কলকাতা: বাংলার নববর্ষের শুরুতে ঘরের মাঠে একটা পরীক্ষায় পাস করলেও মোহনবাগানকে (Mohun Bagan Super Giant) মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই আবার একটা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আগেরবার মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়ে লিগশিল্ড জিতেছিল তারা। এ বার ওড়িশা এফসি-কে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠার পরীক্ষায় নামতে হচ্ছে তাদের।


পরীক্ষার মুখে ওড়িশা এফসি-ও। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তাদের দাপুটে জয় জলে চলে যাবে, যদি দ্বিতীয় লেগে তারা হারে। লড়াইটা দুই দলের হলেও রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ফুটবলপ্রেমীদের নজর থাকবে কয়েকটি ব্যক্তিগত দ্বৈরথের দিকে, যেগুলির ওপর নির্ভর করবে ম্যাচের গতিবিধি। কার সঙ্গে কার লড়াই চরমে উঠতে পারে এই ম্যাচে, তা দেখে নেওয়া যাক।


হেক্টর ইউস্তে বনাম রয় কৃষ্ণা 


এই যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং মোহনবাগানের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ইউস্তে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তিনি বলেছেন, এই ম্যাচে রয় কৃষ্ণাকে কোনও অবস্থাতেই গোল করতে দেবেন না। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ইউস্তের ভুলকে কাজে লাগিয়েই জয়সূচক গোল করেছিলেন ফিজিয়ান স্ট্রাইকার। কিন্তু এ বার আর গোলের সামনে কোনও ভুল করবেন না বলে শপথ করেছেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। কিন্তু গোলের জন্য রয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকবে ওড়িশা এফসি। এ পর্যন্ত দলের হয়ে ১৩টি গোল ও তিনটি অ্যাসিস্ট করেছেন মোহনবাগানের এই প্রাক্তন তারকা।


দীর্ঘকাল যুবভারতীতে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এই আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতা তাঁকে রবিবারের ম্যাচে আরও একবার জ্বলে উঠতে সাহায্য করবে। কিন্তু ইউস্তে দমবার পাত্র নন। এ পর্যন্ত সাতটি ম্যাচে দলকে ক্লিন শিট রাখতে সাহায্য করেছেন তিনি। ২৮টি ইন্টারসেপশন করেছেন, ১৯ ট্যাকলে জিতেছেন, ৯৮টি ডুয়েলেও সফল হয়েছেন, উড়ন্ত বলের ডুয়েলে সাফল্য পেয়েছেন ৫৪বার। ১৫ বার ব্লক করেছেন ও ১১৩বার খোয়া যাওয়া বল পুনরুদ্ধার করেছেন। ৭৭টি ক্লিয়ারেন্স আছে তাঁর। এমনকী, একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। ডিফেন্ডার হিসেবে এই পরিসংখ্যানগুলি মোটেই অবহেলা করার মতো নয়। এমন এক ডিফেন্ডারের সঙ্গে রয় কৃষ্ণার মতো দুর্ধর্ষ ফরোয়ার্ডের লড়াই জমে ওঠার সম্ভাবনা অবশ্যই আছে।


দিমিত্রিয়স পেট্রাটস বনাম আহমেদ জাহু


যেহেতু এই ম্যাচে নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার কার্লোস দেলগাদোকে পাবে না ওড়িশা এফসি, তাই আহমেদ জাহুকেই হয়তো কিছুটা নীচে নেমে নিজেদের গোল এলাকা পাহাড়া দিতে দেখা যাবে। সেক্ষেত্রে মোহনবাগানের গোলমেশিন দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে রোখার দায়িত্ব হয়তো তাঁকেই দেবেন ওড়িশার কোচ সের্খিও লোবেরো। দু’জনেই দুই দলের প্রথম একাদশে অবধারিত বাছাই এবং দুই কোচের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যদের তালিকায় ওপরের দিকেই থাকবেন। রবিবার যুবভারতীতে এই দুই বিদেশী তারকার দ্বৈরথ দেখা যেতে পারে। মোহনবাগানের চাই গোল ও জয় এবং ওড়িশার চাই ড্র। তা হলেই তারা ফাইনালের টিকিট পেয়ে যাবে।


এই ম্যাচে যে গোল করার বা করানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবেন দশ গোলের মালিক ও সাতটি অ্যাসিস্ট দেওয়া পেট্রাটস, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁকে আটকানোর কাজে কতটা সফল হবেন জাহু, এটাই আকর্ষণীয় বিষয়। এ মরশুমে দুর্দান্ত অলরাউন্ড ফুটবল খেলেছে মরক্কোর এই মিডফিল্ডার। যেমন দুটি গোল ও চারটি অ্যাসিস্ট দিয়ে দলের আক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তেমনই ৩৩টি ইন্টারসেপশন, ৩১টি ক্লিয়ারেন্স, ১৮৯ বার বল পুনর্দখল করে দলের রক্ষণেও মদত দিয়েছেন। মূলত মাঝমাঠ থেকে গোলের সুযোগ তৈরি করা ও স্ট্রাইকারদের গোলের পাস বাড়ানোই তাঁর কাজ। কিন্তু এই ম্যাচে জাহুকে রক্ষণাত্মক ফুটবলই হয়তো বেশি খেলতে হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে দিমি-কে আটকানো।    


লিস্টন কোলাসো বনাম অমেয় রানাওয়াডে


ওড়িশার ডান প্রান্ত, যা মোহনবাগানের বাঁ প্রান্ত হতে চলেছে, সে দিক দিয়ে লিস্টন কোলাসো যে বারবার আক্রমণে ঝড় তুলবেন মোহনবাগানের লেফট উইঙ্গার লিস্টন কোলাসো, এমন সম্ভাবনাই প্রবল। গত কয়েকটি ম্যাচে সে রকমই দেখা গিয়েছে। এই প্রান্ত দিয়ে উঠে কাট ইন করে বক্সে ঢুকে নাকল শটে তাঁকে গোল করতে দেখা গিয়েছে অনেকবার। কোলাসোর এই পথটাকে নিশ্চয়ই বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টায় থাকবে ওড়িশা এফসি। আর এই কাজে যাঁকে দায়িত্ব দেবেন লোবেরো, তিনি হলেন অমেয় রানাওয়াডে। প্রথম লেগেও একই দায়িত্বে ছিলেন ২৬ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডার। তিনি তাঁর দায়িত্বে বেশ কিছুটা সফলও হন। কোলাসোকে তিনি ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই আটকে রেখেছিলেন। রবিবারও তাঁকে সম্ভবত একই ভূমিকায় দেখা যাবে।


ঘরের মাঠে গত ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে হাবাসের অন্যতম সেরা অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন কোলাসো। শুরুতেই গোল করে তিনি দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। এই ম্যাচেও শুরু থেকেই তিনি সেই চেষ্টাই করবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু তা হতে না দেওয়ার জন্য যা করার, তার পুরোটাই হয়তো করবেন রানাওয়েডে। তাঁর এই দক্ষতাকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন ওড়িশার কোচ। সবুজ-মেরুন উইঙ্গারের হঠাৎ তোলা গতি ও নিখুঁত দূরপাল্লার পাস আটকাতে গিয়ে অবশ্য রানাওয়াডে আর আক্রমণের দিকে যেতে পারবেন না। তবে রানাওয়াডেকে কী ভাবে এড়িয়ে বা ধোঁকা দিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে  ঢুকে পড়বেন কোলাসো, সেই পাঠ নিশ্চয়ই তাঁকে পড়িয়ে নিয়েছেন হাবাস। (তথ্যসূত্র: ISL মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।