কেরল: ম্যাচের ৫৯ মিনিটে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের পাস থেকে যখন ফাঁকা জালে বল জড়িয়ে দিলেন বিষ্ণু পুথিয়া, তখন জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে কার্যত পিন পড়লেও আওয়াজ শোনা যাবে। তবে ঠিক মিনিট চারের অপেক্ষা, মিনিট চারের ব্যবধানেই হতাশা বদলে গেল উচ্ছ্বাসে। নোয়া সাদাউই কেরল ব্লাস্টার্সকে দুরন্ত গোলে ম্যাচে ফেরালেন। ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটের ঠিক মিনিট দু'য়েক আগে পেপরার শট যখন প্রভসুখন গিলের পাশ দিয়ে প্রথম পোস্টে জড়িয়ে গেল, তখন মাঞ্জাপাদা সমর্থকগোষ্ঠীর আওয়াজে তো রীতিমতো কানপাতা দায়। 


শেষমেশ পেপরার গোলই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। নাগাড়ে দ্বিতীয় ম্যাচে হারল কার্লেস কুয়াদ্রাতের ইস্টবেঙ্গল (East Bengal)। ম্যাচে লিড নিয়েও খালি হাতেই মাঠ ছাড়ল লাল হলুদ। এ মরশুমের আইএসএলে (ISL 2024-25) ইস্টবেঙ্গলের ভাঁড়ার এখনও শূন্যই রইল। 


এ দিন প্রথমার্ধের বেশিরভাগ সময় দাপুটে ফুটবল খেললেও কোনও গোল করতে পারেনি কলকাতার দল। প্রথমার্ধে কেরল ব্লাস্টার্সকে একটিও শট গোলে রাখতে দেয়নি তারা। দ্বিতীয়ার্ধেও শুরুর দিকে খেলা থেকে হারিয়ে যায়নি তারা। কিন্তু ৬০ মিনিটে সুপার সাব পিভি বিষ্ণুর গোলের পরই তারা ক্রমশ খেলা থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করে। বাকি সময়টা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন নোয়া সাদাউই, কোয়ামে পেপরা ও তাঁদের সতীর্থরা।

বিষ্ণুর গোলের তিন মিনিট পরেই এক অবিশ্বাস্য গোলে সমতা আনেন মার্কিন ফরোয়ার্ড সাদাউই এবং ৮৮ মিনিটে দলকে এ মরশুমের প্রথম জয় এনে দেন রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা ঘানার ফরোয়ার্ড পেপরা। এই হারের ফলে লিগ তালিকার ১২ নম্বরে নেমে গেল লাল-হলুদ বাহিনী। কেরল ব্লাস্টার্স উঠে এল ছয়ে।

এ দিন তিনটি পরিবর্তন করে দল নামায় ইস্টবেঙ্গল। রক্ষণে আনোয়ার আলি ও মার্ক জোথানপুইয়া এবং মাঝমাঠে মাদি তালাল শুরু থেকে খেলেন যথাক্রমে হিজাজি মাহের, লালচুঙনুঙ্গা ও শৌভিক চক্রবর্তীর জায়গায়। কেরল ব্লাস্টার্স তাদের দলে চারটি পরিবর্তন আনে। পেপরার জায়গায় প্রথম এগারোয় দেখা যায় জেসুস জিমিনেজকে।


তিন মিনিটের মাথায় তালালের দুর্দান্ত একটি শট গোলকিপার সচিন সুরেশ ডাইভ দিয়ে বাঁচালেও ম্যাচের শুরুর দিকে নোয়া সাদাউইয়ের নেতৃত্বে ইস্টবেঙ্গলকে কোণঠাসা করার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে ব্লাস্টার্স। ন’মিনিটের মাথায় স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জিমিনেজের কোণাকুনি শট দ্বিতীয় পোস্টে লেগে ফিরে আসে। সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ ও রক্ষণকে বেশ আগোছালো মনে হয়। তবে খেলা ১৫ মিনিট গড়ানোর পর থেকে ইস্টবেঙ্গল নিজেদের গুছিয়ে নিতে শুরু করে এবং পাল্টা আক্রমণে উঠতে থাকে।


১৯ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে পাওয়া ক্রস গোললাইনের সামনেই পেয়ে যান নন্দকুমার শেকর। কিন্তু কেরলের গোলকিপার সচিন সুরেশ দুর্দান্ত দক্ষতায় তা রুখে দেন। এরপর থেকেই ঘন ঘন আক্রমণে উঠতে শুরু করে ইস্টবেঙ্গল। দু’বার গোলে শট নেন সল ক্রেসপো। দু’বারই দুর্দান্ত সেভ করে দলকে বাঁচান সচিন।  


শুরুর দিকে যে রকম অসহায় লেগেছিল তাদের, পরের দিকে নিজেদের আমূল পাল্টে নেয় লাল-হলুদ বাহিনী। তবে বেশিরভাগ আক্রমণই বাঁ দিক দিয়ে তৈরি করেন মহেশ ও জোথানপুইয়া। ডানদিকে নন্দকুমার এই ব্যাপারে কিছুটা হলেও পিছিয়ে ছিলেন। তবে দিয়ামান্তাকসকে প্রত্যাশিত ফর্মে দেখা যায়নি। ৪৪ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে জোথানপুইয়ার ক্রস গোলের সামনে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও তালাল ও দিয়ামান্তাকস কেউই ঠিকমতো বল গোলে ঠেলতে পারেননি। শেষে বল দখলে নিয়ে নেন সচিন। প্রথমার্ধে ইস্টবেঙ্গল গোলে চারটি শট রাখতে পারলেও একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি ব্লাস্টার্স।


দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে সমানে সমানে লড়াই শুরু হলেও গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে তখনও এগিয়ে ছিল ইস্টবেঙ্গল। তালাল ও দিয়ামান্তাকস ফের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৫৭ মিনিটের মাথায় মহেশকে তুলে নিয়ে যাঁকে নামায় ইস্টবেঙ্গল, সেই পিভি বিষ্ণুই অবশেষে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন।

মাঝমাঠে সন্দীপ সিংহের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে নন্দকুমার পাস দেন দিয়ামান্তাকসকে। বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন গ্রিক ফরোয়ার্ড। ডানদিকে তিনি ক্রস দেন গোলের দিকে দৌড়ে যাওয়া বিষ্ণুকে। ছ’গজের বক্সের মধ্যে ঢুকে আলতো টোকায় এই সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি তরুণ ফরোয়ার্ড (১-০)। মাঠে নেমে প্রথম টাচেই গোল পান তিনি।

কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের এই উল্লাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ৬৩ মিনিটের মাথাতেই অসাধারণ গোলে সমতা আনেন সাদাউই। নাওচা সিংহের বাড়ানো বল নিয়ে বাঁ দিকের উইং দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ে সাদাউই। রকিপকে ইনসাইড-আউটসাইড করে আরও ঢুকে এসে কঠিন কোণ থেকে গোলে শট নেন, যা প্রভসুখন গিলের দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে গোলে ঢুকে পড়ে (১-১)।

এই গোলের মিনিট তিনেক পরেই দিয়ামান্তাকসকে তুলে নিয়ে ক্লেটন সিলভাকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত। ক্লেটন নামায় আক্রমণের গতি বাড়লেও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব সমস্যায় ফেলে লাল-হলুদ বাহিনীকে। ততক্ষণে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে আসা শুরু করে দেয় ব্লাস্টার্স।


অন্যদিকে, ৭৫ মিনিটের মাথায় জিমিনেজকে তুলে ঘানার নির্ভারযোগ্য ফরোয়ার্ড কোয়ামে পেপরাকে নামায় ব্লাস্টার্স। তিনি মাঠে নামার পর থেকেই প্রতিপক্ষের ওপর ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকে ব্লাস্টার্স। এই চাপ সামলাতে ৮২ মিনিটের মাথায় শৌভিক, আমন ও গুরসিমরাতকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। তুলে নেওয়া হয় জোথানপুইয়া, জিকসন ও নন্দকুমারকে। কিন্তু নোয়া ও পেপরা জুটি আরও চাপ বাড়াতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত এই চাপ সামলাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ। ৮৮ মিনিটের মাথায় ক্রেসপোর উদ্দেশে বাড়ানো আনোয়ারের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে মহম্মদ আইমেন বক্সের মধ্যে পেপরাকে পাস দিলে তিনি সময় নষ্ট না করে বাঁ পায়ে গোলে শট নেন, যা সোজা জালে জড়িয়ে যায়। পেপরার সামনে আনোয়ার থাকলেও তিনি তাঁকে আটকাতে পারেননি। তীব্রগতির শট প্রভসুখনের বাঁ দিক দিয়ে গোলে ঢুকে যায় (১-২)। ছ’মিনিটের বাড়তি সময়ে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায় ব্লাস্টার্স। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আর গোল হজম করতে হয়নি ইস্টবেঙ্গলকে।


(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: ডুরান্ড ফাইনাল হারের বদলার ম্যাচ! নর্থইস্টের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে কী বলছেন মোহনবাগান কোচ?