কলকাতা: গতবারের লিগশিল্ডজয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan Super Giant) এ বার যে ভাবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL 2024-25 ) অভিযানের সূচনা করেছে, তাতে সমর্থকদের খুশি হওয়ার তেমন কোনও কারণ নেই। মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও সিরিয়ান ডিফেন্ডার থায়ের ক্রুমার গোলে তাদের জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। প্রায় মুঠোয় আসা তিন পয়েন্ট খুইয়ে এক পয়েন্টের সান্ত্বনা পুরস্কার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হোসে ফ্রান্সিসকো মোলিনার দলকে।
সোমবার ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে তাদের জয়ে ফেরার চ্যালেঞ্জ। এ সেই নর্থইস্ট, যাদের কাছে এই যুবভারতীতেই হেরে ডুরান্ড কাপ ফাইনালে রানার্স আপ ট্রফি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাগান-বাহিনীকে। সেই হারের বদলা নেওয়ারও সুযোগ সোমবার পাবেন জেসন কামিংসরা। কিন্তু সেই হারের বদলা তারা নিতে পারবে কি? এই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
আইএসএলের প্রথম ম্যাচে মোহনবাগান যেখানে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে জেতা ম্যাচ ড্র করেছে, সেখানে কলকাতার আর এক দল মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে গোল দিয়ে তিন পয়েন্ট ছিনিয়ে নিয়ে মাঠ ছেড়েছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। ফলে মনস্তাত্বিক দিক থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থেকেই সোমবার যুবভারতীতে নামবে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। তার ওপর ডুরান্ড কাপের জয়ের আত্মবিশ্বাস তো রয়েছেই।
চলতি লিগের প্রথম ম্যাচের ফলের সুবাদে নর্থইস্ট লিগ তালিকায় আছে পাঁচ নম্বরে, মোহনবাগান সেখানে রয়েছে ছয়ে। ফলে উত্তরপূর্ব ভারতের দলটির আত্মবিশ্বাস একটু বেশিই মজুত থাকার কথা। কিন্তু আইএসএলে বারবার প্রমাণিত হয়েছে যে, অতীতের গর্ব বা ভাল পারফরম্যান্স সাধারণত কোনও দলকে সে ভাবে সাহায্য করে না। কোন ম্যাচে কেমন খেলছে কোন দল, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ছাড়া আর কিছুই ফলের ওপর প্রভাব ফেলে না। তাই নর্থইস্টেরও যেমন উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ নেই, মোহনবাগানেরও নুইয়ে পড়ার মতো কিছু হয়নি।
অতীতে এমন একাধিকবার হয়েছে, যেখানে শোচনীয় হারের পর দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। আবার দাপুটে জয়ের পরেও হার মানতে হয়েছে বহু দলকে। তাই সোমবারের ম্যাচ নিয়ে আগাম কিছুই ধরে নেওয়া কঠিন। এই ম্যাচে যে কোনও দলই জয়ের হাসি মুখে নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে।
এ মরশুম শুরুর আগে ঢেলে দল সাজিয়েছেন মোহনবাগানের নতুন কোচ হোসে মোলিনা। অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জুটি দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও জেসন কামিংসের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আর এক নামী ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন এবং স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। দ্বিতীয়জন ভাল ফর্মে থাকলেও সদ্য চোট সারিয়ে ফেরা ম্যাকলারেন সম্ভবত পুরোপুরি তৈরি হয়ে উঠতে পারেননি এখনও।
গত বুধবার এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর ম্যাচে মাঠে নামলেও এখনও আইএসএলে অভিষেক হয়নি ম্যাকলারেনের। কিন্তু মরশুমের শুরুতে পেট্রাটস ও কামিংসের পারফরম্যান্স হতাশাজনক। তাঁদের কোচই বলছেন সে কথা। গত মরশুমে যে ফর্মে ছিলেন দুই অস্ট্রেলীয়, সেই ফর্মে এখন আর নেই এই জুটি। কবে নিজেদের জায়গায় ফিরে আসবেন, তার জন্য অপেক্ষা করতেই হবে সমর্থকদের।
রক্ষণে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও অভিজ্ঞ স্কটিশ ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেড থাকলেও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে চোট পেয়ে সেই যে মাঠ ছাড়েন রড্রিগেজ, তার পরে এখনও সম্ভবত ফিট হয়ে ওঠেননি। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তিনি অনিশ্চিত বলেই শোনা যাচ্ছে।
দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে মুম্বই সিটি এফসি থেকে আসা মিডফিল্ডার আপুইয়া সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গোলকিপার বিশাল কয়েথও ভাল ফর্মে রয়েছেন। তবে মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, অনিরুদ্ধ থাপা, শুভাশিস বোস, আশিস রাই, সহাল আব্দুল সামাদরা এখনও নিজেদের সেরা জায়গায় আসতে পারেননি। কোচের আশা, লিগ যত এগোবে, তাঁরা ততই উন্নতি করবে।
আসলে নতুন কম্বিনেশনের মধ্যে বোঝাপড়া, নতুন কোচের কৌশল ও স্টাইলের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মানিয়ে নিতে সময় লাগছে তাঁদের। প্রাক মরশুম প্রস্তুতির পর তারা যে খুব ভাল জায়গায় আছে, প্রথম ম্যাচে তা মনে হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচে কতটা উন্নতি করতে পারবে তারা, সেটাই দেখার।
নর্থইস্ট ইউনাইটেড আইএসএলে তাদের ডুরান্ড কাপ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছে ঠিকই। কিন্তু মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে তা বজায় রাখা আরও বড় চ্যালেঞ্জ। গতবারের দলটাকেই মূলত ধরে রাখার ফলে এ মরশুমে তাদের কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালিকে নতুন করে কম্বিনেশন তৈরি করার জন্য বাড়তি সময় নষ্ট করতে হয়নি। সেই সময়টা তিনি দলের পারফরম্যান্সের উন্নতিতে মনোনিবেশ করেছেন, যার প্রতিফলন পাওয়া যাচ্ছে তাদের পারফরম্যান্সে।
এ মরশুমের আগে যোগ দেওয়া দুই বিদেশী ফরোয়ার্ড স্পেনের গিলেরমো ফার্নান্দেজ ও মরক্কোর আলাদ্দিন আজারেই দলের আক্রমণে শক্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত মরশুম থেকে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা জিথিন এম এস, পার্থিব গগৈরা তাঁদের আক্রমণে অনেক সাহায্য করছেন। গত ম্যাচে জিথিন ও গিলেরমোর বোঝাপড়া মহমেডান এসসি-কে বারবার বিপদে ফেলে। এই আক্রমণের ঝাঁঝ কতটা সামলাতে পারবে মোহনবাগানের রক্ষণ, সেটাই দেখার।
পরিসংখ্যান বলছে
২০২৪ ক্যালেন্ডার বর্ষে আইএসএলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যে ১৬টি ম্যাচে খেলেছে, তার মধ্যে ১৫টিতেই গোল পেয়েছে। শুধু ফেব্রুয়ারিতে ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে গোলশূন্য ড্র হয়। শেষ ১১টি ম্যাচের সবকটিতেই গোল পেয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। আইএসএলে হোসে মোলিনার প্রসিক্ষণাধীন দল গত দশটি ম্যাচে হারেনি। ২০১৬-র নভেম্বরে শেষবার তাঁর দল এটিকে হারে পুণে সিটি এফসি-র কাছে। তবে এই দশটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে জেতে তাঁর দল।
গত চারটি আইএসএল ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই ক্লিন শিট বজায় রেখেছে নর্থইস্ট ইউনাইটেড। শেষ দুটি ম্যাচে কোনও গোল খায়নি তারা। তবে লিগের ইতিহাসে তারা কখনও টানা তিনটি ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখতে পারেনি। ২০২৪-এর শুরু থেকে নর্থইস্ট তাদের ম্যাচের শুরুর ১৫ মিনিটে চারটি গোল করেছে। তবে এই তালিকায় সবার ওপরে মোহনবাগান, যারা ৫ গোল করেছে।
গত মরশুমের তুলনায় সময় ভাল যাচ্ছে না দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের। শেষ তিনটি আইএসএল ম্যাচে দলের একটিও গোলে তাঁর অবদান নেই। অথচ তার আগের আটটি ম্যাচের প্রতিটিতে কোনও না কোনও গোলে অবদান ( ৪টি গোল ও ৬টি অ্যাসিস্ট) ছিল তাঁর। টানা চারটি ম্যচে তাঁর গোল করতে না পারার ঘটনা আইএসএলে প্রথম। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে লিস্টন কোলাসো এ পর্যন্ত আটটি গোল করেছে আইএসএলে। আর কোনও ফুটবলার তাদের বিরুদ্ধে এত গোল করেনি।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: