মুম্বই: চার বছর আগে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যোগ দেওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে তার প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন মুম্বই সিটি এফসি-এর তরুণ উইঙ্গার বিক্রম প্রতাপ সিংহ (Vikram Partap Singh)। সের্খিও লোবেরা-র অধীনে অভিষেক থেকে শুরু করে গত বছর মুম্বইয়ের আইএসএল কাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা পর্যন্ত, বিক্রমের উত্থান ছিল অসাধারণ, যা তাঁর প্রয়াত বাবার স্বপ্নও পূরণ করেছে।
চণ্ডীগড়জাত এই ফরোয়ার্ড ২০২৩-২৪ মরশুমে তাঁর কেরিয়ারের সেরা পারফরম্যান্স দেখান। চেক-অস্ট্রেলিয়ান প্রধান কোচ পিটার ক্রাতকির নেতৃত্বে বিক্রমের খেলায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসে। প্রথমবার লিগে দশের বেশি গোলের অবদান রাখেন তিনি (৮ গোল এবং ৪ অ্যাসিস্ট)। মর্যাদাপূর্ণ ‘ইমার্জিং প্লেয়ার অফ দ্য সিজন’ পুরস্কারও জেতেন।
মুম্বই সিটি এফসি-এর তারকাখচিত একাদশে জায়গা করে নেওয়া ২২ বছর বয়সি এই ফুটবলারের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না। শুরুর দিনগুলোতে তাঁকে রিজার্ভে থাকতে হয়। তবে, মাঠে এবং মাঠের বাইরে তার অক্লান্ত প্রচেষ্টা এবং দৃঢ় সংকল্প তাঁকে আইল্যান্ডার্সদের অন্যতম প্রধান ভরসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তাঁর অভিষেক মরশুমেই মুম্বই সিটি এফসি-এর লিগশিল্ড এবং কাপজয়ী দলে ছিলেন বিক্রম। ২০২২-২৩ মরশুমে ডেস বাকিংহামের নেতৃত্বে ফের লিগশিল্ড জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং ২০২৩-২৪-এ আরও একটি কাপ জিতে নিজের ধারাবাহিকতা এবং দক্ষতার প্রমাণ দেন।
আইএসএলের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলের একান্ত আড্ডায় বিক্রম মুম্বই সিটি এফসি-র সঙ্গে তাঁর ফুটবল-যাত্রা, ক্লাব এবং জাতীয় দলে তাঁর লক্ষ্য এবং ফুটবল জীবনে তাঁর বাবার গভীর প্রভাব নিয়ে কথা বলেন।
আইএসএলে ভারতীয় ফুটবলারদের গোল-অবদান ক্রমাগত বাড়ছে, তবে লিগের এগারো মরশুমে এখনও কোনও ভারতীয় 'গোল্ডেন বুট' জেতেননি। তবে, এই মাইলফলক অর্জন ও লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিক্রম।
তিনি বলেন, 'আইএসএলে অনেক কিছু পাওয়ার বাকি আছে। আমি লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চাই। এখন পর্যন্ত কোনও ভারতীয় গোল্ডেন বুট জিততে পারেনি। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই খেতাব জিততে চাই আমি'।
তাঁর ফুটবল-যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁর নিজের শহর চণ্ডীগড়ে, যেখানে তাঁর কাকা তাঁর ফুটবল জীবনের শুরুর দিনগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শৈশবের কথা স্মরণ করে বিক্রম বলেন, 'আমার ফুটবল-যাত্রা চণ্ডীগড় থেকে শুরু হয়েছিল। আমার কাকা আমাকে তাঁর সঙ্গে চণ্ডীগড় নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনিই ফুটবলের প্রতি বেশি উৎসাহী ছিলেন'।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন সকালে তিনি আমাকে স্থানীয় মাঠে নিয়ে যেতেন। প্রথমে তিনি আমাকে মাঠে কয়েক পাক দৌড়তে বলতেন। পরে স্থানীয় কোচ খুঁজে পেয়েছিলেন, সঞ্জীব মারিয়া নামে একজন, যিনি দুর্দান্ত কোচ। উনি বোধহয় এআইএফএফ-এর স্কাউট হিসেবেও কাজ করেছিলেন'।
২০১৮ এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপে ও ভারতের অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অধিনায়ক ছিলেন বিক্রম, যেখানে তিনি তাঁর নেতৃত্ব এবং প্রতিভার পরিচয় দেন। চার ম্যাচে একটি গোল করেন তিনি এবং দলকে কোয়ার্টার ফাইনালে নিয়ে যান, যেখানে তারা দক্ষিণ কোরিয়ার অনূর্ধ্ব-১৬ দলের কাছে ০-১-এ পরাজিত হয়।
তাঁর স্বপ্ন নিয়ে বিক্রম বলেন, 'আমি বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। ভারত বিশ্বকাপে খেলবে এবং আমি সেই দলে থাকব, এটাই আমার স্বপ্ন'। সুনীল ছেত্রীর দীর্ঘ কেরিয়ার ও কঠোর পরিশ্রমকে অনুসরণ করেন বলে জানান তিনি। কিন্তু নিজেকে ছেত্রীর উত্তরসূরি হিসেবে দেখতে চান না। এই নিয়ে বিক্রম বলেন, 'না, আমি পরবর্তী ছেত্রী হতে চাই না। আমি বিক্রম। ছেত্রী যা অর্জন করেছেন, তা অবিশ্বাস্য। আমি নিজের লক্ষ্য পূরণে মনোনিবেশ করতে চাই'।
২০২৩-২৪ মরশুম চলাকালীন তাঁর বাবার মৃত্যুতে বড়সড় ধাক্কা খান বিক্রম। তাঁর বাবার প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমার বাবা সবসময় বলতেন, '২০ ম্যাচে তোমার ২০ গোল করা উচিত।' আমি একদিন এই লক্ষ্য পূরণ করব'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: জ্বলছে রাজ্য, তবে তার প্রভাব পড়ল না মাঠে, টানা তিন ম্যাচ জিতে সন্তোষ ট্রফির পরের পর্বে মণিপুর