কলকাতা: আইপিএলে (IPL) রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসকে হারাল গুজরাত টাইটান্স। প্লে অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল। খেলার দুনিয়ার সারাদিন।


নায়ক রশিদ


ম্যাচের ফয়সালা হল শেষ বলে। ১৯৭ রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে গুজরাত টাইটান্সের দরকার ছিল ১৫ রান। তিনটি চার মেরে দলকে জেতালেন ব্যাটার রশিদ খান। যিনি লেগস্পিন করে ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান খরচ করে নিয়েছিলেন এক উইকেট। আর ইনিংসের বিরতিতে বলেছিলেন, 'আমি এখনও একশো শতাংশ দিতে পারছি না। বলা যেতে পারে ৯০-৯৫ শতাংশ দিচ্ছি।' জানার ইচ্ছে হতে পারে, ম্যাচের শেষে আফগান স্পিনার কী বলবেন?


ম্যাচের প্রথমার্ধ যদি হয় সঞ্জু স্যামসন ও রিয়ান পরাগের, দ্বিতীয়ার্ধ শুভমন গিল, রশিদ ও রাহুল তেওয়াটিয়ার। ইনিংস ওপেন করতে নেমে ৪৪ বলে ৭২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন গিল। তবু ম্যাচ জেতার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না গুজরাত। কারণ, কুলদীপ সেন।


আইপিএল যেন তারকা তৈরির মঞ্চ। এবারের আইপিএল মাঝপথও পেরোয়নি। ইতিমধ্যেই প্রচারের আলোয় একের পর এক নাম। ময়ঙ্ক যাদব, শশাঙ্ক সিংহ, আশুতোষ শর্মা, যশ ঠাকুর, নীতীশ রেড্ডি - তালিকাটা ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। যে তালিকায় নবতম সংযোজন কুলদীপ সেন। রাজস্থান রয়্যালসের জার্সিতে যিনি বুধবার গতির আগুন ছোটালেন। ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে বল করলেন। বৃষ্টিভেজা জয়পুরও সেই গতির উত্তাপ টের পেল। আর টের পেল গুজরাত টাইটান্স। নয় বলের ব্যবধানে তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন কুলদীপ। তাঁর বলের গতির হদিশ পাচ্ছিলেন না গুজরাত ব্যাটাররা। একটা সময় ১৫৭/৬ হয়ে গিয়েছিল গুজরাত।


তবে শেষ পর্যন্ত রাহুল ও রশিদের জুটি ম্যাচ জেতাল গুজরাতকে। ১১ বলে ২২ রান করলেন রাহুল। ১১ বলে ২৪ রান করে অপরাজিত রইলেন রশিদ। শেষ বলে দরকার ছিল ২ রান। বাউন্ডারি মেরে দেন আফগান তারকা। টুর্নামেন্টে প্রথম হার রাজস্থানের। যদিও পাংচ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট সহ এখনও তালিকার শীর্ষে সঞ্জুরা। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে উঠে এল গুজরাত।


অবসাদ কাটিয়ে আলোয়


আইপিএলের (IPL 2024) আগে তাঁর নামই হয়তো শোনেননি অনেকে। তবে পাঞ্জাব কিংসের হয়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নিয়েছেন। তিনি, আশুতোষ শর্মা (Ashutosh Sharma)। পাঞ্জাব কিংসের (Punjab Kings) জার্সিতে প্রায় প্রত্যেক ম্যাচে নিয়ম করে যিনি বোলারদের ধ্বংস করছেন।


পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিং অর্ডারে আট নম্বরে নামছেন আশুতোষ। এবং প্রত্যেক ম্যাচে ঝোড়ো ইনিংস খেলছেন। তাঁর প্রথম নজরে পড়া গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে। দুশো রান তাড়া করতে নেমে পাঞ্জাবের স্কোর যখন ৭০/৪, ফিরে গিয়েছিলেন শিখর ধবন, জনি বেয়ারস্টোর মতো পাঞ্জাব দলের রথী-মহারথীরা, তখন ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ান অনামী আশুতোষ। শশাঙ্ক সিংহের সঙ্গে আগ্রাসী পার্টনারশিপে নাটকীয়ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে দেন পাঞ্জাবকে। ১৭ বলে ৩১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন আশুতোষ।


মঙ্গলবার ফের একবার দেখা গিয়েছে আশুতোষের ব্যাটিং বিক্রম। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫ বলে ৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। দলকে প্রায় জিতিয়ে দিয়েছিলেন অবিশ্বাস্যভাবে। শেষ পর্যন্ত মাত্র ২ রানে ম্যাচ হারে পাঞ্জাব। তবে আশুতোষকে নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছে।


চাপের মুখে যখন বড় নামেরা ব্যর্থ, তখন এত আত্মবিশ্বাস পান কোথা থেকে? এবিপি লাইভকে আশুতোষ বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে এরকম পরিস্থিতি সামলে সামলে আমি অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। ক্রিজে যাওয়ার আগে ডাগ আউটে বসে বসেই ভাবি, আমি ঠিক দলকে জিতিয়ে দেব। নিজের দক্ষতা নিয়ে আমি ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।’


আইপিএল শুরুর আগে প্রস্তুতি শিবির তাঁকে সাহায্য করেছে বলেও জানিয়েছেন আশুতোষ। বলেছেন, ‘প্রস্তুতি শিবিরে শিখর পাজি, সঞ্জয় বাঙ্গার স্যর আমাকে এইরকম পরিস্থিতিতে ফেলে ব্যাটিং করিয়েছেন। তাতে খুব উপকৃত হয়েছি। এরকম চাপের মুখে শেষ চার ওভারে কী করব, তা নিয়ে আমি তৈরিই থাকছি। সঞ্জয় স্যর বলেই রেখেছেন, শেষ চার ওভার পাবে। তাতেই নিজেকে চেনাতে হবে।’


আশুতোষের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার কাহিনিও যেন গল্পের মতো। মাত্র আট বছর বয়সে বাড়িছাড়া। মধ্য প্রদেশের রত্লামের ছেলে চলে যান ইনদওরে। আশুতোষ বলেছেন, ‘বাবা-মাকে ছেড়ে থাকাটা ছিল ভীষণ কষ্টের। ওই বয়সে কী খাব, সেটা ভাবতে হয়েছে। খাবার কেনার টাকা থাকত না। সেই জন্য আম্পায়ারিংও শুরু করি। কারণ, তাতে একবেলার খাবার অন্তত মাঠেই পেয়ে যেতাম। আর এক বেলা কিছু একটা বানিয়ে নিতাম। ইনদওরে খুব ছোট্ট ঘরে থাকতাম। তবে মধ্য প্রদেশের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অময় স্যর খুব সাহায্য করেছিলেন।’


লড়াইয়ের সেখানেই শেষ ছিল না। কারণ, রাজ্য দলের হয়ে পারফর্ম করেও বাদ পড়তে হয়েছে। আশুতোষের কথায়, ‘মধ্য প্রদেশের হয়ে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৮৪ রান করেছিলাম। কিন্তু পরের মরশুমে পেশাদার কোচ এসেছিলেন। তাঁর হয়তো আমাকে পছন্দ হয়নি। ট্রায়াল ম্যাচে ৪৫ বলে ৯০ রান করেও বিকেলে জানতে পারি, সৈয়দ মুস্তাক আলির দলে আমাকে রাখা হয়নি। অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও ভাল রান করেছিলাম। তবু সিনিয়র দলে খেলানো হচ্ছিল না।’


তার মাঝেই করোনা অতিমারীর ধাক্কা। দলের সঙ্গে সফর করা ক্রিকেটারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়। আশুতোষ বলছেন, ‘আমি ২০ জনের দলে থাকলেও হোটেলে বসে থাকতাম। মাঠ দেখতে পেতাম না। সারাদিন জিম আর হোটেলের রুমেই কেটে যেত দিন। মানসিক অবসাদে ভুগতাম। রাতে ঘুম হতো না। ভাবতাম, কী হবে আমার কেরিয়ারের! আমাকে কেউ কিছু বলতও না। তবু হাল ছাড়িনি। যদিও সেই ২-৩ বছর ভয়ঙ্কর কেটেছিল।’


স্থগিত বৈঠক


আইপিএলের (IPL 2024) খোলনলচে বদলে ফেলার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আইপিএলের নিলামের ছাঁচ বদলে ফেলার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। যা এক নতুন দিক পেতে পারত ১৬ এপ্রিল। কারণ, সেদিন আমদাবাদে আইপিএলের দশ দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক ও দলের কর্ণধারদের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। আয়োজন করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। যদিও সেই বৈঠক স্থগিত করে দেওয়া হল।


লাল-হলুদের স্বপ্নভঙ্গ


আশা জাগিয়েও শেষ করতে পারল না ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। আইএসএলের (ISL) শেষ ম্যাচে পাঞ্জাবের কাছে ৪-১ গোলে হেরে গেল লাল-হলুদ শিবির। ইস্টবেঙ্গলের এই হারের সঙ্গে সঙ্গে এ দিন ২১ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকায় ছ’নম্বর জায়গাটা পাকা করে ফেলল চেন্নাইন এফসি। অর্থাৎ, আইএসএলের এই মরশুমের সেরা ছ’টি দল নিশ্চিত হয়ে গেল, যারা খেলবে প্লে-অফ রাউন্ডে। তবে কে কত নম্বরে শেষ করবে, তা ঠিক হতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে কয়েকদিন।