কলকাতা: লড়াইটা প্রথম তিনে থাকা একটি দলের সঙ্গে শেষ তিনে থাকা একটি দলের। তাই অনেকে মহমেডান স্পোর্টিং ও বেঙ্গালুরু এফসি-র (Mohammedan Sporting vs Bengaluru FC) মধ্যে ম্যাচকে ‘ডেভিড বনাম গোলিয়াথ’-এর লড়াই বলতে পারেন। কিন্তু ফুটবলে কখন যে কী হয়. বিশেষ করে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে, তা আগাম বলার ঝুঁকি কেউ নিতে চান না। তাই বুধবার ঘরের মাঠে মহমেডান কোনও অঘটন ঘটালে অবাক হবেন না।
সাতটি ম্যাচে মাত্র তিনটি গোল করে ও ১১টি গোল খেয়ে মহমেডান লিগ টেবলের একেবারে নীচের দিকে রয়েছে ঠিকই। বেঙ্গালুরু এফসি আটটি ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে দু’নম্বরে রয়েছে, এটাও ভুল নয়। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক যে গত দু’টি ম্যাচে জয়ের মুখ দেখেনি সুনীল ছেত্রীর দল। কোচিতে গিয়ে চলতি লিগের পঞ্চম জয়ের পর গোয়ায় তারা তিন গোলে হারে ও ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করে।
এই দুই দলই যদিও সেরা পাঁচের মধ্যে রয়েছে। তবে মহমেডানের শুরুর দিকের লড়াইয়ের কথা কারও মনে থাকলে বুধবারের ম্যাচে নিশ্চয়ই সাদা-কালো বাহিনীকে বোধহয় সহজেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এ বারেই প্রথম আইএসএলে খেলা মহমেডান স্পোর্টিং শুরুটা বেশ আশা জাগিয়ে করেছিল। একটি ম্যাচে জয় ও একটিতে ড্র তাদের তিন ম্যাচেই চার পয়েন্ট এনে দেয়।
কিন্তু গত চার ম্যাচে যে হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তারা, তা বোধহয় তাদের আসল চেহারা নয়। প্রথম তিন ম্যাচে চার পয়েন্ট পাওয়ার পর তিন ম্যাচে যে ভাবে ন’গোল খায় সাদা-কালো ব্রিগেড, তা যেমন প্রত্যাশিত ছিল না, তেমনই তাদের শেষ ম্যাচে ন’জনে খেলা ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে যে ভাবে ব্যর্থ হয় তারা, তাও ছিল অভাবনীয়।
সে দিন ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ইস্টবেঙ্গলের দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান। ফলে ৭৫ মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) ন’জনে মিলে লড়াই করে ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু দুর্বল ইস্টবেঙ্গলকে সামনে পেয়েও তাদের রক্ষণে ফাটল ধরাতে পারেনি সাদা-কালো বাহিনী। সারা ম্যাচে প্রায় ৭৫ শতাংশ বল দখলে রেখে, ১৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, বিপক্ষের বক্সের মধ্যে ৫০ বার বল ছুঁয়ে এবং ফাইনাল থার্ডে ২১০টি পাস খেলেও ম্যাচ গোলশূন্য রেখে মাঠ ছাড়ে মহমেডান। গোল করার দক্ষতার চরম অভাব তাদের সেই ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখে।
হায়দরাবাদ এফসি-র কাছে মহমেডানের চার গোল খাওয়াটাও ছিল রীতিমতো চমক। সাম্প্রতিককালে এত বড় ব্যবধানে জয় পায়নি হায়দরাবাদ এফসি। কলকাতায় এই জয় পেয়ে লিগের দৌড়ে বেশ কিছুটা অক্সিজেন পেয়ে যায় নিজামের শহরের দল। যেমন ইস্টবেঙ্গলও ন’জনে খেলে তাদের আটকে রেখে লিগের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে। প্রায় আড়াই সপ্তাহের ছুটিতে গোল করতে না পারার এই সমস্যা দূর করতে পেরেছে কি না মহমেডান, তা বুধবারের ম্যাচ দেখলেই বোঝা যাবে। এই সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারলে হয়তো প্রথম তিন ম্যাচের লড়াকু ফর্মে ফিরতে পারে কলকাতার দল।
ঘরের মাঠে টানা তিন ম্যাচে জয় দিয়ে এ বারের লিগ অভিযান শুরু করে বেঙ্গালুরু এফসি। এর মধ্যে ইস্টবেঙ্গলকে তারা এক গোলে ও মোহনবাগানকে তিন গোলে হারায়। তবে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচে গোলশূন্য ড্র করে হোঁচট খায় তারা। অবশ্য পরের দুই ম্যাচে জয়ে ফিরে আসে তারা। এর মধ্যে কোচিতে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ৩-১ জয়ও ছিল। গোয়ায় এ মরশুমের প্রথম হার স্বীকার করতে হয় তাদের এবং শেষ ম্যাচে ঘরের মাঠে প্রথম ড্র করে তারা।
ভালয়-মন্দয় মেশানো মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি গতবারের থেকে ভাল ফর্মে রয়েছে বলা যায়। গতবার তারা লিগ টেবলে দশ নম্বরে থেকে শেষ করে। সেই দলের দুই বিদেশী আলেকজান্দার জোভানোভিচ ও রায়ান উইলিয়ামস এ বারও রয়েছেন। নতুন চার বিদেশী গতবারের কাপজয়ী মুম্বই সিটি এফসি থেকে জর্জ পেরেইরা দিয়াজ ও আলবার্তো নগুয়েরা ছাড়াও এসেছেন পেদ্রো কাপো ও এডগার মেনদেজ। মুম্বই শিবির থেকে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে ফিরে এসেছেন তাঁর পুরনো দলে। পাঞ্জাব এফসি থেকে এসেছেন মোহম্মদ সালাহ। এঁদের নিয়েই এ বার নতুন করে অভিযান শুরু করেছেন কোচ গেরার্দ জারাগোজা।
সুনীল ছেত্রী আন্তর্জাতিক ফুটবল ছেড়ে দিয়েও ক্লাব ফুটবলে একইরকম ধারালো রয়েছেন। আট ম্যাচে তিনটি করে গোল দিয়ে তিনি ও মেনদেজ আপাতত দলের দুই সর্বোচ্চ গোলদাতা। রায়ান, দিয়াজরা এখন পর্যন্ত একটি করে গোল করেছেন। দলের গোলসংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। মোট ১৩ গোল দিয়েছে তারা। তবে সবচেয়ে কম (৬) গোল খেয়েছে তারা। এর কৃতিত্ব যেমন প্রাপ্য গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধুর (পাঁচটি ক্লিন শিট, ২৯টি সেভ), তেমনই প্রাপ্য ডিফেন্ডারদেরও।
জোভানোভিচ, চিংলেনসানা সিং, ভেকে, নিখিল পূজারী, রোশন সিং নাওরেমরা দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। এঁদের তৈরি দুর্ভেদ্য রক্ষণের দেওয়ালে ফাটল ধরিয়ে গোল করতে পারবেন কি না মহমেডানের অ্যালেক্সি গোমেজ, কার্লেস ফ্রাঙ্কা, মির্জালল কাসিমভ, মকান চোঠে-রা সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। শেষ চার ম্যাচে মাত্র একটি গোল করা মহমেডানের সামনে এই ম্যাচে জোড়া চ্যালেঞ্জ, জয়ে ফেরা ও গোলে ফেরা। এবং দুই-ই বেশ কঠিন।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: দু'সপ্তাহ পর মাঠে নামছে দল, বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে পয়েন্ট অর্জনে মরিয়া কোচ চেরনিশভ