কলকাতা: বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে সেরা ছয়ের দৌড়ে অনেকেই ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) রাখছেন না। তবে অঙ্ক সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। তবে তারা বর্তমান অবস্থা থেকে সেরা ছয়ে পৌঁছতে পারবে কি না, তা পুরোপুরি তাদের হাতে। অন্য দলগুলির দিকেও অবশ্য তাকিয়ে থাকতে হবে লাল-হলুদ বাহিনীকে। তবে পরপর দু-তিনটি ম্যাচে জিততে পারলে যে ছবিটা অনেকটাই বদলে যাবে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই ছবি পাল্টানোর কাজটা কি শুরু করতে পারবে তারা? এই প্রশ্নের উত্তর দিতেই শনিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে নামবেন পিভি বিষ্ণুরা।

কলকাতার এক প্রধান যখন লিগ শিল্ড ছোঁয়ার দৌড়ে ক্রমশ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন আর এক প্রধানের বাস্তব পরিস্থিতিটা ঠিক কী? ১৮ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট তাদের। এখনও ছ’টি ম্যাচ বাকি। এই ছয় ম্যাচে তাদের মুখোমুখি হতে হবে যথাক্রমে চেন্নাইয়িন এফসি, মহমেডান এসসি, পাঞ্জাব এফসি, হায়দরাবাদ এফসি, বেঙ্গালুরু এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। সেরা ছয়ে পৌঁছতে গেলে এদের হারানোর লক্ষ্য নিয়েই নামতে হবে, যা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।

এদের মধ্যে শেষ দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ এখন পর্যন্ত সেরা ছয়ে রয়েছে। বাকি চার দলই পয়েন্ট টেবলের নীচের অর্ধে। প্রথম লিগে বেঙ্গালুরুর কাছে হারলেও নর্থইস্টকে ঘরের মাঠে হারিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। হারিয়েছে চেন্নাইয়িন এফসি, পাঞ্জাব এফসি-কেও। ড্র করেছে হায়দরাবাদ ও মহমেডানের বিরুদ্ধে। তা হলে শেষ ছয় ম্যাচে আশা ছাড়ছে কেন লাল-হলুদ জনতা?

কারণ, দলের ফুটবলারদের অবস্থা। ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালালের পর পুরো মরশুম থেকেই ছিটকে গিয়েছেন জর্ডনের ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরও। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপো চোট সারিয়ে অনুশীলনে ফিরেছেন। হয়তো শনিবারে মাঠে নামবেন। ক্লেটন সিলভার ব্যাপারেও এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রথম মুম্বই-ম্যাচে চোট পাওয়ার পর আর মাঠে ফিরতে পারেননি আনোয়ার আলি। তিনি ক্রমশ সুস্থ হচ্ছেন। তবে সম্ভবত শনিবার মাঠে নামতে পারবেন না। ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ অবশ্য চোট সারিয়ে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। পরিস্থিতি এমনই যে, গত দু-তিনটি ম্যাচে প্রথম এগারো বাছতেই হিমশিম খেয়েছেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। এখন অবস্থা কিছুটা ভাল।

এর মধ্যে ভাল খবর, সম্প্রতি ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিস ভারতে এসে পরিবেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিচ্ছেন। গত তিন ম্যাচে গোল বা অ্যাসিস্ট না করলেও খারাপ পারফরম্যান্স দেখাননি। শনিবারও হয়তো আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে দেখা যাবে তাঁকে। তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে শুক্রবারই কলকাতায় এলেন ক্যামেরুনের ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেসি বৌলি। শনিবার তাঁকে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখার খুব চেষ্টা করছেন ক্লাব কর্তারা। প্রয়োজনে তাঁকে মাঠেও নামাতে পারেন কোচ।

শেষ কয়েকটি ম্যাচে খুব কষ্ট করেই দল সাজাতে হয়েছে অস্কার ব্রুজোনকে। আক্রমণের খেলোয়াড়কে রক্ষণে, রক্ষণের খেলোয়াড়দের মাঝমাঠে রেখে দল নামাতে হয়েছে তাঁকে। এমনই আগোছালো দল নিয়ে মুম্বইয়ের মাঠে নেমে মুম্বই সিটি এফসি-কে গোলশূন্য ম্যাচে আটকে দেয় মশাল-বাহিনী। সে দিন সারা ম্যাচে ৬২.৪% বলের দখল রাখার পরেও গোল করতে পারেনি মুম্বই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে এক পয়েন্ট নিয়ে কলকাতায় ফেরে অস্কার-বাহিনী। এই লড়াইয়ের পরে আশা ছাড়তে নারাজ বহু সমর্থক, যাদের অনেকেই শনিবার যুবভারতীর গ্যালারিতে প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাবেন।


টানা সাতটি ম্যাচে জয়হীন চেন্নাইয়িন এফসি পয়েন্ট টেবলে আপাতত ১১ নম্বরে, ইস্টবেঙ্গলের এক ধাপ পিছনেই। দুই দলেরই পয়েন্ট সংখ্যা ১৮ হলেও ইস্টবেঙ্গল একটি ম্যাচ কম খেলেছে এবং তাদের গোলপার্থক্য চেন্নাইয়িনের চেয়ে ভাল বলে তারা একধাপ এগিয়ে। আওয়েন কোইলের দলকে এই অবস্থায় পেয়ে হারাতে না পারলে অবশ্য লাল-হলুদের সেরা ছয়ে যাওয়ার আশা আরও কিছুটা ক্ষীণ হয়ে যাবে। তবে যেহেতু সামনেই তাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের চ্যালেঞ্জ, তাই আইএসএলের শেষ দিকের ম্যাচগুলিতে নিজেদের নতুন কম্বিনেশনকে খুবই ভাল ভাবে পরখ করে নিতে পারবেন কোচ অস্কার ব্রুজোন। সেই পরিকল্পনাই হয়তো ছকে রেখেছেন তিনি।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: পাঁচ ম্যাচে তিন গোল, আইএসএলে চলতি মাসের সেরা উদীয়মান তারকা তরুণ উইঙ্গার