কলকাতা: ডুরান্ড কাপ (Durand Cup 2024) কোয়ার্টার ফাইনালের পর সেমিফাইনালেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের (MBSG) নায়ক গোলকিপার বিশাল কয়েথ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-কে হারিয়েছে গতবারের ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়নরা। পেনাল্টি শ্যুট আউটের শেষ দু’টি শট বাঁচিয়ে দলকে ফাইনালে তুললেন বিশাল।


ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ কারা? নর্থইস্ট ইউনাইটেড, যারা এই প্রথম ডুরান্ড কাপের ফাইনাল খেলতে চলেছে। আগামী শনিবার ফাইনাল ম্যাচ সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামেই।


মঙ্গলবার প্রথমে দু’গোলে পিছিয়ে থাকার পরে সেই দুই গোল শোধ করে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। প্রথমে ৪৩ মিনিটের মাথায় সুনীল ছেত্রীর পেনাল্টি থেকে পাওয়া গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বেঙ্গালুরু এফসি। বিরতির পরে ৫০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ভেঙ্কটেশ বিনীত। ৬৮ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান মোহনবাগানের অস্ট্রেলীয় তারকা দিমিত্রি পেত্রাতস। ম্যাচের ৮৪ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত গোল করে সমতা ফেরান অনিরুদ্ধ থাপা। 


ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ালে প্রথম চারটি শটেই গোল করে মোহনবাগান। কিন্তু তাদের শেষ শটটি বাঁচিয়ে দেন বেঙ্গালুরুর অভিজ্ঞ গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সান্ধু। অন্যদিকে, বেঙ্গালুরুর প্রথম তিনটি শট থেকে গোল হলেও শেষ দু'টি শট পরপর বাঁচিয়ে দেন বিশাল। টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়েন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। 


টাইব্রেকারে মোহনবাগানের হয়ে গোল পান যথাক্রমে জেসন কামিংস, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো ও পেট্রাটস। বেঙ্গালুরুর এডগার মেনডেজ, রাহুল ভেকে ও পেদ্রো কাপো গোল পেলেও হালিচরণ নারজারি ও আলেকজান্দার জোভানোভিচের শট সেভ করেন বিশাল কয়েথ। 


মঙ্গলবারের আকর্ষণীয় সেমিফাইনালটি ছিল দুই স্প্যানিশ কোচের লড়াই। মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ী দলের প্রথম এগারোয় ছ’টি পরিবর্তন আনেন। বেঙ্গালুরুর জেরার্ড জারাগোজা সুনীল ছেত্রীকে শুরুতেই নামানোর সিদ্ধান্ত নেন এবং মাঝমাঠে ভেঙ্কটেশকে আনা হয়। 


শুরুতেই লিস্টন কোলাসো দূরপাল্লার শট নেন গোলে। ছেত্রীও প্রতিপক্ষের গোলের সামনে চলে যান। কিন্তু কয়েথের সঙ্গে ওয়ান-অন-ওয়ান হওয়ার পরও সুযোগ নষ্ট করেন। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা প্রথমার্ধে আক্রমণে আধিপত্য বিস্তার করলেও গোল করতে পারেনি। ৪৩ মিনিটের মাথায় কোলাসো তাঁদের বক্সের মধ্যে ফাউল করেন ভেঙ্কটেশকে। যার ফলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সহজেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন ছেত্রী (১-০)।


গোল খাওয়ার পরই প্রথমার্ধের শেষ পর্যায়ে তিনটি দ্রুত সুযোগ তৈরি করে সবুজ-মেরুন বাহিনী, যেখানে কোলাসো ও আলবার্তোর শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুর মিনিট চারেকের মধ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ভিনিত। আপুইয়ার একটি নির্বিষ ব্যাক পাস পেরেইরা ডিয়াজের সামনে এসে পড়ে এবং তিনি তা ভিনিতের উদ্দেশে ক্রস দেন। সহজেই ফাঁকা নেটে বল জড়িয়ে দেন ভিনিত (২-০)।


আক্রমণে আরও গতি আনার জন্য আশীষ রাই ও গ্রেগ স্টুয়ার্টকে নামান মোলিনা এবং একটি সহজ সুযোগ হারান স্টুয়ার্ট। গোলের সামনে থেকে নেওয়া তার হেড বাইরে চলে যায়। এই সুযোগ তৈরির মধ্যেই ছিল গোলশোধের ইঙ্গিত। 


সেই গোল তারা শোধ করে ৬৮ মিনিটে। আপুইয়ার একটি গ্রাউন্ডার বক্সের মাঝখানে মনবীরের কাছে পৌঁছলেও তিনি গোলের দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় রাহুল ভেকে তাঁকে ফাউল করেন। রেফারি ম্যাচে দ্বিতীয়বারের জন্য পেনাল্টি দেন। দিমি পেট্রাটোস গোল করতে কোনও ভুল করেননি (২-১)।


বেঙ্গালুরু ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায়, যখন মেন্ডেজের একটি হেড দুর্দান্ত সেভ করেন কয়েথ। ওই সময়ে ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চরমে পৌঁছায়। এর কিছুক্ষণ পরেই সমতায় ফেরে মেরিনার্স । বাঁ দিক দিয়ে ওঠা কোলাসো কর্নার অর্জন করেন, যা পেট্রাটস দ্বিতীয় পোস্টের দিকে ভাসিয়ে দেন। 


সেখান থেকে বল উড়ে আসে বক্সের সামনে, অনিরুদ্ধ থাপার কাছে। ডান পায়ের জোরালো ও মাপা শটে তিনি বল বেঙ্গালুরুর গোলের ডান দিক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেন (২-২)। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল হিসেবে ধরা যেতে পারে গোলটিকে। (তথ্যসূত্র: ISL মিডিয়া) 


আরও পড়ুন: পথ দেখিয়েছিল বাংলা, জয় শাহর আগে ভারত থেকে আর কারা বসেছিলেন আইসিসির মসনদে?