন, তাঁর দলের ছেলেদের উজ্জীবিত হয়ে ওঠার এর চেয়ে বড় কারণ আর কিছুই হতে পারে না, এটিই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন।

এই প্রসঙ্গে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'এই ম্যাচ খেলার জন্য যথেষ্ট মোটিভেশন আছে। মোটিভেশনের দিক থেকে আমরা সেরা জায়গায় রয়েছি বলতে পারেন। এর চেয়ে বেশি মোটিভেশন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কারণ, আমরা শিল্ড জিতেছি। সেমিফাইনালে আমরা খুব কঠিন লড়াই জিতে এখানে এসেছি এবং এখন দ্বিমুকুট জেতার জন্য আমাদের আরও একটা ট্রফি জিততে হবে, যা হবে এক ঐতিহাসিক সাফল্য। এর চেয়ে বেশি মোটিভেশন আর কী হতে পারে”? এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'মোহনবাগানে আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। শিল্ড জেতার পরে কাপ জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রেরণা পেয়েছে আমাদের ছেলেরা। এর চেয়েও বেশি মোটিভেশনের প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। দ্বিমুকুট জয়ের জন্য একশো শতাংশ উজ্জীবিত আমাদের ছেলেরা।'

সেমিফাইনালে এক কঠিন প্রতিপক্ষ জামশেদপুরকে হারিয়ে এ বার ফাইনালে বেঙ্গালুরু এফসি-র সামনে তারা। ফাইনালে জামশেদপুরকে সামনে পেলে বেশি খুশি হতেন কি না, জানতে চাইলে সবুজ-মেরুন কোচ বলেন, 'জামশেদপুরের বিরুদ্ধে খেলা আর বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলা এক নয়। ওরা অন্য ধরনের দল, ওদের ফুটবলাররা অন্য রকমের, ওদের ফুটবল-দর্শন আলাদা, খেলার স্টাইল আলাদা। সব কিছুই আলাদা। কাউকে আলাদা করে পছন্দ করার মানসিকতা আমার নেই। আমরা প্রতিপক্ষকে সন্মান দিই। অন্য কোনও দল হলেও তাদের একই রকম সন্মান করতাম। কারণ, এই জায়গাটা ওদের অবশ্যই প্রাপ্য। কোন প্রতিপক্ষ হলে ভাল হত, এ সব নিয়ে আমি ভাবি না। কারণ, এতে কিছু হয় না। প্রত্যেক দলই নিঃসন্দেহে কঠিন। আর ফাইনালে উঠলে কার বিরুদ্ধে খেলছি, তার কোনও গুরুত্ব থাকে না। ম্যাচটা সত্যিই খুব কঠিন হবে। বেঙ্গালুরু এফসি কী রকম দল, তা ওরা সারা মরশুমেই প্রমাণ করেছে। তবে আমরাও প্রতিপক্ষ হিসেবে যথেষ্ট কঠিন। আমাদেরও একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।'

দলের অধিনায়ক শুভাশিস বসুও অনেকটা কোচের সুরেই সুর মিলিয়ে বলেন, 'গত মরশুমে আমাদের পারফরম্যান্স যে রকম হয়েছিল, তা তো আর বদলানো সম্ভব নয়। যা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। এখন আমরা বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ম্যাচে মনোনিবেশ করছি। গত বছর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলেছিলাম, এ বার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে খেলছি। দুই দল সম্পুর্ণ আলাদা। আমরা ম্যাচটা জিততে চাই এবং সে জন্যই এই ম্যাচে মনোনিবেশ করছি। আমরা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি ভাবতে চাই। এটা ঠিকই যে, গত ম্যাচে আমরা ভুল করেছিলাম বলেই আমাদের গোল খেতে হয়েছিল। তবে এই জায়গায় আমরা উন্নতি করব এবং ম্যাচটাও জিতব।' গত বছরের মতো এ বারও ফাইনাল খেলতে নামছেন ঘরের মাঠে, সমর্থকদের সামনে। সেই অনুভূতি নিয়ে সফল অধিনায়ক শুভাশিস বলেন, 'ঘরের মাঠে সমর্থকদের সামনে এই ম্যাচটা খেলতে মুখিয়ে রয়েছি। আমি চাই সমর্থকেরা আমাদের পুরোপুরি সমর্থন করুক। কলকাতায় খেলা সব সময়ই স্পেশাল। ফাইনালে খেলতে নামলেই আমরা সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী থাকি। আমি টানা তিন মরশুমে আইএসএল ফাইনাল খেলেছি। ম্যাচের দিন যে দল কম ভুল করে এবং প্রতিপক্ষের চেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারে, তারাই জেতে। আশা করি, আমরা কাল ওদের চেয়ে ভাল খেলব এবং জিতব।' (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)