কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (ISL) কখনও পরপর দু’টি ম্যাচ জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। বৃহস্পতিবার জামশেদপুরে সেই প্রথা ভাঙার জায়গায় গিয়েও ফিরে আসতে হল তাদের। ৮০ মিনিট পর্যন্ত এক গোলে এগিয়ে থাকার পর ৮১ মিনিট ও স্টপেজ টাইমের সাত মিনিটের মাথায় গোল খেয়ে হারতে হল তাদের। 


ম্যাচের শেষ ১৬ মিনিটের মধ্যে জামশেদপুর দু’টি গোল করার আগেই ব্যবধান বাড়ানোর একাধিক সহজ সুযোগ পায় লাল-হলুদ বাহিনী। সেই সুযোগগুলি হাতছাড়া করার মাশুলই এ দিন দিতে হল কার্লস কুয়াদ্রাতের দলকে, যারা এই ম্যাচ জিতলে ইস্পাতনগরীর দলকে টপকে সাত নম্বরে উঠে যেত। কিন্তু তা হতে দিল না, লাল-হলুদের প্রাক্তনীতে ভরা দলটি। 


এই হারের ফলে ইস্টবেঙ্গল আট নম্বরেই রয়ে গেল। সাত নম্বরে থাকা নর্থইস্টের চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে তারা। যদিও একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে নর্থইস্ট। আর ছ’নম্বর জামশেদপুর এফসি তাদের চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে। যদিও জামশেদপুর তাদের চেয়ে দু’টি ম্যাচ বেশি খেলে ফেলেছে। ফলে ইস্টবেঙ্গলের সেরা ছয়ে প্রবেশ করার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। 


এ দিনের ২-১-এ জয় জামশেদপুর এফসি-কে সেরা ছয়ে ফিরিয়ে দিল। বুধবার এফসি গোয়াকে হারিয়ে তাদের টপকে এই জায়গাটা দখল করেছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড। বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ফের তাদের ছ’নম্বর জায়গাটা ছিনিয়ে নিল প্রাক্তন লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়নরা। 


জেআর ডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এ দিন প্রথমার্ধে মূলত জামশেদপুরই দাপট দেখালেও সেই অর্ধের বাড়তি সময়ে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা উইঙ্গার নন্দকুমার শেখর। দ্বিতীয়ার্ধে জামশেদপুর সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও ইস্টবেঙ্গল সমানে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং একাধিক সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে। এই ব্যর্থতারই খেসারত তাদের দিতে হয় ম্যাচের শেষ দিকে জাপানি মিডফিল্ডার রে তাচিকাওয়া ও স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে ফরাসি মিডফিল্ডার জেরেমি মানজোরো গোল করে দেওয়ায়। 


এ দিন নাওরেম মহেশ সিং, অজয় ছেত্রী ও নবাগত বিদেশী ডিফেন্ডার আলেকজান্দার প্যানটিচকে প্রথম এগারোয় রেখে দল নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। ৪-২-৩-১-এ দল সাজান তিনি। অন্য দিকে, সদ্য ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে জামশেদপুর শিবিরে যোগ দেওয়া স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও ইস্পাতনগরীর দলের হয়ে এই ম্যাচেই প্রথম শুরু থেকে মাঠে নামেন। ৪-৪-১-১-এ খেলা শুরু করে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তনী খালিদ জামিলের দল।  


ঘরের মাঠে শুরু থেকেই টানা আক্রমণ শুরু করে জামশেদপুর। ইমরান খান, মহম্মদ শনন, ড্যানিয়েল চিমা, হাভিয়ে সিভেরিও, জেরেমি মানজোরোদের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। লাল-হলুদ রক্ষণে এ দিন প্রচুর ফাঁক দেখা যায়, যেগুলি কাজে লাগান জামশেদপুরের অ্যাটাকাররা। 


প্রথমার্ধে সাতটির মধ্যে তিনটি শট গোলে রেখেও কোনও গোল পায়নি জামশেদপুর এফসি। তিনটিই সেভ করেন লাল-হলুদ গোলকিপার প্রভসুখন গিল। সিভেরিও, চিমা ছাড়াও একটি কর্নার থেকে গোলে শট নেন ডিফেন্ডার লালদিনপুইয়া। যে তিনটি শটই সেভ করেন গিল।     


চিমা, মানজোরোর শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়, সিভেরিওর শট বাঁচান গিল, গোললাইন সেভ করেন প্যানটিচ। ইমরান খান ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নিতে যাওয়ার আগে তাঁকে বাধা দেন মাহের। পেনাল্টির আবেদন জানালেও রেফারি তা দেননি। 


৩০ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে ইমরান বক্সে ঢুকে কাট ব্যাক করে বল দেন সিভেরিওকে। তিনি গোলে শট নেন, কিন্তু ব্লক করে দেন শৌভিক চক্রর্বর্তী, প্রতিপক্ষের চাপে যাঁকে এ দিন মাঝমাঠের চেয়ে রক্ষণাত্মক ভূমিকাতেই বেশি দেখা যায়। ৩৮ মিনিটে ডানদিক দিয়ে ওঠা ইমরানের ফরোয়ার্ড পাস পেয়ে বক্সের মধ্যে ডানদিক থেকে কোণাকুনি শট ছিল গোলে, যা আটকে দেন গিল। 


১৬ মিনিটের মাথায় প্রথম সহজ সুযোগ পায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেই সুযোগ মিস করেন নন্দকুমার। ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে দুই ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে বক্সের মাঝখান থেকে বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দেন তিনি। ২১ মিনিটের মাথায় ডানদিক থেকে শৌভিক চক্রবর্তীর সেন্টারে হেড করেন অজয় ছেত্রী, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।  ৩১ মিনিটে ভাজকেজের শট পাঞ্চ করে বের করে দেন রেহনেশ। 


এ দিন বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারলেও প্রথমার্ধের শেষে গোলটি পেয়ে যায় তারাই। স্টপেজ টাইমের দ্বিতীয় মিনিটে বাঁ দিকের উইং থেকে ক্লেটন সিলভা একটি লম্বা ক্রস দেন, যা এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বক্সের ডানদিকে নন্দকুমারের দিকে আসে। তরুণ ডিফেন্ডার ইয়াম্বয় বলটি ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এই সুযোগই কাজে লাগিয়ে নেন নন্দকুমার ও কোণাকুনি শট নেন গোলে, যা রেহনেশের পায়ের নীচ দিয়ে গোলে ঢুকে পড়ে (১-০)। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গলের তিনটির মধ্যে এই একটিই শট ছিল লক্ষ্যে।  


দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে খেলা জমে ওঠে। জামশেদপুর যেমন গোল শোধ করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, তেমনই ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দেয় ইস্টবেঙ্গলও। ৫১ মিনিটে সিভেরিও হেড বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৫৩ মিনিটে ক্লেটনের শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৯ মিনিটের মাথায় মহেশকে বক্সের সামনে গোলে শট নেওয়ার জন্য পাস দেন ক্লেটন। কিন্তু মহেশের শট ব্লক হয়ে যায়। ৬১ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন বিষ্ণু, যা রেহনেশ আটকে দেন। 


ম্যাচের বয়স এক ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পর থেকে ইস্টবেঙ্গল ক্রমশ রক্ষণাত্মক হতে শুরু করে। কিন্তু এই পরিকল্পনা সম্ভবত পছন্দ ছিল না কুয়াদ্রাতের। তাই ব্যবধান বাড়ানোর জন্য ভিক্টর ভাজকেজের জায়গায় ফেলিসিও ব্রাউনকে নামান তিনি। তবে জামশেদপুর এতটাই চাপ বাড়াতে থাকে যে রক্ষণ মজবুত কারা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না ইস্টবেঙ্গলের। গোলের জন্য প্রতি আক্রমণের সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তারা। 


এমনই এক প্রতি আক্রমণে উঠে গোল প্রায় করেই ফেলে ইস্টবেঙ্গল। ৭৫ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে নিশু কুমারের সেন্টারে পরিবর্ত ফরোয়ার্ড পিভি বিষ্ণু হেড করে বল গোলের দিকে পাঠালেও তা পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ইমরানও নিজের গোলের দিকেই বল ঠেলে দেন। এ বারও বল পোস্টে লাগে। এর পরেই কর্নার থেকে গোলে হেড করেন প্যানটিচ, যা আটকে দেন প্রভাত লাকরা। ৮০ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে ক্লেটনের বাড়ানো বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতেও লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন মহেশ। 


এই সুযোগগুলি হাতছাড়া করার মাশুল ইস্টবেঙ্গলকে দিতে হয় যখন ৮১ মিনিটের মাথায় রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা জাপানি মিডফিল্ডার রে তাচিকাওয়া গোল করে সমতা এনে ফেলেন। বক্সের ডানদিক থেকে নিখিল বারলার নিখুঁত ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তাচিকাওয়া (১-১)। 


প্রায় জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হতে চলায় নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার মিনিট চারেক আগে নন্দ ও মহেশকে তুলে নিয়ে লালচুঙনুঙ্গা ও সায়ন ব্যানার্জিকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু শেষের কয়েক মিনিট বল নিজেদের দখলে বেশি রেখে খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করে জামশেদপুর। সাত মিনিটের বাড়তি সময় দেন রেফারি। এই সময়ে কর্নার থেকে গোল করার সুযোগ পেয়ে যায় জামশেদপুর। কিন্তু জটলার মধ্যে বল ক্লিয়ার করে দেন শৌভিক চক্রবর্তী। ইস্টবেঙ্গলও ডানদিকের উইংয়ে একটি ফ্রি কিক পায়। যা কাজে লাগাতে পারেনি তারা। 


কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি বক্সের ‘ডি’-র সামনে মহম্মদ রকিপ চিমাকে বাধা দিতে গিয়ে ফাউল করে বসেন ও সে জন্য যে যে ফ্রি কিক পায় জামশেদপুর তা কাজে লাগিয়ে নেন জেরেমি মানজোরো। তাঁর মাপা ফ্রি কিক হাওয়ায় সামান্য বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে পড়ে (১-২)। এর পরেও ইস্টবেঙ্গলকে যে কর্নার দিয়ে ম্যাচ শেষ করেন রেফারি, সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেনি তারা।(সৌজন্য - ISL মিডিয়া)


আরও পড়ুন: Sourav Ganguly Exclusive: শুধু টেকনিক নয়, দেখাতে হবে সাহসও, বাংলার উঠতি ক্রিকেটারদের বার্তা দাদার


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।