কলকাতা: মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (Mohun Bagan Super Giant) মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে গ্যালারি ভর্তি সমর্থকের সামনে থেকে লিগ শিল্ড জিতে নিয়ে যাওয়াটা যে মোটেই সোজা কাজ নয়, তা স্বীকার করে নিলেন মুম্বই সিটি এফসি- কোচ পিটার ক্রাতকি ও অধিনায়ক রাহুল ভেকে।

সোমবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বনাম মুম্বই সিটি এফসি ম্যাচেই নির্ধারিত হবে আইএসএল টেবলের এক নম্বর দল হিসেবে কারা শেষ করবে এবং লিগশিল্ড জিতে কারা আগামী বছর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে সরাসরি খেলার ছাড়পত্র পাবে। শীর্ষে থাকা মুম্বই সিটি এফসি ও মোহনবাগানের মধ্যে আপাতত মাত্র দু’পয়েন্টের পার্থক্য। অর্থাৎ শীর্ষে উঠতে গেলে মোহনবাগানকে শেষ ম্যাচে জিততেই হবে। কিন্তু মুম্বই সিটি এফসি-র পক্ষে ড্র-ই যথেষ্ট।

ঘরের মাঠে, নিজেদের সমর্থকদের সামনে মোহনবাগান যে যথেষ্ট উজ্জীবিত হয়ে মাঠে নামবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে এই ম্যাচে জেতা মোটেই সোজা কাজ হবে না। তাদের শুধু যে প্রতিপক্ষের এগারোজন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, তা নয়, লড়তে হবে প্রতিপক্ষের প্রায় হাজার পঞ্চাশ সমর্থকের বিরুদ্ধেও। সে জন্যই মুম্বইয়ের কোচ ক্রাতকির ধারণা, কাজটা বেশ কঠিন হতে চলেছে।

শনিবার মুম্বই থেকে কলকাতা রওনা হওয়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “খুবই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি এখন। আমি যদিও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী আমাদের সাফল্য নিয়ে। কারণ, আমাদের দলটা খুব ভাল। আমাদের খেলোয়াড়দের এই পরীক্ষায় পাস করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু আমাদের পরিশ্রম করতে হবে। কারণ, ম্যাচটা মোটেই সোজা নয়। মোহনবাগান ভাল দল, ওরা ঘরের মাঠে খেলছে। সব রকম সুবিধাই ওরা পাবে। আমাদের প্রথম মিনিট থেকে শেষ মিনিট পর্যন্ত সঙ্ঘবদ্ধ থেকে লড়াই করতে হবে”।

প্লে অফের কোনও ম্যাচেরই সমান গুরুত্ব পিটার দিতে চান সোবারের ম্যাচকে। বলেন, “এই ম্যাচটা ফাইনাল, সেমিফাইনালে মতোই। জিততেই হবে। ড্র করতে চাই না, এই ধরনের ম্যাচে জিততেই চাই আমরা। সে জন্য পরিশ্রম চাই, নিজেদের সেরাটা দেওয়া চাই। তার পরে যা হবে, হবে। এই মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামতে হবে আমাদের। এই ম্যাচে অনেকটাই মানসিক শক্তির লড়াই হবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা পারব এই লড়াই জিততে। সমর্থকদের কথা দিচ্ছি, লিগশিল্ড জেতার জন্য আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করব”।

গতবারের লিগশিল্ডজয়ী মুম্বই সিটি এফসি-র অধিনায়ক রাহুল ভেকে-ও কোচের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, “এই ম্যাচের আগে আমাদের আরও দুটো ট্রেনিং সেশন হবে। এই দুটো সেশন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগেও আমরা ভাল অনুশীলন করেছি। সব সময়ই আমাদের ইতিবাচক মনোভাব থাকে। একে অপরকে সমর্থন করি। কলকাতায় অন্তত ৩০-৪০ হাজার দর্শক থাকবে, যারা মোহনবাগানের হয়ে গলা ফাটাবে। সেখানে আমাদের ৩০ জনকে ওদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকাটা খুবই জরুরি। দলের সতীর্থদের উদ্দেশ্যে আমার বার্তা থাকবে, সঙ্ঘবদ্ধ থাকতে হবে আমাদের, একে অপরকে সাহায্য করতে হবে, অনুশীলনে একে অপরকে উজ্জীবিত করে তুলতে হবে এবং মাঠে নেমে ইতিবাচক থাকতে হবে আমাদের”।

চলতি মরশুমের শুরু থেকে দলের প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন কোচ ডেস বাকিংহাম। কিন্তু মরশুমের মাঝখানে তিনি দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান এবং তাঁর জায়গায় আসেন ক্রাতকি। মোহনবাগানের আন্তোনিও লোপেজ হাবাসও মরশুমের মাঝপথেই দলের হাল ধরেন। সে দিক থেকে দুই দলই প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। কোচ বদলালেও নতুন কোচের পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে দুই দলের খেলোয়াড়দেরও।

মোহনবাগানে কোচ বদলের প্রভাব নিয়ে ক্রাতকি বলেন, “হাবাস মরশুমের মাঝখানে যোগ দেওয়ায় ওদের খেলায় পরিবর্তন তো কিছু এসেছেই। অন্তর্বর্তী কোচেরা দায়িত্বে এসে ফরমেশনে কিছুটা বদল আনেন। মোহনবাগান দলে ভাল ভাল বিদেশী ও দেশীয় ফুটবলার আছে। তাই ওরা মরশুমের মাঝখানে খারাপ সময় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এখন খেতাবের জন্য লড়ছে। কোচ বদলের পরে ওরা অনেক উন্নতি করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নতি করছে”।

তিনিও মুম্বইয়ের দলের দায়িত্ব নেন মরশুম চলাকালীন। মাঝখানে এলেও তাঁর দলের হাল ধরতে কোনও অসুবিধা হয়নি বলেই জানান ক্রাতকি। বলেন, “আমিও মরশুমের মাঝখানেই এসেছি। কিন্তু যখন আসি, তখন বেশিরভাগ কাজটাই এগিয়ে রেখেছিলেন ডেস বাকিংহাম ও তার স্টাফ। ফলে আমার খুব একটা অসুবিধা হয়নি। আমার কাজ ছিল দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং দলের খেলোয়াড়দের সাহায্য করা এবং সেরার জায়গায় নিয়ে যাওয়া। সেটা পেরেছি, ভাল লাগছে। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, অনেকটা কাজই এগিয়ে রেখে গিয়েছেন ডেস”।

লিগশিল্ডের দোরগোড়ায় এসে এখন পিছন দিকে তাকিয়ে সেখান থেকেও প্রেরণা নিতে চান মুম্বই সিটি এফসি-র কোচ। বলেন, “লিগশিল্ড জেতাটা অবশ্যই জরুরি। কিন্তু পুরো মরশুমে আমরা কী করলাম, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মরশুমটা খুব ভাল কেটেছে। এটা দ্বিতীয় মরশুম, যখন আমরা শিল্ডের জন্য লড়াই করছি। সারা মরশুমেই আমরা এ বার ভাল খেলেছি। এটাই যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তা নয়। যে ম্যাচগুলোর জন্য এখানে আসতে পেরেছি, সেগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। যেমন ওডিশা, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচগুলো। একই রকম গুরুত্বপূর্ণ মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এই ম্যাচও। আমরা এই ম্যাচের জন্য তৈরি”।

দলের অন্যতম সেরা ভারতীয় অ্যাটাকার বিক্রম প্রতাপ সিং কার্ড সমস্যার জন্য এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তবে সে জন্য খুব একটা চিন্তিত নন ক্রাতকি। বলেন, “যে কোনও খেলোয়াড়ই খেলতে না পারলে খারাপ লাগে। তবে আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চ যথেষ্ট শক্তিশালী, এটা আমাদের একটা বড় সুবিধা। বিপিন, গুরকিরাত, যে-ই ওদের জায়গায় সুযোগ পাক, ওরা ভাল খেলবে। কারণ, ওরাও দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ওরা দলকে জেতাতে চায়”।

যুবভারতীর ভরা গ্যালারির সামনে মোহনবাগানকে হারাতে গেলে যে যথেষ্ট চাপ সামলাতে হবে তাদের, তা ভাল করেই জানেন অধিনায়ক রাহুল ভেকে। তাই এই ম্যাচে তাদের মানসিক শক্তির বড় পরীক্ষা হবে বলেই মনে করেন তিনি। যদিও ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে পছন্দ করেন তিনি। কলকাতায় ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা থাকা রাহুল বলেন, “ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে আমার ভাল লাগে। আরও ভাল লাগে তাদের কাছ থেকে সমর্থন পেলে। কিন্তু তারা যখন বিপক্ষে থাকে, তখনই মানসিক শক্তির পরীক্ষা দিতে হয়। সারা ম্যাচে ৯০ মিনিট ধরে আমরা মানসিক ভাবে কতটা শক্তিশালী থাকতে পারব, সোমবারের ম্যাচে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।

দুই দলের খেলোয়াড়দের মানসিক শক্তিই সোমবারের ম্যাচের প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন মুম্বই অধিনায়ক। বলেন, “প্রতিপক্ষকে গোল থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং নিজেদের গোল করতে এই মানসিক শক্তি খুবই জরুরি। এরকম প্রচুর এবং অশান্ত দর্শকের সামনে খেলাটাই তো ফুটবলারদের আসল পরীক্ষা। তবে আমাদের দলের সবচেয়ে বড় শক্তি সঙ্ঘবদ্ধ থাকার প্রবণতা ও লড়াকু মানসিকতা। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আসার পরেও ৪৭ পয়েন্ট অর্জন করেছি আমরা, যা এক নজির। তাই আশা করি, মোহনবাগানকে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারব আমরা”।

ডিসেম্বরে এ মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে মুম্বই ফুটবল এরিনায় গতবারের নক আউট চ্যাম্পিয়নদের ২-১-এ হারায় গতবারের লিগশিল্ডজয়ীরা। প্রথমার্ধে জেসন কামিংসের গোলে এগিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সেই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি মোহনবাগান। ৪৪ মিনিটে সমতা আনেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট এবং ৭৩ মিনিটে বিপিন সিংয়ের দেওয়া গোলে জয় পায় আরব সাগরপাড়ের দল। আইএসএলের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কখনও মুম্বই সিটি এফসি-কে হারাতে পারেনি মোহনবাগান। এ বারই তাদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ জিতে প্রথমবার লিগ শিল্ড জয়েরও সুবর্ণ সুযোগ এসেছে মোহনবাগানের সামনে। (তথ্যসূত্র - ISL Media)


আরও পড়ুন: বন্ধুই যখন শত্রু! গুরু গম্ভীরের চালেই কি ইডেনে লখনউয়ের বিরুদ্ধে বাজিমাত কেকেআরের?




আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।