হায়দরাবাদ: আইএসএল (ISL 2024-25) পয়েন্ট টেবলের সবচেয়ে নীচে থাকা দুই দলের ম্যাচ নিয়ে অনেকের আগ্রহ নাও থাকতে পারে। কিন্তু হয়তো দেখা যাবে এই ম্যাচেই উত্তেজনার পারদ উঠবে চরমে। কারণ, কোনও দলেরই কিছু হারানোর নেই।

সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের বিচারে দুই দলই প্রায় একই জায়গায় রয়েছে। দু’পক্ষই গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে একটিতে জিতেছে, দু’টিতে ড্র করেছে ও দু’টিতে হেরেছে। ফলে কাউকেই এগিয়ে বা পিছিয়ে রাখা যাবে না। তফাৎ শুধু পয়েন্টের। ১৮ ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট পেয়ে হায়দরাবাদ যেখানে ১২ নম্বরে, সেখানে একই সংখ্যক ম্যাচে ১১ পয়েন্ট পেয়ে ১৩-য় মহমেডান (Mohammedan Sporting)। গোল করার দিক থেকেও এগিয়ে হায়দরাবাদ। তবে গোল খাওয়ার দিক থেকে এগিয়ে মহমেডান।

তবে এ সবের চেয়েও মহমেডানকে যা মানসিক ভাবে পিছিয়ে দিতে পারে, তা হল প্রথম লিগে ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের কাছে তাদের চার গোলে শোচনীয় হার। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সেই ম্যাচে প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যেই তিন-তিনটি গোল করে জয়ের দিকে অনেকটা এগিয়ে যায় হায়দরাবাদ এফসি। তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড অ্যালান ডিসুজা পলিস্তার জোড়া গোল ও সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচ প্রথমার্ধে তিন গোলের ব্যবধান তৈরি করে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে এক অসাধারণ গোলে জয় সুনিশ্চিত করেন পরাগ শ্রীবাস।

চার গোলে হারের স্মৃতি

সে দিন ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেও কোনও গোল করতে পারেনি মহমেডান এসসি। কিন্তু হায়দরাবাদ পাঁচটি গোলের সুযোগ তৈরি করে চার গোল করে। প্রতিপক্ষের বক্সে ৩০ বার বল ছোঁয়া সত্ত্বেও মাত্র চারটি শট গোলে রাখতে পেরেছিল সাদা-কালো বাহিনী। কিন্তু একবারও জালে বল জড়াতে পারেনি। চলতি লিগে এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি হায়দরাবাদ এফসি।

বর্তমানে দলের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় কোচ মেহরাজউদ্দিন ওয়াডু অবশ্য সেই ম্যাচের কথা মনে রাখতে চান না। তাঁর বক্তব্য, “হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে গত ম্যাচে আমরা বাজে ভাবে হেরেছিলাম ঠিকই। তবে এখন আমরা অতীতের কথা মনে রাখতে চাই না। সামনে আমাদের ছ’টি ম্যাচ রয়েছে। সেই ম্যাচগুলোতে মনোনিবেশ করতে চাই। বিশেষ করে আসন্ন ম্যাচে। দলের ছেলেরা ফোকাসড রয়েছে। আশা করি, ইতিবাচক ফলই পাব”।

এই মহমেডানই যেহেতু বেঙ্গালুরু এফসি-কে তাদের মাঠে গিয়ে হারিয়েছে, এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ড্র করেছে, চেন্নাইন এফসি-কে দুই ম্যাচের কোনওটিতেই জিততে দেয়নি, রুখে দিয়েছে নর্থইস্টকেও, তাই তাদের উড়িয়ে দেওয়াটা বোধহয় ঠিক নয়। নিজের দলের ফুটবলাররা নানা সমস্যা সত্ত্বেও যথেষ্ট ভাল খেলছেন বলে মনে করেন মেহরাজ। বলেন, “মাঠের বাইরে যাই হোক, দলের খেলোয়াড়রা তাদের সেরাটাই দিচ্ছে। শেষ দুই ম্যাচে ভাল খেলেছি আমরা। অনুশীলনে, ম্যাচে ছেলেরা যথেষ্ট পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছে। আশা করি, আসন্ন ম্যাচে এর প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যাবে”।

‘কাসিমভের পরিবর্ত ভালই খেলবে’

কিন্তু দলের গোলখরা কি কাটবে এই ম্যাচে? গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটি গোল করেছে সাদা-কালো ব্রিগেড। চলতি লিগের অন্যান্য সব দলের গোল সংখ্যা দুই অঙ্কের হলেও সাদা-কালো বাহিনীর গোলসংখ্যা এখনও আটেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়া দলগুলির তালিকায় ওপর দিকেই রয়েছে তারা। পাঁচটি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখলেও তার সুফল অর্জন করতে পারেনি তারা, রক্ষণ বিভাগ এতটাই দুর্বল তাদের। শেষ তিন ম্যাচেই ন’গোল খেয়েছে তারা।

শনিবার আবার তারা পাবে না, তাদের উজবেক মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভকে। গত ম্যাচে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে তিনি নেই। তবে তাঁর পরিবর্তে ভাল খেলার মতো খেলোয়াড় তাঁর দলে আছেন বলে মনে করেন মেহরাজউদ্দিন। বলেন, “আমাদের ২৭ জন খেলোয়াড় আছে। কাসিমভের জায়গায় খেলার সুযোগ যে পাবে, সে নিশ্চয়ই সেরাটা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করবে”।

এই ম্যাচে অস্ট্রিয়া থেকে আসা নতুন ফরোয়ার্ড মার্ক স্মেরবককে প্রথম মাঠে দেখা যেতে পারে বলে জানান মেহরাজ। বলেন, “মার্ক ভাল খেলোয়াড়, ফিট, অনুশীলনে ওকে দেখে বেশ ভাল লাগছে। দেখা যাক, আসন্ন ম্যাচে নিশ্চয়ই ওকে মাঠে নামানো হবে”। মার্ক নিজেও মাঠে নামার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, “সমর্থকেরা ভোর তিনটের সময় বিমানবন্দরে গিয়ে যে ভাবে আমাকে স্বাগত জানিয়েছে, তাতে আমি অভিভূত। আমি ওদের এর প্রতিদান দেওয়ার খুব চেষ্টা করব। যদিও আসন্ন ম্যাচটি হায়দরাবাদে, তবে ঘরের মাঠে সমর্থকদের খেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি”।

জয়ের খোঁজে হায়দরাবাদও

হায়দরাবাদ এফসি-রও অবস্থা অনেকটা মহমেডানের মতোই। শেষ পাঁচ ম্যাচে এগারো গোল খেয়েছে তারা। তবে দিয়েছে ছ’টি গোল। গত ম্যাচে নর্থইসস্টের কাছে হারার আগেই লিগ টেবলের দু’নম্বর দল জামশেদপুরকে ৩-২-এ হারিয়ে হইচই ফেলে দেয় তারা। তার আগের ন’টি ম্যাচে অবশ্য জয় ছিল না তাদের। মহমেডান, কেরালা ব্লাস্টার্সের পর জামশেদপুরের বিরুদ্ধে চলতি লিগের তৃতীয় জয় পায় তারা। মহমেডানের ঝুলিতে অবশ্য দু’টির বেশি জয় নেই।

গোলের জন্য হায়দরাবাদ মূলত নির্ভরশীল ব্রাজিলীয় মিডফিল্ডার অ্যালান আলবা (১৫ ম্যাচে ৩ গোল, একটি অ্যাসিস্ট) এবং তাঁরই স্বদেশীয় ফরোয়ার্ড অ্যালান পলিস্তার ওপর। দু’জনই তিনটি করে গোল করেছেন। গিনির ফরোয়ার্ড এডমিলসন কোরেয়া ও ভারতীয় ডিফেন্ডার মনোজ মহম্মদও দু’টি করে গোল করেছেন। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলটি করেন আলবা-ই। গত ম্যাচে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে একমাত্র গোলটি করেন মনোজ। এ ছাড়াও ৯০ মিনিটে গোল করে ইস্টবেঙ্গলের প্রায় জেতা ম্যাচ কী ভাবে ড্র করেছিলেন তিনি, তা লাল-হলুদ সমর্থকেরা নিশ্চয়ই অনেকেই ভোলেননি। শনিবার এঁদের কী ভাবে আটকে রাখবে মহমেডান রক্ষণ, সেটাই দেখার।

মহমেডান কোচ অবশ্য তাদের প্রতিপক্ষ সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল। বলেন, “হায়দারবাদ ভাল খেলছে। ওদের সমীহ করতেই হবে। আমাদের পক্ষে কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে। আমাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকতে হবে। ৯০ মিনিট ফোকাসড থাকতে হবে। সারাক্ষণ সমান ভাল খেলতে হবে আমাদের”।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: প্রথম ছয়ে থাকার ক্ষীণ আশা জিইয়ে রাখতে জয়ই বিকল্প, ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িনের মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল