কলকাতা: শতাধিক বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে যে ক্লাব, তার পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে থাকেই। আর ভাল করে খুঁজলে সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু মানুষের সন্ধানও পাওয়া যায়। ১৩৩ বছর বয়সি মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবেও তার ব্যতিক্রম নেই। প্রাচীন ক্লাবের পরিকাঠামোয় যেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, তেমনই কর্তৃপক্ষেও এসেছে নতুন প্রজন্ম। এর মধ্যেই এমন একজন মানুষ রয়ে গিয়েছেন, যাঁর গায়ে ক্লাবের ইতিহাসের গন্ধ লেগে এখনও। তিনি দয়াতারি খাটুয়া, ময়দানে যিনি 'খাটুয়াদা' বলেই বেশি পরিচিত।
এই পাঁচ দশকে ক্লাবের ইতিহাসে অনেক চড়াই-উতরাই, সাফল্য-ব্যর্থতা, গৌরব, হতাশা, ভাঙা-গড়া এসেছে। পরিবর্তনশীল এই সময়ে অপরিবর্তিতই রয়ে গিয়েছেন তিনি, দয়াতারি খাটুয়া। তাঁর কথায়, ''আমি যখন এখানে আসি, সেই সালটা ছিল ১৯৭২। তখন আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। আমরা চার ভাই ও এক বোন, কেউই ভাল ছিলাম না। আমার দাদা মহমেডান ক্লাবে আমাকে প্রথম নিয়ে আসে। তখন দাদাও এখানে কাজ করত। তার পর আমি এখানে এসে যোগ দিলাম।'' indiansuperleague.com কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কথাগুলি বলেন খাটুয়া।
তাঁবু ও মাঠের দেখাশোনা করাই তাঁর কাজ। গত ৫২ বছর ধরে এই কাজই করে চলেছেন তিনি এবং পরিবারের আর্থিক অনটনও দূর করেছেন ক্লাবের কাজে নিজেকে সঁপে দিয়েই। নিজের পরিবর্তন না হলেও এই পাঁচ দশক ধরে দেখেছেন অনেক পরিবর্তন। বিশেষ করে তাঁর কাজের পদ্ধতিতে যে ভাবে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে, তা বলার মতোই। কেমন সেই পরিবর্তন? মহমেডানের অভিজ্ঞ মালি বলছেন, ''আগে আমরা নিজে হাতেই মাটি কোপাতাম, ঘাস ছাঁটতাম, বসাতাম। এখন সে সবে অনেক বদল এসেছে। এখন এ সব কাজের জন্য নতুন নতুন মেশিন এসে গিয়েছে। সেইসব মেশিন দিয়েই কাজগুলো করি আমরা।''
অতীতের স্মৃতি হাতড়ে খাটুয়া বলেন, ''গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে ক্লাবে। নতুন কর্মকর্তাদের হাতে ক্লাব আসার পরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে মহমেডান তাঁবুতে। এগুলো দেখে ভাল লাগে।''
এই দীর্ঘ সময়ে একাধিক প্রজন্মের ফুটবলারদের তিনি কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন, কারও কারও সঙ্গে ভাল সম্পর্কও গড়ে উঠেছে তাঁর। শুধু মহমেডান ক্লাব নয়, অন্যান্য ক্লাবের প্রাক্তন খেলোয়াড়রাও এখনও তাঁর কথা শুনলে চিনে নিতে পারেন ‘খাটুয়াদা’-কে।
মহমেডান ক্লাবের ইতিহাসে যাঁদের নাম সোনার অক্ষরে লেখা রয়েছে, সেই জামশিদ নাসিরি, চিমা ওকেরি, মজিদ বিসকারদের সঙ্গে তো রীতিমতো ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। ওঁদের কত শ্রদ্ধা করতেন ও তাঁদের কাছ থেকে কত ভালবাসা পেয়েছিলেন, তা এখনও মনে রয়েছে খাটুয়ার। মনে রেখেছেন তাঁরাও। ২০১৯-এ যখন কলকাতায় আসেন মজিদ বিসকার, তিনি ক্লাবে এসে প্রথমেই দয়াতারি খাটুয়ার খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন।
প্রাক্তন বিদেশি তারকাদের স্মৃতি হাতড়ে খাটুয়া বলেন, ''যে বিদেশি ফুটবলাররা এই ক্লাবে খেলতে এসেছে, তাঁরা কেউই খারাপ ছিলেন না। কেউই আমাদের ক্ষতি করতে চাননি কখনও। মজিদ বসকর যখন কয়েক বছর আগে কলকাতায় আসেন, তখন আমাকে ঠিক চিনতে পেরেছিলেন। আমার সঙ্গে দেখা হতেই আমাকে কাছে টেনে নিয়ে প্রায় পাঁচ মিনিট কথাও বলেন উনি।'' তথ্য সংগ্রহ- আইএসএল মিডিয়া