নয়াদিল্লি: ঘরের মাঠে জয়ে ফিরল পাঞ্জাব এফসি। ঘরের মাঠে গত দুই ম্যাচে জিততে পারেনি তারা। হারে নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও এফসি গোয়ার কাছে। কিন্তু শুক্রবার মহমেডান স্পোর্টিং-র বিরুদ্ধে (Mohammedan Sporting vs Punjab FC) ঘরের মাঠে জয় পেল তারা। এই জয়ের ফলে লিগ টেবলে তিন ধাপ লাফিয়ে তিন নম্বরে উঠে এল তারা। মহমেডান রয়ে গেল ১২ নম্বরেই।


এ দিন নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে প্রধমার্ধে কোনও গোল না হলেও দ্বিতীয়ার্ধের ৫৮ ও ৬৬ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে স্লোভেনিয়ান তারকা ফরোয়ার্ড লুকা মাজেন ও ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ফিলিপ মরজলিয়াকের গোলে চলতি লিগের ষষ্ঠ জয় অর্জন করে নেয় দ্বিতীয় আইএসএল মরশুম খেলা পাঞ্জাবের দলটি।


মহমেডানকে এ দিনও সমস্যায় ফেলে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করা এবং বিরতির পর তাদের ক্লান্ত হয়ে পড়ার রোগ। এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে এ বার বেশিরভাগ ম্যাচেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে কলকাতার দলকে। শুক্রবার তাদের দশ নম্বর ম্যাচে সপ্তম হারের মুখোমুখি হতে হয়। এই নিয়ে টানা ছ’টি ম্যাচে জয়হীন থাকল তারা, যার মধ্যে পাঁচটিতেই হার। ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাইন এফসি-কে হারানোর পর থেকে তারা আর কোনও ম্যাচে জিততে পারেনি।


এ দিন ১১টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও তা থেকে কোনও গোল করতে পারেনি মহমেডান স্পোর্টিং। অথচ মাত্র পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করে পাঞ্জাব। তার মধ্যে দু’টি থেকেই গোল পায় তারা। সারা ম্যাচে একটিও কর্নার আদায় করতে পারেনি কলকাতার দল। এমনকী ২৫টি ক্রস দেন সাদা-কালো বাহিনীর ফুটবলাররা। যেখানে পাঞ্জাবের ক্রসের সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ।


এ দিন মহমেডান তাদের প্রথম এগারোয় চারটি পরিবর্তন আনে। মির্জালল কাসিমভ ও অ্যালেক্সি গোমেজ প্রথম দলে ফিরে আসেন। সামাদ আলি মল্লিককেও এ দিন শুরু থেকে খেলতে দেখা যায়। ম্যাচের প্রথম আধ ঘণ্টা পাঞ্জাব এফসি-র সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে মহমেডান। দুই দলই আক্রমণে ওঠে, কিন্তু রক্ষণে সতর্ক ছিল দু’পক্ষই।


বল দখল ও পাসের সংখ্যা তাদের বেশি থাকলেও এই সময়ে গোলে একটিও শট নিতে পারেনি। পাঞ্জাব এফসি-ও যে নিজেদের মাঠে আক্রমণের ঝড় তুলে দেয়, তাও না। লড়াইটা মূলত মাঝমাঠেই হয়। ১৫ মিনিটের মাথায় লুকা মাজেনের গোলমুখী জোরালো শট মহমেডান গোলকিপার ভাস্কর রায়ের হাতে লেগে পোস্টে ধাক্কা খায়। এর দু’মিনিট পরেই অ্যালেক্সি গোমেজের ক্রস থেকে গোলের দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে যান লালরেমসাঙ্গা ফানাই। কিন্তু তখনই প্রতিপক্ষের গোলের সামনে খেই হারিয়ে ফেলার রোগে আক্রান্ত হন তিনি এবং তাঁর দূর্বল শট পোস্টের ডানদিক দিয়ে বেরিয়ে যায়।


সিজার মানজোকিকে সামনে রেখে ফ্রাঙ্কা, গোমেজরা এ দিন পিছন থেকে খেলেন। কিন্তু মানজোকিকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন পাঞ্জাবের ডিফেন্ডাররা। অন্যদিকে, লুকা মাজেনকেও একই রকম পাহাড়ায় রাখেন সুধীশ, সুরেশ মিতেই, ইভান নোভোসেলেকরা। একে অপরের রক্ষণে ফাটল ধরানো বেশ কঠিন হয়ে ওঠে অ্যাটাকেরদের পক্ষে। প্রথমার্ধে মহমেডান সাতটি শট নিলেও একটিতেও গোলের ঠিকানা লেখা ছিল না।


প্রথমার্ধে যে রকম গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছিলেন রেমসাঙ্গা, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন তিনি। বাঁ দিক থেকে ফ্রাঙ্কার মাপা ক্রসে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে গিয়েও গোলে ঠেলতে পারেননি তিনি, আবার বাইরে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তী মিনিটেই মানজোকির শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।


দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোলের সুযোগ পায় পাঞ্জাবও। ৪৯ মিনিটের মাথায় মাজেনের পাস পেয়ে বক্সের মধ্যে বাঁ দিক থেকে গোলে শট নেন ফিলিপ ম্রজলিয়াক, যা অনবদ্য সেভ করেন ভাস্কর। এই নিয়ে পাঞ্জাবের দ্বিতীয় অবধারিত গোলের চেষ্টা বানচাল করেন তিনি।


কিন্তু ৫৮ মিনিটের মাথায় মাজেন যে শট নেন, তা আর আটকাতে পারেননি মহমেডানের গোলকিপার। প্রথমে ফিলিপের শট তাঁর হাতে লেগে পোস্টে লাগে। ফিরতি বল পেয়ে তা মাজেনের পায়ে বাড়ান রিকি শাবং। এ বার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না। গোলের ডান কোণ দিয়ে এমন ভাবে বল জালে জড়িয়ে দেন যে, গোলকিপারের তা দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না (১-০)। বক্সের মধ্যে তখন মহমেডানের একাধিক খেলোয়াড় থাকলেও ফিলিপ, রিকি বা মাজেন কেউই সে ভাবে বাধা পাননি।


এ দিন প্রথমার্ধেই একবার জোরালো চোট পাওয়া উজবেক মিডিও কাসিমভ দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ফের পায়ে জোরালো চোট পান, যার পর মাঠে ঠিকমতো দাঁড়াতেই পারছিলেন না তিনি। কিন্তু ওই অবস্থাতেই খেলা চালিয়ে যান কাসিমভ। শেষ পর্যন্ত সংযুক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটের মাথায় তাঁর বদলি নামায় মহমেডান। তাঁর চোটের ফলে মহমেডানের মাঝমাঠ অনেকটাই অগোছালো হয়ে যায়, যা কাজে লাগিয়ে আক্রমণের গতি ও তীব্রতা বাড়ায় পাঞ্জাব এবং ৬৫ মিনিটের মাথায় ফের গোল পায় তারা।


দু’বার গোলে শট নিয়েও ব্যর্থ হওয়া ফিলিপ এ বার আর সুযোগ হাতছাড়া করেননি। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার নরবের্তো ভিদালের ফরোয়ার্ড পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি (২-০)। এ বারেও ভাস্করের কিছু করার ছিল না। বরং যারা গোল আটকানোর জন্য কিছু করতে পারতেন, সেই ডিফেন্ডাররা ব্যর্থ হন।


প্রথমার্ধে মহমেডানের দখলে প্রায় ৬০ শতাংশ থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধের মিনিট পনেরোর মধ্যে ছবিটা পুরোপুরি উল্টে যায়। এর আগেও যে ভাবে বেশিরভাগ ম্যাচেই ৬০-৬৫ মিনিটের পর থেকে ক্লান্তি ঘিরে ধরে মহমেডানের ফুটবলারদের, এ দিনও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবং তাদের অন্যান্য প্রতিপক্ষের মতো পাঞ্জাবও সেই সুযোগ কাজে লাগায়। তবে ততক্ষণে দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ায় ৭৫ মিনিটের পর থেকে তাদের খেলাতেও আর তেমন মরিয়া ভাব দেখা যায়নি।


ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে বল পজেশন বাড়িয়ে খেলায় ফেরার চেষ্টা করলেও গোলের ঠিকানা খুঁজে পায়নি মহমেডান স্পোর্টিং। এর মধ্যে দু’বার ফ্রাঙ্কা গোলের সামনে মাপা ক্রস বাড়ালেও কোনওবারই তা থেকে গোল হয়নি। একবার প্রতিপক্ষের গোলকিপার প্রথম আইএসএল ম্যাচ খেলা মুহিত সাবির বলের দখল নিয়ে নেন এবং পরের বার মানজোকি বলে ঠিকমতো পা-ই লাগাতে পারেননি।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি ইস্টবেঙ্গলের