সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ভারতে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে প্রতিভা তুলে আনতে উদ‌্যোগী হয়েছে লা লিগা (La Liga)। চালু করা হয়েছে ‘ফুটবল ডেভলপমেন্ট প্ল‌্যান’। যার মূল উদ্দেশ‌্যই হল, এ দেশের তরুণ, সম্ভাবনাময় ফুটবলারদের, নিজ পদ্ধতিতে তালিম দেওয়া। ট্রেনিং করানো। ঠিক যে পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্ব ফুটবলকে তারা অঢেল ফুটবল প্রতিভার সন্ধান দিয়েছে। যে ফুটবলাররা পরবর্তী সময়ে দাপিয়ে বেরিয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।


আর পুরো প্রকল্পই লা লিগার ‘গ্লোবাল টেকনিক‌্যাল ডিরেক্টর’ ও তাঁর টিমের মস্তিষ্কপ্রসূত। যে টিম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে, ফুটবল-সাধনায় ব্রতী হয়ে। যে প্রকল্পের উদ্দেশ‌্য হল বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন প্রদেশের ফুটবল-সংস্কৃতির সঙ্গে স্পেনীয় ফুটবলের নৈপুণ‌্য ও টেকনিকের সংমিশ্রন ঘটানো। এবং এই বিশেষজ্ঞদের টিমে রয়েছেন স্পেনের মিগুয়েল কাসাল, যিনি ভারতে লা লিগা অ‌্যাকাডেমি ফুটবল স্কুলের ডিরেক্টর।


আর এই প্রকল্পে লা লিগার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধল ভবানীপুর ক্লাব (Bhawanipur Club)। শনিবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের কথা ঘোষণা হয়ে গেল। ভবানীপুর এফসি প্রো ইন্ডিয়া সেন্টার অফ এক্সেলেন্স তিনটে বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এক, লা লিগা অ‌্যাকাডেমি প্রদত্ত ফুটবল-পাঠ‌্যক্রম এএফসি ও লা লিগার অনুমোদিত কোচদের হাতে তুলে দেওয়া। দুই, ‘স্টেপ আউট অ‌্যানালিটিক্স’-কে নিযুক্ত করা। বেঙ্গালুরু-জাত যে সংস্থা আই লিগের বিভিন্ন পেশাদার টিমের দেখভাল করে, তাদের ম‌্যানেজ করে। তৃণমূল স্তর থেকে যুব পর্যায় পর্যন্ত ফুটবল অ‌্যানালিটিক্সের কাজ ইতিমধ‌্যেই শুরু করে দিয়েছে এই সংস্থা। কোথায় কী করতে হবে, কী করা দরকার, ধাপে-ধাপে সমস্ত পর্যবেক্ষণ করে তা শেষ পর্যন্ত তারা তুলে দেবে কোচ আর স্কাউটদের হাতে। ভারতীয় ফুটবলের সার্বিক উন্নতিকে মাথায় রেখে। তিন, পেশাদারি টেলিভিশন চ‌্যানেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। যারা কি না দেশজুড়ে অ‌্যাকাডেমি ম‌্যাচ, এআইএফএফ ‘ব্লু কাবস’ ও প্র‌্যাকটিস সেশন সম্প্রচার করবে। উদীয়মান প্রতিভাদের কাছে যা নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের একটা মঞ্চ হবে।


অনুষ্ঠানে লা লিগা অ‌্যাকাডেমি ফুটবল স্কুলের ডিরেক্টর মিগুয়েল কাসাল বলেন, 'লা লিগা অ‌্যাকাডেমি ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি খুশি। এই দেশে আমাদের প্রচুর কর্মসূচি রয়েছে। আমরা একাধিক ভাবে টেকনিক‌্যাল সাপোর্ট দিতে ইচ্ছুক। যেমন সেন্টারে-সেন্টারে যাওয়া, কোচদের তালিম দেওয়া। আমরা তৃণমূল স্তরে বেশি করে জোর দিচ্ছি কারণ আমরা চাই লা লিগার ফুটবল পদ্ধতির সঙ্গে বেশি সংখ‌্যক কিশোর সহজাত হোক। সে ভাবে খেলুক। আমরা তাদের আমাদের ঘরানা অনুযায়ী ফুটবল খেলাতে চাই, শেখাতে চাই। ভারতবর্ষের অন‌্যতম ফুটবলপ্রেমী শহরের নাম কলকাতা। তাই এই শহরকে নির্বাচন করতে আমাদের বিন্দুমাত্র সমস‌্যা হয়নি।'


পুরো বিষয় নিয়ে ভবানীপুর এফসি-র পক্ষ থেকে সৃঞ্জয় বসু বলেন, 'বাংলাজুড়ে একাধিক প্লেয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টার গড়বে ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া। বিভিন্ন জেলার নানা স্কুলে। সেই সব সেন্টার থেকে এআইএফএফ স্কাউটরা নিজের হাতে প্রতিভা বেছে নিতে পারবেন। যাদের তারপর নিয়ে যাওয়া হবে আমাদের এলিট প্লেয়ার ডেভলপমেন্ট সেন্টারে এবং শেষ পর্যন্ত ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে। সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে লা লিগা অ‌্যাকাডেমির সামগ্রিক পাঠ‌্যক্রম থেকে উপকৃত হবে প্লেয়াররা। যাদের তৈরি করা হবে এআইএফএফ এবং আইএফএ-র বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টের জন‌্য। যেমন অনূর্ধ্ব ১৩, অনূর্ধ্ব ১৫ ও অনূর্ধ্ব ১৭।'


'স্টেপ আউট অ‌্যানালিটিক্স'-এর অন‌্যতম প্রতিষ্ঠাতা সায়ক ঘোষ বলেন, 'এই গাঁটছড়ার মাহাত্ম‌্য সম্পূর্ণ আলাদা। স্পেশ্যাল। কারণ, তৃণমূল স্তরে পেশাদারি অ‌্যানালিটিক্স আমদানি করার ভাবনা, ভারতে এর আগে কেউ ভাবেনি। আমরা গর্বিত যে, বাংলা ফুটবলের জন‌্য কিছু করতে পারছি। আমাদের কাজের মাধ‌্যমে অবদান রাখতে পারছি। আমি নিশ্চিত যে, ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করছে, তা ফুটবলের উন্নতিতে শক্তিশালী অনুঘটক হিসাবে কাজ করবে।'


ভবানীপুর এফসি প্রোইন্ডিয়া অ‌্যাকাডেমির সিইও অপরূপ চক্রবর্তী আবার ভারতীয় ফুটবলে স্পেনীয় প্রভাবের বিষয়কে তুলে ধরছেন। জাভি-ইনিয়েস্তার দেশ থেকে প্রচুর কোচ এখন ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে এখন কোচিং করান। সেই প্রেক্ষিতে অপরূপ বলছেন, 'আইএসএলের অধিকাংশ প্রথম সারির টিমে এখন স্পেনীয় কোচরা কোচিং করান। যাঁরা নিজেদের ট‌্যাকটিক‌্যাল জ্ঞান ও অননুকরণীয় খেলার স্টাইল আমদানি করেছেন ভারতে। কিন্তু সেই প্রগতিকে যদি সঠিক ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, একেবারে তৃণমূল স্তরের রন্ধ্রে স্পেনীয় ফুটবলের দর্শনকে রোপন করা প্রয়োজন। যাতে ছোট থেকে ভারতীয় ফুটবলাররা তার সঙ্গে সহজাত হয়ে যেতে পারে। আমরা যদি অল্প বয়সে আমাদের দেশের ফুটবলারদের ধমনীতে স্পেনীয় ফুটবল সিস্টেমকে ঢুকিয়ে দিতে পারি, তা হলে ভবিষ‌্যতে যখন তারা স্পেনীয় কোচদের কাছে যাবে, অসুবিধায় পড়বে না। দেখুন, একুশ বছর বয়সে খেলার নির্দিষ্ট কোনও স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন। প্লেয়ারের তাতে সমস‌্যা হয়। কারণ, ছোট থেকে সে এক জিনিস শিখে এসেছে। এক রকম স্টাইলে খেলে এসেছে। হঠাৎ করে তাকে নতুন স্টাইলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। যা সহজ নয়। একুশ বছর বয়সে একজন প্লেয়ার আরও উন্নতির লক্ষ‌্যে ছোটে। নিজেকে আরও তৈরি করে। কেরিয়ারের শুরুতে সিস্টেমের সঙ্গে সহজাত হওয়া দরকার।'


এক কথায়, সম্ভাবনাময়, প্রতিভাবান কিশোর ফুটবলারদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রেনিং করানোই এই প্রকল্পের উদ্দেশ‌্য। লক্ষ্য, কেরিয়ারের শুরুতেই তাদের হাতে একটা নির্দিষ্ট ‘সিস্টেম’ ধরিয়ে দেওয়া। ভারতীয় ফুটবলের তৃণমূল স্তরে যদি স্পেনীয় দর্শন ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই দর্শন অনুপাতে যদি তাদের খেলানো যায়, তৈরি করা যায়, তা হলে দেশে এমন এক ফুটবল-প্রজন্ম আসবে যারা অনায়াসে সেই সিস্টেমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে। এবং শেষে সাফল‌্যও পাবে।


আরও পড়ুন: বন্ধুই যখন শত্রু! গুরু গম্ভীরের চালেই কি ইডেনে লখনউয়ের বিরুদ্ধে বাজিমাত কেকেআরের?




আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।