জামশেদপুর: দাপুটে ফুটবল খেলেও ইস্পাতনগরীর কঠিন পরীক্ষা জিতে মাঠ ছাড়তে পারল না মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। শুক্রবার জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ ১-১ শেষ করে তারা। প্রথমার্ধে দাপট বজায় রাখলেও দ্বিতীয়ার্ধে সেই দাপট সেভাবে বজায় রাখতে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনী। পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় ইস্পাত-বাহিনী। তাই ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি গতবারের শিল্ড চ্যাম্পিয়নরা, পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে বাধ্য হয়। চলতি মরশুমে ঘরের মাঠে এই প্রথম ড্র করল জামশেদপুর এফসি। এই ড্রয়ের ফলে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল তারা।
শেষ দশটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতে জয়, একটি হার ও দু’টি ড্র নিয়ে এক নম্বরেই রয়ে গেল সবুজ-মেরুন বাহিনী। জামশেদপুরের চেয়ে ছ’পয়েন্ট এগিয়ে তারা। এ দিন প্রথমার্ধে নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছেই রেখে ২৫ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন বাগান-অধিনায়ক ডিফেন্ডার শুভাশিস বসু। দ্বিতীয়ার্ধে ক্রমশ খেলায় ফিরে আসে জামশেদপুর এবং আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায়। ৬০ মিনিটের মাথায় তাদের নাইজিরিয়ান ডিফেন্ডার স্টিফেন এজের গোলে সমতা আনে তারা।
সারা ম্যাচে এ দিন ১৩টি শট নেয় মোহনবাগান, যার মধ্যে পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু মাত্র একটি থেকে গোল করতে পারে তারা। প্রতিপক্ষকে তারা পাঁচটির বেশি শট নিতে দেয়নি, যার মধ্যে একটি ছিল লক্ষ্যে এবং সেটি থেকেই গোল পায় ইস্পাতনগরীর দল। পজেশন, পাসিং-এও এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জয়সূচক গোলটি তুলে নিতে পারেনি বাগান-বাহিনী। প্রথমার্ধেই আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও আটটি। এতগুলি সুযোগ পেয়েও একটির বেশি গোল করতে না পারার মাশুলই তাদের দিতে হল দুই পয়েন্ট হাতছাড়া করে।
জামশেদপুর এফসি-র ঘরের মাঠে তাদের হারানো কঠিন, এই কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত এ দিন শুরু থেকেই তাদের চাপে রাখার জন্য রীতিমতো আগ্রাসী ফুটবল দিয়ে শুরু করে মোহনবাগান এসজি। তবে জামশেদপুরের শক্তিশালী রক্ষণ তাদের ঠেকিয়ে রাখে। ১৭ মিনিটের মাথায় লিস্টন কোলাসোর ফ্রি কিক থেকে বক্সে থাকা জেমি ম্যাকলারেন সামনে ফাঁকা গোল পেয়ে গেলেও সেখানে বল ঠেলতে পারেননি।
এর আগেই বক্সের সামনে ফ্রি কিক থেকে সরাসরি গোলে বল রাখার চেষ্টা করেন সেই লিস্টন। কিন্তু অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে বল বেরিয়ে যায়। জেসন কামিংসের ক্রস থেকে ছ’গজের বক্সে গোলের সুযোগ পেয়ে যান লিস্টন। কিন্তু দু’বারই স্টিফেন এজের তৎপরতায় জামশেদপুরের দূর্গ রক্ষা হয়।
কিন্তু ২৫ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে মোহনবাগানের গোল আটকাতে পারেনি জামশেদপুর। ডানদিক থেকে নেওয়া কামিংসের কর্নার কিক সবার আগে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে থেকে হেড করে গোলের সামনে ছ’গজের বক্সের মধ্যে পাঠান টম অলড্রেড, যেখানে ছিলেন শুভাশিস বোস। তাঁরই পায়ের টোকায় বল গোললাইন পেরিয়ে যায় (১-০)। তাঁর মার্কার সৌরভ দাসও আটকাতে পারেননি শুভাশিসকে। এই নিয়ে মোহনবাগান ১৬টি সেটপিস গোল করল। শুভাশিসের গোলসংখ্যা দাঁড়াল চার এবং তাদের ডিফেন্ডারদের গোলের সংখ্যা দাঁড়াল দশ।
গোলের দশ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও পেয়ে যান শুভাশিস। ফের কামিংসের কর্নার থেকে হেড করে গোলের সুযোগ আসে তাঁর কাছে। কিন্তু এ বার লক্ষ্যভ্রষ্ট হন সবুজ-মেরুন অধিনায়ক। ৪০ মিনিটের মাথায় যে সুযোগ পান লিস্টন, তাকেও সুবর্ণ সুযোগ বলা যায়। আলবার্তো রড্রিগেজের থ্রু পেয়ে বক্সে ঢুকে ছ’গজের বক্সের বাঁ কোণ থেকে কোণাকুনি শট নেন তিনি, যা দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে চলে যায়।
প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়েও দুর্দান্ত সুযোগ পান জেমি ম্যাকলারেন। বক্সের মধ্যে ডানদিক থেকে কাট ব্যাক করে তাঁর পায়ে বল পাঠান কামিংস। কিন্তু বক্সের মাঝখান থেকে নেওয়া তাঁর শট আটকে দেন গোলকিপার আলবিনো গোমেজ। প্রথমার্ধে বেশিরভাগ সময়ই আধিপত্য বিস্তার করে মোহনবাগান। বল পজেশন, পাসের সংখ্যা দু’দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল তারা। জামশেদপুর প্রথমার্ধে মাত্র একটি শট নিতে পারে, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। অন্য দিকে, মোহনবাগানের আটটি শটের মধ্যে দু’টি ছিল লক্ষ্যে।
দ্বিতীয়ার্ধে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করে দল নামান জামশেদপুরের কোচ খালিদ জামিল। তবে শুরুতেই মোহনবাগানের আগ্রাসী মেজাজ দমাতে পারেনি তারা। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কামিংসের ক্রস থেকে সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান ম্যাকলারেন। কিন্তু দ্বিতীয় পোস্টের সামনে থেকে তিনি গোলে বল ঠেলার চেষ্টা করলেও প্রতীক চৌধুরি তা ব্লক করেন এবং বল পোস্টে লেগে তার সামনে দাঁড়িয়ে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের দখল নেন গোলকিপার আলবিনো। ম্যাচের ৫৫ মিনিটের মাথায় ফের দুর্দান্ত এক দূরপাল্লার শট নেন লিস্টন, যা দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় বারের ওপর দিয়ে বের করে দেন আলবিনো।
হাভিয়ে সিভেরিও-সহ তিন তরতাজা ফুটবলার দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে আসায় ক্রমশ চাপ কাটিয়ে খেলায় ফিরে আসার চেষ্টা শুরু করে জামশেদপুর এবং ৬০ মিনিটের মাথায় অনবদ্য গোল করে সমতা আনেন নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে। সেন্টার লাইনের পিছনে বল পেয়ে দ্রুত দৌড়ে আশিস, রড্রিগেজ, আপুইয়াদের ধোঁকা দিয়ে বক্সে ঢুকে সোজা গোলে শট নেন এজে (১-১)।
ফের ব্যবধান তৈরির উদ্দেশে ৬৫ মিনিটের মাথায় কামিংসকে তুলে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে নামায় মোহনবাগান। তবে সেই সময় খেলার নিয়ন্ত্রণ জামশেদপুরের দখলে। আক্রমণের তীব্রতা ক্রমশ বাড়াতে থাকে তারা। তবে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে আক্রমণ করতে সফল হয়নি তারা। সিভেরিও মাঠে আসায় হাভিয়ে হার্নান্ডেজও চনমনে হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম আধ ঘণ্টায় তারা তিনটি শট নেয়, যার মধ্যে একটি ছিল লক্ষ্যে। মোহনবাগান রক্ষণকে এই সময় কড়া চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় তারা।
ঘরের মাঠে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দশ মিনিট আগে জর্ডন মারের জায়গায় রেই তাচিকাওয়াকে নামায় জামশেদপুর। পরের মিনিটেই ম্যাকলারেনের জায়গায় নামেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। তিনি মাঠে আসার পরেই ফের আগের মেজাজে ফেরে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
তিনি মাঠে আসার পরেই বক্সের বাঁ দিক থেকে দেওয়া ক্রসে পেট্রাটসকে গোলের বল সাজিয়ে দেন লিস্টন। কিন্তু গোলের সামনে মহম্মদ উভেস তা ব্লক করায় সেই ক্রস ধরতে পারেননি দিমি। ৮৬ মিনিটের মাথায় লিস্টন ও আপুইয়ার পরপর দু’টি শটে হাত লাগিয়ে বারের ওপর দিয়ে বের করে দেন আলবিনো। এই সময় ব্যবধান বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে রড্রিগেজের হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পাঁচ মিনিটের সংযুক্ত সময়ে কর্নার আদায় করে নিলেও তা থেকে গোল আদায় করতে পারেনি কলকাতার দল।
মোহনবাগান এসজি দল (৪-৪-২): বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই, টম অলড্রেড, আলবার্তো রড্রিগেজ, শুভাশিস বোস, মনবীর সিং, দীপক টাঙরি, আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো, জেসন কামিংস (গ্রেগ স্টুয়ার্ট-৬৫), জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রিয়স পেট্রাটস-৮২)। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)