কলকাতা: আজ থেকে শুরু ইউরো কাপ। ইউরোপের সেরা ফুটবল প্রতিযোগিতা গত বছরই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা অতিমারীর জেরে এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে এই প্রতিযোগিতা। এবার এই প্রতিযোগিতার ধরনও কিছুটা বদলে গিয়েছে। কোনও একটি বা দু’টি দেশে নয়, অনেকগুলি দেশ মিলিয়ে হচ্ছে এবারের ইউরো কাপ। ফলে যে দেশগুলিতে খেলা হবে, তারা ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পাবে। তবে ইউরো কাপে প্রতিযোগিতা মারাত্মক। যে দলগুলি ঘরের মাঠে খেলার সুবিধা পাচ্ছে না, তাদেরও পিছিয়ে রাখা যাচ্ছে না। নিজেদের দিনে যে কোনও দলই জয় পেতে পারে।


গ্রুপ ডি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে পুরনো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। একই গ্রুপে আছে ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড। ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম কোনও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই দল। ১৯৯৬ সালে পল গ্য়াসকোয়েনের স্মরণীয় গোলে জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড। এবারও জয়ের আশায় ইংরেজরা। অন্যদিকে, স্কটিশরা সেই হারের বদলা নেওয়ার আশায়। ফলে ১৯ জুন ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে জমজমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় ফুটবলপ্রেমীরা।


করোনা আবহেই ফের ইউরোপের সেরা ফুটবলারদের একসঙ্গে খেলতে দেখা যাবে। এটা আমার বেশ ভাল লাগছে। সব দলের সমর্থকরাই ফের মাঠে গিয়ে প্রিয় ফুটবলারদের জন্য় গলা ফাটানোর সুযোগ পাবেন। এটা সবার জন্যই ভাল। দর্শক ছাড়া ফুটবল হয় না৷ গত বছর থেকে করোনা সংক্রমণের জন্য় দর্শকশূন্য় মাঠে খেলা হচ্ছিল৷ সেটা কারও ভাল লাগছিল না৷ এবার মাঠে দর্শকরা ফিরছেন৷ এটা ফুটবলের পক্ষে খুব ভাল দিক৷ আশা করি দর্শকরা আগের মতোই এবারের ইউরো কাপও উপভোগ করতে পারবেন৷


গ্রুপ ডি-তে ইংল্য়ান্ড ও স্কটল্য়ান্ড ছাড়াও আছে ক্রোয়েশিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছয় ক্রোয়েশিয়া। তারপর এবারের ইউরো কাপে একই গ্রুপে দুই দল। রবিবার প্রথম ম্যাচেই ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে ইংল্যান্ড। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হারের বদলা নেওয়া তো বটেই, তার চেয়েও বেশি, প্রথম ম্যাচ জিতে এবারের ইউরো অভিযান ভালভাবে শুরু করতে চাইবে হ্যারি কেনরা। অন্যদিকে, লুকা মদরিচরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামবে। ফলে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হতে চলেছে এই ম্যাচ।


ইংল্যান্ডের এবারের দলে তরুণ ফুটবলারের সংখ্যাই বেশি। তারা যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। ফিল ফডেন, জেডন স্যাঞ্চোদের সঙ্গে আছে লুক শ, হ্য়ারি কেন, মার্কাস  র‍্যাশফোর্ড, রাহিম স্টার্লিংরা। ২০১৮ বিশ্বকাপের মতোই এবারও ভাল ফল করার সম্ভাবনা রয়েছে ইংল্যান্ডের।


১৯৯৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করেই সেমি-ফাইনালে পৌঁছে গিয়ে ফুটবল-বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে তো তারা ফাইনালে পৌঁছে যায়। কিন্তু দু’বারই তাদের হারতে হয় ফ্রান্সের কাছে। ইভান র‍্যাকিটিচ, মারিও মান্দজুকিচের মতো সিনিয়র ফুটবলাররা অবসর নিলেও, মদরিচ, ইভান পেরিসিচের মতো সিনিয়ররা এবারও দলে আছে। ওদের সঙ্গে আছে চেলসির মিডফিল্ডার ম্যাতিও কোভাসিচ, ইন্টার মিলানের মার্সেলো ব্রোজোভিচ, উলফসবার্গের জোসিপ ব্রেকালো, এসি মিলানের স্ট্রাইকার আন্তে রেবিচ। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাৎকো দালিচ দলটা গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই দলটা যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়ারও এই গ্রুপ থেকে নক-আউটে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।


চেক প্রজাতন্ত্র বরাবরই লড়াকু দল। ১৯৭৬ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল চেকোস্লোভাকিয়া। তারপর দেশ ভাঙার পর ১৯৯৬ সালের ইউরো কাপে রানার্স হয় চেক প্রজাতন্ত্র। ওদের এবারের স্কোয়াডে আমার প্রিয় দল ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেডের কয়েকজন আছে। ডিফেন্ডার ভ্লাদিমির কুফাল, স্ট্রাইকার টমাস সুচেককে নিয়ে আমি আশাবাদী। চেকদের এবারের দলে অনামী মুখের ভিড়ই বেশি। ফলে প্রত্যাশার চাপ সাংঘাতিক নেই। এতে ওদের সুবিধা হতে পারে। ওরা লড়াই করবে বলেই আমার আশা।


স্কটল্যান্ড খাতায়-কলমে এই গ্রুপের দুর্বলতম দল। তবে লিয়াম কুপার, গ্র্যান্ট হ্যানলি, অ্য়ান্ডি রবার্টসন, রায়ান ক্রিস্টি, ডেভিড টার্নবুল, রায়ান ফ্রেজার, কেভিন নিসবেট, জেমস ফরেস্টরা যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিবান। ওরা লড়াই করবে বলেই আমার বিশ্বাস।


গ্রুপ ডি-র লড়াই শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে। প্রথম ম্যাচে লড়াই ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের। সোমবার গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে স্কটল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্র। ১৮ জুন পরের ম্যাচ ক্রোয়েশিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের। পরের দিন ইংল্যান্ড-স্কটল্যান্ড লড়াই। ২৩ জুন মুখোমুখি হচ্ছে ক্রোয়েশিয়া ও স্কটল্যান্ড। একই সময়ে গ্রুপের শেষ ম্যাচে লড়াই ইংল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রের।


গ্রুপ ডি থেকে কোনও দল এবারের ইউরো কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে কি না, সেটা খেলা শুরু হওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়। তবে এই গ্রুপের দলগুলি অনেকদূর যেতে পারে। বিশেষ করে ক্রোয়েশিয়া ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করি এই দুই দল প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারবে। 


                                                                                                                                                            *সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন-সৌম্য় গঙ্গোপাধ্য়ায়